খুলনা | শুক্রবার | ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪ | ১৩ পৌষ ১৪৩১

জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস আজ, বিএনপি’র ১০ দিনের কর্মসূচি

খবর প্রতিবেদন |
১২:৫১ এ.এম | ০৭ নভেম্বর ২০২৪


আজ ঐতিহাসিক ৭ নভেম্বর। জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস। ১৯৭৫ সালের এই দিনে আধিপত্যবাদী চক্রের সকল ষড়যন্ত্র রুখে দিয়ে আমাদের জাতীয় স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও গণতন্ত্র রক্ষার দৃঢ় প্রত্যয় বুকে নিয়ে সিপাহী-জনতা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে রাজপথে নেমে এসেছিল। তাদের ঐক্যবদ্ধ বিপ্লবের মাধ্যমেই রক্ষা পায় সদ্য অর্জিত বাংলাদেশের স্বাধীনতা। কয়েক দিনের দুঃস্বপ্নের প্রহর শেষে সিপাহী-জনতা ক্যান্টনমেন্টের বন্দিদশা থেকে মহান স্বাধীনতার ঘোষক, বহুদলীয় গণতন্ত্র ও বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের প্রবর্তক, স্বনির্ভর বাংলাদেশের স্বপদ্রষ্টা এবং বিএনপি’র প্রতিষ্ঠাতা সফল রাষ্ট্রনায়ক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বীর উত্তমকে মুক্ত করে দেশ পরিচালনার গুরু দায়িত্ব অর্পণ করে। তাই ৭ নভেম্বর আমাদের জাতীয় জীবনের এক অনন্য ঐতিহাসিক তাৎপর্যমন্ডিত দিন।
সিপাহী-জনতার বিপ্লবের মাধ্যমে আধিপত্যবাদ, একনায়কতন্ত্র, একদলীয় শাসন, জনজীবনের বিশৃঙ্খলাসহ তখনকার বিরাজমান নৈরাজ্যের অবসান ঘটে। একটি অস্থিতিশীল পরিবেশ থেকে দেশ একটি সুশৃঙ্খল পরিবেশে ফিরে আসে। জাতীয় ইতিহাসের এই দিনটি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালনের জন্য বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সামাজিক সংগঠন এদিনটি পালন করছে। বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এবং বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দিবসটি উপলক্ষে পৃথক পৃথক বাণী প্রদান করেছেন। দিবসটির গুরুত্বারোপ করে বিএনপিসহ বিভিন্ন সংগঠন ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
১৯৭৫ সালের ৩ থেকে ৬ নভেম্বর মধ্যরাত পর্যন্ত দেশে এক শ্বাসরুদ্ধকর অনিশ্চিত অবস্থা বিরাজ করছিল। হুমকির সম্মুখীন হয়ে পড়েছিল আমাদের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব। ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফের নেতৃত্বে ৩ নভেম্বর সেনাবাহিনীর একটি উচ্চাভিলাষী দল সেনাপ্রধান মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানকে ক্যান্টনমেন্টের বাসভবনে বন্দি করে এক সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করলে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়। এ ঘটনায় দেশের সাধারণ জনগণ ও সিপাহীদের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি করে। জিয়াউর রহমান সেনাবাহিনীর সর্বমহলে, বিশেষত সিপাহীদের কাছে ছিলেন খুবই জনপ্রিয়। ফলে তারা পাল্টা ব্যবস্থা গ্রহণ ও জিয়াউর রহমানকে মুক্ত করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। ৬ নভেম্বর মধ্যরাতে ঘটে সিপাহী-জনতার ঐক্যবদ্ধ এক বিপ্লব, যা ইতিহাসে জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস হিসেবে স্থান লাভ করেছে। দেশবাসী সেদিন জিয়ার হাতেই তুলে দিয়েছিল রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব।
৭ নভেম্বর সিপাহী-জনতা স্বকীয়ভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের চক্রান্তকারীদের খপ্পর থেকে দেশকে উদ্ধার করে ২৫ বছরের গোলামি চুক্তিকে হিমাগারে ফেলে দিয়ে সত্যিকার স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশকে বিশ্বের দরবারে স্থান করে নেয়। ওই সময় বাংলাদেশের সর্বস্তরের মানুষ এবং সশস্ত্রবাহিনীর পূর্ণ সমর্থন ও আস্থা নিয়ে দেশকে উন্নতি, অগ্রগতি ও শান্তির পথে নিয়ে যায়। সিপাহী-জনতার মিলিত বিপ্লবে নস্যাৎ হয়ে যায় স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব বিরোধী দেশবিরোধী সকল ষড়যন্ত্র। আধিপত্যবাদী ও সাম্রাজ্যবাদী শক্তির আগ্রাসন থেকে রক্ষা পায় বাংলাদেশ।
৭ নভেম্বরের বিপ্লব সম্পর্কে তদানীন্তন দৈনিক বাংলার রিপোর্টে বলা হয়, ‘সিপাহী ও জনতার মিলিত বিপ্লবে চারদিনের দুঃস্বপ্ন শেষ হয়েছে। মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান বন্দিদশা থেকে মুক্ত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার রাত প্রায় ১টায় সশস্ত্র বাহিনীর প্রতিক্রিয়াশীল চক্রের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনী, নৌবাহিনীর সিপাহী-জওয়ানরা বিপ্লবী অভ্যুত্থান ঘটিয়েছেন। ষড়যন্ত্রের নাগপাশ ছিন্ন করে মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানকে উদ্ধার করেছেন বিপ্লবী সিপাহীরা। ৭ নভেম্বর শুক্রবার ভোরে রেডিওতে ভেসে আসে, ‘আমি মেজর জেনারেল জিয়া বলছি।’ জেনারেল জিয়া জাতির উদ্দেশ্যে ঐতিহাসিক ভাষণ দিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে যথাস্থানে নিজ নিজ দায়িত্ব পালনের জন্য সবার প্রতি আহŸান জানান।
ওইদিন রাজধানী ঢাকা ছিল মিছিলের নগরী। পথে পথে সিপাহী-জনতা আলিঙ্গন করেছে একে অপরকে। নারায়ে তাকবির আল­াহু আকবর, বাংলাদেশ জিন্দাবাদ ধ্বনিতে ফেটে পড়েন তারা। সিপাহী-জনতার মিলিত বিপ্লবে ভন্ডুল হয়ে যায় স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব বিরোধী সব ষড়যন্ত্র। আনন্দে উদ্বেলিত হাজার হাজার মানুষ নেমে আসেন রাজপথে। সাধারণ মানুষ ট্যাঙ্কের নলে পরিয়ে দেন ফুলের মালা। এই আনন্দের ঢেউ রাজধানী ছাড়িয়ে দেশের সব শহর-নগর-গ্রামেও পৌঁছে যায়।
জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর পৃথক পৃথক বাণী প্রদান করেছেন।
বিএনপি’র ১০ দিনের কর্মসূচি : মহান জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে ১০ দিনের কর্মসূচি নিয়েছে বিএনপি।
গত বৃহস্পতিবার দুপুরে নয়াপল্টন বিএনপি’র কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
বিএনপি ৭ নভেম্বর আবার জনগণের সামনে নিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদের নতুন প্রজন্ম, যারা গত ১৫ বছরে বিকৃত ইতিহাস পেয়েছে, সঠিক ইতিহাস পায়নি। তাদের সামনে সঠিক ইতিহাস তুলে ধরার জন্য আমরা ৭ নভেম্বর ব্যাপকভাবে পালন করার উদ্যোগ নিয়েছি। ১০ দিনব্যাপী কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে।
আজ ৭ নভেম্বর সকাল ৬টায় নয়াপল্টনে বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয় এবং সারা দেশে দলীয় কার্যালয় গুলোতে দলীয় পতাকা উত্তোলন, সকাল ১০টায় দলের সাবেক রাষ্ট্রপতি শহিদ জিয়াউর রহমান বীর উত্তমের কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও ফাতেহা পাঠ; ৮ নভেম্বর বিকেল ৩টায় ঢাকায় ও জেলায় জেলায় র‌্যালি এবং বিএনপির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের উদ্যোগে আলোচনা সভা ও অন্যান্য কর্মসূচি পালন করবে।
এ ছাড়া, পোস্টার ও ক্রোড়পত্র প্রকাশ; দেশব্যাপী বিএনপি এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের উদ্যোগে স্থানীয় সুবিধা অনুযায়ী আলোচনা সভাসহ অন্যান্য কর্মসূচি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালিত হবে।