খুলনা | বৃহস্পতিবার | ২১ নভেম্বর ২০২৪ | ৭ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

জাতীয় স্বার্থকে সামনে রেখে জ্বালানী নীতি করতে হবে

|
১২:১২ এ.এম | ১৫ নভেম্বর ২০২৪


সামনের দিনগুলোতে বিদ্যুৎ সংকটের অশনি সংকেত দেখা যাচ্ছে। দেশের অর্থনীতি যেমন দীর্ঘ মেয়াদি সংকটের বৃত্তে পড়েছে তেমনি ডলার সংকটের কারণে প্রয়োজনীয় গ্যাস ও কয়লা আমদানি করতে না পারায়, তারপর বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর বকেয়া পরিশোধ না হওয়ায় বেশ কিছু বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ পড়ে আছে। যার ফলফল এখন স্পষ্ট দৃশ্যমান। অপেক্ষাকৃত কম বিদ্যুতের চাহিদা থাকে শীতকালে, সেই শীত মৌসুমের শুরু হতে না হতেই লোডশেডিং শুরু হয়ে গেছে।
বিগত সরকারের জ্বালানি নীতির ত্র“টিপূর্ণতার কারণে দেশের সমষ্টিক অর্থনীতিকে এখন মূল্য দিতে হচ্ছে। সমষ্টিক অর্থনীতির বেহাল দশায় শিল্প উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে, ব্যবসা, বিনিয়োগ, প্রবৃদ্ধি এবং কর্মসংস্থানের চাকা মন্থর হয়ে পড়ছে। এখন বিদ্যুৎ উৎপাদন স্বাভাবিক রাখা এবং জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত করার কোনো বিকল্প নেই। গত সরকার জ্বালানির উৎস নিশ্চিত না করেই অনেক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করে উন্নয়নের কল্পচিত্র দেখিয়ে যে ভুল করেছিল তার মাশুল এখন গুণতে হচ্ছে। বিদ্যুৎ উৎপাদনের ২৬ হাজার মেগাওয়াটের সক্ষমতার ঘোষণা ছিল অন্তসার শূন্য শ্লোগান। বর্তমান চাহিদার ১৩ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব হচ্ছে না। প্রতিদিন ৫শ’ থেকে ৭শ’ মেগাওয়াট লোডশেডিং করতে হচ্ছে। কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্পগুলো যে সুদূর প্রসারি চিন্তার প্রতিফলন ছিল না তা এখন প্রমাণ হচ্ছে। পরিবেশবাদীদের কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের বিরুদ্ধে সোচ্চার হলেও ফ্যাসিবাদী সরকার তা আমলে না এনে সস্তায় বিদ্যুৎ উৎপাদনের খোড়া যুক্তি দেখিযে কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করে। কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো এখন সক্ষমতার অর্ধেক বিদ্যুৎ ও উৎপাদন করতে পারছে না। এ কেন্দ্রগুলোতে সময় মত উৎপাদনে না আসায় খরচ বেড়েছে, আবার উৎপাদনের আসার পর নিয়মিত বিদ্যুৎ বিভাগ বিল পরিশোধ করতে না পারায় কেন্দ্রগুলো পড়েছে প্রচন্ড চাপের মুখে। এখন ৭টি কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ২টা সম্পূর্ণ বন্ধ আছে। আর ৪টির উৎপাদনে বিঘœ ঘটছে। বিদ্যুতের এই বেহাল দশার জন্য দায়ী ডলারের সংকট, দরপত্রের জটিলতা এবং আদানি সমস্যা।
ইতোমধ্যে আদানি গ্র“পের সাথে চুক্তি বাতিল চেয়ে লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়েছে। নোটিশে অবিলম্বে অন্যায্য ও একতরফা চুক্তি পুনঃবিবেচনা অথবা বাতিল চাওয়া হয়েছে। নোটিশের বিবাদী হলেন পিডিবি’র চেয়ারম্যান ও জ্বালানী মন্ত্রণালয়ের সচিব। ৩ দিনের ভেতর চুক্তি পুনঃবিবেচনার কার্যক্রম শুরু না হলে হাইকোর্টে রিট হবে। প্রসঙ্গত বিদ্যুৎ বিভাগের নির্দেশনায় আদানির সাথে ২০১৭ সালে বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তি হয়। সে সময় আদানির করা কয়লা নির্ভর কোনো বিদ্যুৎ কেন্দ্র দেশে চালু হয়নি। ২৫ বছর মেয়াদি এ চুক্তির ভিত্তিতে ভারতের ঝাড়খন্ডে আদানির ১৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে। জাতীয় পর্যালোচনা কমিটির সভায় সে ১১টি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সংশ্লিষ্ট তথ্য উপাত্ত সংগ্রহের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে আদানি গ্র“পকে তা সরবরাহের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
বিদ্যুৎ নিয়ে দেশ আছে মহা সংকটে। গ্যাস ভিত্তিক প্রকল্পগুলো সাশ্রয়ী হলেও ১২০ কোটি ঘন ফুট গ্যাসের প্রয়োজনে ৯২ কোটি ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ সম্ভব। তাছাড়া তেল চালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্র বসিয়ে রেখে ভাড়া দেযা হচ্ছে। এখন দরকার চুক্তিগুলো যাচাই ও দায়মুক্তি চুক্তি বাতিল করা। বিদ্যুৎ ও জ্বালানী খাতে নীতিগত ও প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার করতে হবে।