খুলনা | রবিবার | ২৪ নভেম্বর ২০২৪ | ৯ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

সতীর্থদের কাঁধে চড়ে ১৭ বছরের ক্যারিয়ারকে বিদায় ইমরুলের

ক্রীড়া প্রতিবেদক |
০৫:২১ পি.এম | ১৮ নভেম্বর ২০২৪


লাল বলের ক্রিকেটকে বিদায় বলে দিয়েছেন ইমরুল কায়েস। টেস্ট তো বটেই প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটেই শেষ ম্যাচটা খেলছেন ঢাকা বিভাগের বিপক্ষে। দিন, তারিখ আগেই ঠিক ছিল। আজ সোমবার ম্যাচের তৃতীয় দিন সকালে খুলনা বড় ব্যবধানে হেরে যায়। আর তাতেই লংগার ভার্সনের ১৭ বছরের ক্যারিয়ারের অধ্যায় ইতি টানলেন ইমরুল। ম্যাচের দ্বিতীয় দিনেই হার দেখছিল খুলনা। ব্যাটিং ব্যর্থতায় ঢাকাকে মাত্র ১০৩ রানের লক্ষ্য দেয় খুলনা। সোমবার সকালে খেলতে নেমে ১ উইকেট হারিয়ে মাত্র ১৭.২ ওভারেই জিতে যায় ঢাকা।

বিদায়ী ম্যাচটিতে ইমরুল নিজেও ব্যক্তিগতভাবে ব্যর্থ হয়েছেন। দুই ইনিংস মিলে করেছেন ১৭ রান। পারফরম্যান্স দিয়ে বিদায়টি স্মরণীয় না হলেও তাকে উপযুক্ত সম্মান দিতে ভোলেননি তার সতীর্থরা। তাকে কাঁধে চড়িয়ে মাঠ থেকে বাইরে নিয়ে আসেন তারা।

মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে রবিবার শেষ বিকালে অলআউট হয় খুলনা। প্রথম ইনিংসে ১২ রানের লিড নিয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে ৯১ রানে অলআউট হলে তাদের লিড টেনেটুনে একশ ছাড়ায়। জবাবে খেলতে নেমে প্রথম ওভারেই উইকেট হারায় ঢাকা। জয়রাজ শেখ রানের খাতা না খুলেই আল আমিন হোসেনের কাছে এলবিডব্লিউ হন।

এরপর আর ঢাকার কোনও উইকেট নিতে পারেননি খুলনার বোলাররা। দ্বিতীয় উইকেটে রনি তালুকদার ও আরিফুল ইসলামের অবিচ্ছিন্ন ১০৪ রানের জুটিতে ৯ উইকেটে জয় নিশ্চিত করে ঢাকা। এই জয়ে ৪ ম্যাচে ৮ পয়েন্ট নিয়ে তালিকার সাত নম্বরে অবস্থান করছে তারা। রনি ৬২ ও আরিফুল ৪২ রানে অপরাজিত ছিলেন।

ম্যাচ শেষে সতীর্থদের কাঁধে চড়ে মাঠ ছাড়েন ইমরুল। দুই পাশে ছিলেন এনামুল হক বিজয় ও তরুণ প্রজন্মের ক্রিকেটার শেখ পারভেজ জীবন। দুইজনের কাঁধে ভর দিয়েই মাঠ ছাড়তে দেখা গেছে ইমরুলকে। বিদায়টা ভালো না হলেও সতীর্থরা তাকে রোমাঞ্চকর অনুভূতি দিয়েছেন। এরপর বিসিবি তার আগে বিদায়ী ক্রেস্ট তুলে দেন। এরপর সংবাদ সম্মেলনে এসে ইমরুল ক্যারিয়ার নিয়ে নানা প্রশ্নের উত্তর দেন।

টেস্ট থেকে বিদায়ের কারণ হিসেবে ইমরুল বলেন, ‘আমার ফিটনেস এখন যে পর্যায়ে আছে, তাতে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টির জন্য নিজেকে টিকিয়ে রাখতে পারব এবং আরও কয়েক বছর খেলতে পারব। চার দিনের ম্যাচ খেলার জন্য যে পরিমাণ শক্তি ও দৃঢ় মনোবল থাকতে হয়, তা এখন আর নেই। আমার মনে হয়েছে, আমি যদি নিজেকে তরুণদের সঙ্গে তুলনা করি এবং ওদের মতো ছন্দে (গতিশীল) খেলতে না পারি, তাহলে নিজেকে ছোট মনে হয় এবং লজ্জা লাগে। কিন্তু সংক্ষিপ্ত সংস্করণের ক্রিকেটে একদিনেই খেলা শেষ হয়ে যায়। এখানে ফুল এনার্জি দেওয়া সম্ভব।’

১৭ বছরের প্রথম শ্রেণির ক্যারিয়ারের ইতি টানলেন। যদিও আরও ২ বছর লাল বলের ক্রিকেট চালিয়ে যেতে পারতেন এই তারকা। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘প্রথমত বিসিবিকে ধন্যবাদ জানাতে চাই। আমি যখন বিসিবিকে (অবসরের) সিদ্ধান্তের কথা জানাই, তারা ব্যাপারটিকে ইতিবাচকভাবে নিয়েছে। আমাকে অনেকেই বলেছে, “ভাই, আপনি আরও ২ বছর খেলতে পারতেন।” কিন্তু আমার কাছে মনে হয়েছে, আরও ২ বছর খেললে তারাই প্রশ্ন করত “ভাই, আপনি কবে খেলা ছাড়বেন?” এই কথাগুলো শোনার চেয়ে নিজ থেকেই চলে যাওয়াটা ভালো মনে হয়েছে। সম্মান থাকা অবস্থাতেই সরে দাঁড়ানোর বোধশক্তি থাকাটা খুব গুরুত্বপূর্ণ।’

২০০৭ সালে টেস্টে অভিষেক ইমরুলের, এরপর বাংলাদেশের হয়ে ৩৯ টেস্টে ৭৬ ইনিংসে ১৭৯৭ রান করেছেন ইমরুল, গড় ২৪.২৮। তিনটি সেঞ্চুরির সঙ্গে রয়েছে ৪টি ফিফটি। সবশেষ ২০১৯ সালের নভেম্বরে ইডেন গার্ডেনে ভারতের বিপক্ষে টেস্ট খেলেছিলেন এই বাঁহাতি ব্যাটার। চলতি জাতীয় ক্রিকেট লিগে ব্যাট হাতে মোটামুটি ভালোই খেলছেন ইমরুল। খুলনা বিভাগের হয়ে তাঁর পাঁচ ইনিংস, ৮৬ *, ৭১, ৪৬, ১৩, ০, ১ ও ১৭।

প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ১৩৭ ম্যাচে ২৪৬ ইনিংসে ৭৯৩০ রান ইমরুলের, গড় ৩৪.১৮। ২০টি সেঞ্চুরির পাশাপাশি রয়েছে ২৭টি ফিফটি। জাতীয় দলে ফেরা অপেক্ষা ফুরালো না পাঁচ বছরেও, লাল বলের ক্রিকেটকে বিদায় বলে দিয়েছেন ইমরুল কায়েস। ওডিআই ক্রিকেট থেকে ইমরুল বাদ পড়েছিলেন ২০১৮ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজের পরপরই। এ ছাড়া টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ২০১৭ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে খেলা ম্যাচটাই অঘোষিত শেষ ম্যাচ হয়ে গেছে। লাল-সবুজের জার্সিতে তিন ফরম্যাটে ১৩১টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছেন ৩৭ বছর বয়সী এই ব্যাটার। তবে তাকে যথার্থ মূল্যায়ন করা হয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে।