খুলনা | মঙ্গলবার | ২৮ জানুয়ারী ২০২৫ | ১৫ মাঘ ১৪৩১

নির্বাচন ছাড়া গণতান্ত্রিক রূপান্তর সম্ভব নয়

|
১১:৫৩ পি.এম | ১৯ নভেম্বর ২০২৪


অন্তর্বর্তী সরকারের ১০০ দিন উপলক্ষে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে নির্বাচন ও সংস্কার দু’টির ওপরই গুরুত্ব দিয়েছেন। তিনি বলেন, নির্বাচনী সংস্কারের সিদ্ধান্ত হয়ে গেলে খুব দ্রুত নির্বাচনের রোডম্যাপও (রূপরেখা) পাওয়া যাবে। প্রয়োজনীয় কিছু অত্যাবশ্যকীয় সংস্কারকাজ শেষ করেই নির্বাচনের আয়োজন করা হবে।
প্রধান উপদেষ্টা তাঁর ভাষণে গত ১০০ দিনে তাঁর সরকারের বিভিন্ন খাতে কার্যক্রম ও সাফল্যের ওপরও আলোকপাত করেছেন। তাঁর ভাষণে গুরুত্ব পেয়েছে জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানে নিহত পরিবারের পুনর্বাসন ও আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসার বিষয়টি। প্রধান উপদেষ্টা প্রত্যেক শহীদ পরিবারকে ৩০ লাখ টাকা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন, আহত ব্যক্তিদের সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করার কথা বলেছেন। তাঁর এই আশ্বাসবাণী দ্রুত বাস্তবায়িত হবে, এটাই প্রত্যাশিত। চিকিৎসার দাবিতে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আহত ব্যক্তিরা একবার রাজপথে বিক্ষোভ করেছেন। ফের যেন তাঁদের বিক্ষোভ করতে না হয়। প্রধান উপদেষ্টা তাঁর ভাষণে গত ১০০ দিনে অর্থনীতি গতিশীল হয়েছে বলে জানিয়েছেন। কথাটি যদি তিনি আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার বিভিন্ন উদ্যোগ, রিজার্ভে হাত না দিয়ে বিদেশি ঋণের কিস্তি পরিশোধ করা বা প্রবাসী আয়ে প্রবৃদ্ধি প্রসঙ্গে বলে থাকেন, সেটা ঠিকই আছে।
নিত্যপণ্যের দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখতে যথাসাধ্য চেষ্টা করা হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান উপদেষ্টা। কিন্তু বাস্তবতা হলো, বিগত সরকারের আমলে নিত্যপণ্যের দামের যে ঊর্ধ্বগতি ছিল, তার লাগাম টেনে ধরা সম্ভব হয়নি সরকারের নানা পদক্ষেপ সত্তে¡ও। সরকারের নীতিনির্ধারকদের মনে রাখতে হবে, রাষ্ট্র সংস্কারের উদ্দেশ্যে যত ভালো উদ্যোগই নিন না কেন, জনগণের মৌলিক চাহিদা পূরণ করতে না পারলে কিংবা আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি না হলে সেগুলো বাস্তবায়ন করা খুবই কঠিন। প্রধান উপদেষ্টা রাষ্ট্রীয় সংস্কার ও নির্বাচনকে সমান্তরালভাবে এগিয়ে নেওয়া এবং আগামী কয়েক দিনের মধ্যে নির্বাচন কমিশন গঠিত হবে বলে জানিয়েছেন। তবে সংস্কারের মাত্রা ও পরিধি নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর মতপার্থক্য দৃশ্যমান। বিএনপিসহ বেশির ভাগ রাজনৈতিক দল মনে করে, একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য যেটুকু সংস্কার প্রয়োজন, অন্তর্বর্তী সরকারের সেটুকুই করা উচিত।
লক্ষণীয় যে শুরুতে অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর যে আস্থার সম্পর্ক ছিল, সে অবস্থা আর আছে বলে মনে হয় না। কিছু কিছু ক্ষেত্রে ভুল-বোঝাবুঝি হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, সংস্কারকাজ শেষ করে কত দ্রুত নির্বাচন হবে, সেটা নির্ভর করবে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্যের ওপর।
প্রধান উপদেষ্টার ভাষণ বিএনপি, গণতন্ত্র মঞ্চ, বাম গণতান্ত্রিক জোটসহ অনেক রাজনৈতিক দলকে সন্তুষ্ট করতে পারেনি। তাঁদের বক্তব্য হলো নির্বাচনের রোডম্যাপ হলে সংস্কারকাজেও গতি আসবে। আমরা মনে করি, সংস্কার ও নির্বাচন দু’টো বিষয়েই সিদ্ধান্ত নিতে হবে রাজনৈতিক দলগুলোসহ সব পক্ষকে আস্থায় এনে। এখানে ভুল বোঝাবুঝির কোনো সুযোগ নেই। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে দেশবাসীর মধ্যে রাষ্ট্রকাঠামোর যে গণতান্ত্রিক রূপান্তরের আকাক্সক্ষা তৈরি হয়েছে, তা বাস্তবায়নে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের বিকল্প নেই। আবার সুষ্ঠু নির্বাচন ও জনগণের গণতান্ত্রিক আকাক্সক্ষা বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় সংস্কারের কোনো বিকল্পও নেই। প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, নির্বাচনী ট্রেন চলতে শুরু করেছে, এটা আর থামবে না এবং অত্যাবশ্যকীয় সংস্কার শেষেই নির্বাচন। তাঁর বক্তব্যে নির্বাচন নিয়ে সুস্পষ্ট রূপরেখা না থাকলেও ইঙ্গিত ভালোভাবেই আছে।