খুলনা | শনিবার | ২৩ নভেম্বর ২০২৪ | ৯ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

ভারতসহ সব প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখতে চাই: জামায়াত আমির

খবর প্রতিবেদন |
০১:৫২ পি.এম | ২৩ নভেম্বর ২০২৪


সমান মর্যাদা এবং সম্মানের ভিত্তিতে ভারতসহ সব প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে চান বলে জানিয়েছেন জামায়াতের ইসলামির আমির ডা. শফিকুর রহমান। তিনি বলেন, আমাদের আন্তর্জাতিক নীতি, সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে শত্রুতা নয়।

শুক্রবার ভারতীয় সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজারে প্রকাশিত এক সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেন ডা. শফিকুর।

জামায়াতে ইসলামীর ভারত-বিরোধিতা সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে জামায়াত আমির বলেন, এই ধারণা ভিত্তিহীন। উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে আমাদের টার্গেট করে এই মতবাদ ছড়ানো হয়েছে, যাতে জামায়াতের রাজনীতির মিথ্যা ব্যাখ্যা ও বিভ্রান্তি তৈরি হয়। সমান মর্যাদা এবং সম্মানের ভিত্তিতে আমরা ভারতসহ সব প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে চাই। আমাদের আন্তর্জাতিক নীতি, সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে শত্রুতা নয়। চাই ভারতও একইরকম সাড়া দিক, পারস্পরিক বিশ্বাস এবং সহাবস্থানের ভিত্তিতে।

আরেক প্রশ্নের জবাবে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, জামায়াতে ইসলামী কট্টরপন্থী মুসলিম সংগঠন এটা একেবারেই অসত্য। জামায়াত একটি আধুনিক, উদার এবং গণতান্ত্রিক দল, যার ভিত্তি ইসলামিক আদর্শ। আরও একটি কথা মনে করিয়ে দেই, আমরা একটি স্বাধীন রাজনৈতিক দল। বিশ্বের অন্য কোনও রাজনৈতিক সংস্থায় আমাদের প্রতিনিধিত্ব নেই।

আরেক প্রশ্নের জবাবে জামায়াতের আমির বলেন, কট্টরপন্থী মনোভাব বলতে কী বোঝাতে চাইছেন, তা অস্পষ্ট। আপনাদের কাগজের মাধ্যমে জোরালোভাবে আবারও বলতে চাই, জামায়াত একটি আধুনিক, উদারপন্থী, গণতান্ত্রিক দল, যার আদর্শ ইসলামের। আমরা সর্বদাই যুক্তিগ্রাহ্য, বাস্তবসম্মত এবং মধ্যপন্থা নিয়ে রাজনৈতিক নীতি নির্ধারণ করি। বিএনপি দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক সঙ্গী, তারা আমাদের আধুনিক মনোভঙ্গি সম্পর্কে সচেতন।

অন্তর্র্বতী সরকার আসার পর থেকেই সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায় তাদের বিরুদ্ধে হিংসার প্রতিবাদে সরব। কী ভরসা দেবেন?-এমন প্রশ্নের জবাবে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে বাংলাদেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের অসামান্য সম্পর্ক এবং বোঝাপড়া রয়েছে। প্রতিটি নাগরিককে সমদৃষ্টিতে দেখা হয় এবং রাষ্ট্রের সমস্ত নাগরিককে সমান অধিকার এবং মর্যাদার ভিত্তিতে সম্মান করা হয়। জামায়াত সংখ্যালঘু বা সংখ্যাগুরুর তত্ত্বে বিশ্বাসী নয়। আমরা মনে করি ধর্মের ভিত্তিতে দেশবাসীর বিভাজন অপরাধ। হিন্দু বা অন্য কোনও সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে হিংসার ইতিহাস জামায়াতের নেই। বরং বিভিন্ন সময়ে জামায়াতে ইসলামী বিভিন্ন বিষয় নিয়ে হিন্দু নেতাদের সঙ্গে আলোচনাও করেছে।

জামায়াত সরকারে এলে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক কোন দিকে যাবে? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমার মনে হয় না পুরনো আওয়ামী লীগ জামানার সঙ্গে ভারতের নিছকই ঘনিষ্ঠ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক ছিল। আমরা সবাই জানি, ওই সম্পর্কে কার কী স্বার্থ ছিল। তবে নিজেদের কথা বলতে পারি, আমরা চাই ভারতের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি করতে, তবে তা হতে হবে পারস্পরিক সম্মান এবং সমতার মাধ্যমে। পড়শিদের সঙ্গে কার্যকরী এবং বাস্তবোচিত সম্পর্ক উভয় রাষ্ট্রের পক্ষেই সুবিধাজনক। সরকারে এলে সেটাই করতে চাইব।

অন্তর্বর্তী সরকার এবং জামায়াত মিলে বড় দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপিকে বাইরে রেখে নতুন শক্তির উত্থান হবে যে আতঙ্ক রয়েছে তা কতটা ঠিক? এমন প্রশ্নের জবাবে জামায়াত আমির বলেন, সবিনয়ে বলতে চাই এই তত্ত্বের কোনো ভিত্তি নেই। আওয়ামী লীগের প্রতি জনতার সম্মিলিত ঘৃণা তৈরি হয়েছিল দুর্নীতি এবং ফ্যাসিবাদী নীতির কারণে। তারা নিজেরাই নিজেদের পতন ডেকে এনেছে। কোনও সংগঠন বা দলকে সরানোর জন্য আমাদের কোনও ভূমিকা পালনের প্রয়োজন নেই। মানুষ সব জানেন। তাদের সম্মিলিত প্রজ্ঞাকে আমরা সম্মান করি। এইটুকু বলতে পারি, কোনো রাজনৈতিক দলকে খারিজ করা বা সরিয়ে দেওয়ার কোনো ইচ্ছা আমাদের নেই।