খুলনা | শুক্রবার | ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪ | ১৩ পৌষ ১৪৩১

প্রয়োজন যৌক্তিক সংস্কার ব্যবসা বাঁচিয়ে রাখতে হবে

|
১২:০০ এ.এম | ২৫ নভেম্বর ২০২৪


ব্যবসায়ীরা দেশের অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের সঙ্গে সরাসরি জড়িত এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে উলে­খযোগ্য ভূমিকা রাখেন। একজন ব্যবসায়ী একাধারে বিনিয়োগকারী, ঝুঁকি গ্রহণকারী, কর্মসংস্থান সৃষ্টিকারী এবং সর্বোপরি দেশের দ্রব্য ও সেবা সরবরাহকারী। যে দেশ যত ব্যবসাবান্ধব, সেই দেশের অর্থনীতি তত সমৃদ্ধ।
স¤প্রতি ‘অন্তর্বর্তী সরকারের ১০০ দিন : অর্থনৈতিক পর্যালোচনা’ শীর্ষক আলোচনায় ব্যবসায়ী নেতারা বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম ১০০ দিনে দেশে সংস্কারের বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়ার পরও দুর্বল আইন-শৃঙ্খলা, ব্যাংকঋণের উচ্চ সুদ হার এবং আমলাতন্ত্রের ধীরগতি উদ্যোক্তাদের জন্য বড় উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ব্যবসায়ী নেতারা মনে করেন, অবকাঠামোগত সার্বিক স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে এবং সামষ্টিক অর্থনীতি স্থিতিশীল রাখতে প্রয়োজন যৌক্তিক সংস্কার। ব্যবসার জন্য কিছু শর্তপূরণ প্রয়োজন। বিনিয়োগ যেকোনো দেশের শিল্প, ব্যবসা-বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক উন্নতির একটি বড় বিষয়। বিনিয়োগ ব্যক্তি খাতে যেমন হতে পারে, তেমনি হয় রাষ্ট্রীয় খাতে; যেটি সরকারের বিনিয়োগ। যেকোনো দেশে ব্যক্তি বা বেসরকারি বিনিয়োগই বেশি গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশে বেসরকারি বিনিয়োগ, বেসরকারি ব্যবসা ও শিল্প বিশেষ অবদান রাখছে।
দেশের অর্থনীতি নানা রকম চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করছে। ছোট-বড় সব ব্যবসার ক্ষেত্রেই নানা ধরণের ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। শিল্প, ব্যবসা, বিনিয়োগ সব কিছুই যেন তার স্বাভাবিক গতি হারিয়ে ফেলছে। ব্যবসায়ী নেতারা বলছেন, আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির ক্রমেই অবনতি হয়, যা এখনো ঠিক হয়নি। পুলিশ নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ায় বেশ কয়েকটি কারখানায় হামলা হয়েছিল। সেগুলোতে এখনো স্থিতিশীলতা ফেরেনি।  
অন্যদিকে ঋণপ্রবাহ কমে যাওয়ার ফলে বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ সক্ষমতা কমে যাওয়ার ঝুঁকির পাশাপাশি ব্যবসা প্রসারেও সমস্যা দেখা দিয়েছে। ব্যবসায় শ্লথগতির কারণে ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তাদের ব্যবসা চালাতে কষ্ট হচ্ছে। অর্থনৈতিক সংকটসহ বিভিন্ন কারণে গত কয়েক মাসে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন গ্র“পের দেড় শতাধিক কোম্পানি তাদের ব্যবসা গুটিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এরই মধ্যে জুলাই-সেপ্টেম্বরে ৮৩টি কোম্পানি পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে। কোম্পানিগুলোর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী স্থায়ীভাবেই প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। নতুন কাজের সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে না। বিশ্লেষকরা বলছেন, মূল্যস্ফীতির চাপে উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি, বিক্রি হ্রাস, সুদের উচ্চ হার, শ্রম অসন্তোষ, পরিবহন ও কারিগরি সমস্যা, ডলার সংকটে কাঁচামালের ঘাটতি, বৈশ্বিক যুদ্ধ ও আকস্মিক বন্যার বিরূপ প্রভাব মোকাবেলা করছে ব্যবসা-উদ্যোগ।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে ভোক্তা মূল্যসূচক ৯ শতাংশের ওপরে থাকায় মুদ্রাস্ফীতির চাপ নিয়ন্ত্রণে কেন্দ্রীয় ব্যাংক তার মুদ্রানীতি কঠোর করে চলেছে। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, এই নীতি সুদ হার বৃদ্ধির ফলে দেশে আমানত এবং ঋণ, উভয়ের ওপর সুদের হার বেড়ে যাবে। তবে আমানতের ওপর যে হারে সুদের হার বৃদ্ধি পাবে, তার চেয়ে অনেক বেশি হারে ঋণের ওপর সুদের হার বাড়বে। আমাদের প্রত্যাশা, দেশে ব্যবসার পরিবেশ সুন্দর হবে। নতুন নতুন উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। দেশের অর্থনীতির স্বার্থে ব্যবসা বাঁচিয়ে রাখতে হবে।