খুলনা | শুক্রবার | ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪ | ১৩ পৌষ ১৪৩১

জিয়া ক্রিকেট টুর্নামেন্ট

পাঁচ উইকেট হাতে রেখেই ঢাকার টিকিট পেয়েছে খুলনার সবুজ দল

ক্রীড়া প্রতিবেদক |
০১:২৪ এ.এম | ২৫ নভেম্বর ২০২৪


হাত নেড়ে দর্শকদের ভালোবাসা গ্রহণ করেন জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক মিনহাজুল আবেদিন নান্নু, দেশের প্রথম সেঞ্চুরিয়ান মেহরাব হোসেন অপি, জাতীয় মহিলা ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক সালমা খাতুন ও জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক অধিনায়ক সাফজয়ী ফুটবলার আমিনুল হক। 
রোববার বেলা পৌনে ১১টায় খুলনা জেলা স্টেডিয়ামে জিয়া ক্রিকেট টুর্নামেন্টের উদ্বোধনী পর্বের মাহেন্দ্রক্ষণে ঘটে এমনি আনন্দঘন মুহূর্ত। দুই পাশে জার্সি গায়ে উদ্বোধনী ম্যাচে অংশগ্রহণকারী খুলনা বিভাগের লাল ও সবুজ দলের খেলোয়াড়। তাদের মাঝে দাঁড়িয়েছিল জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক মিনহাজুল আবেদিন নান্নু, দেশের প্রথম সেঞ্চুরিয়ান মেহরাব হোসেন অপি, জাতীয় মহিলা ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক সালমা খাতুন ও জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক অধিনায়ক সাফজয়ী ফুটবলার আমিনুল ইসলাম। 
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ছিলেন কেন্দ্রীয় বিএনপি’র ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বকুল। উদ্বোধনী মঞ্চে আরও ছিলেন কেন্দ্রীয় বিএনপি’র তথ্য বিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল, জিয়া ক্রিকেট টুর্নামেন্ট আয়োজক কমিটির আহবায়ক রফিকুল ইসলাম বাবু ও সদস্য সচিব দেবব্রত পাল, খুলনা মহানগর বিএনপি’র সদস্য সচিব মোঃ শফিকুল আলম তুহিনসহ নেতৃবৃন্দ। বেলুন, ফেস্টুন ও শান্তির প্রতীক পায়রা উড়িয়ে টুর্নামেন্ট উদ্বোধন করেন অতিথিরা। এ সময়ে অতিথির সাথে মঞ্চে ছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে ঢাকার আশুলিয়ায় গত ৫ আগস্ট পুলিশের গুলিতে শহিদ হামিদ শেখের পিতা তেরখাদার পানতিতা গ্রামের জাফর শেখ।
শুরুতেই জাসাস মহানগর শাখার পরিবেশনায় জাতীয় সঙ্গীত এবং শহিদ জিয়ার উপরে প্রমাণ্য চিত্র প্রদর্শন করে। এ সময়ে গ্যালারি থেকে শহিদ জিয়া সম্পর্কিত নানান শ্লোগান ভেসে আসে হাজারো দর্শকের কণ্ঠধ্বনি হয় স্টেডিয়াম এলাকা। টসে জিতে খুলনার লাল দলকে ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রণ জানায় সবুজ দল। 
সবুজ দলের নিয়ন্ত্রিত বোলিং আক্রমণে নির্ধারিত ২০ ওভার শেষে সাত উইকেটে ১৩৭ রান করে লাল দল। সবুজ দল ১৯ ওভারে ৫ উইকেট হারিয়ে জয়ের লক্ষ্যে পৌঁছে যায়। ছয় বল ও পাঁচ উইকেট হাতে রেখেই ঢাকার টিকেট পেয়েছে খুলনা সবুজ দল।
দুই দলের টি-টোয়েন্টি এ ম্যাচ চলাকালে আন্তর্জাতিক আদলে গ্যালরিতে দর্শকরা বাদ্যযন্ত্র ও ভুভুজেলা নিয়ে আনন্দে মেতে ওঠে। ছক্কা মারলে গ্যালারি জুড়ে চলে উল­াস। আবার উইকেট পড়লেও চলে উল­াস। যা দীর্ঘদিন খুলনা স্টেডিয়ামে এমন দৃশ্য ছিল অধরা। একটি প্রীতি ম্যাচ হলেও তার আয়োজন ছিল দর্শকদের মনে রাখার মতো। এই আয়োজন খুলনার ক্রীড়াঙ্গনে নতুন মাত্রা এনে দিয়েছে।
উদ্বোধনী পর্বে অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক মিনহাজুল আবেদিন নান্নু বলেন, ‘নাইস টু বি ব্যাক। অনেক অনেক দিন পর খুলনায় এসেছি। খুলনার অনেক ইতিহাস, অনেক স্মৃতি। খুলনাকে ক্রিকেটের আঁতুরঘর বললেও ভুল হবে না। খুলনা অনেক জাতীয় ক্রিকেটারের জন্ম দিয়েছে। আজকের এই টুর্নামেন্টের আয়োজনে আমি খুবই খুশি। এখানে স্পোর্টস প্রমোট করা হবে। আমরা যাঁরা খেলোয়াড়, আমরা সব সময় সর্বাত্মকভাবে চেষ্টা করবো কীভাবে স্পোর্টসকে সঠিক ভাবে প্রমোট করা যায়।’
কেন্দ্রীয় বিএনপি’র ক্রীড়া সম্পাদক সাফজয়ী ফুটবলার মোঃ আমিনুল হক বলেন, শহিদ জিয়া ক্রিকেট টুর্নামেন্ট অনন্য একটি আয়োজন। যত বেশি টুর্নামেন্ট আয়োজন হবে, ততো বেশি ভালো খেলোয়াড় বের হয়ে আসবে। প্রতিবছর এ টুর্নামেন্টের আয়োজন হবে; ভবিষ্যতে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে আমরা এ আয়োজনকে ছড়িয়ে দিতে পারবো বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
টুর্নামেন্ট আয়োজক কমিটির আহŸায়ক রফিকুল ইসলাম বাবু বলেন, প্রতিটি সাংগঠনিক বিভাগেই লাল ও সবুজ নামে দু’টি করে দল নিজেদের মধ্যে একটি করে ম্যাচ খেলবে। ১০ ম্যাচের ১০ জয়ী দলের সঙ্গে মূল পর্বে যোগ হবে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ দল। বিভাগীয় পর্যায়ের খেলাগুলো বিভিন্ন বিভাগীয় ও জেলা শহরে হলেও ১৬ জানুয়ারি থেকে ঢাকায় মূল পর্ব শুরু হবে। ১৯ জানুয়ারি শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের জন্মদিনে মিরপুর শেরে বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বিসিবি’র সহযোগিতায় টুর্নামেন্টের ফাইনাল অনুষ্ঠিত হবে। 
কেন্দ্রীয় বিএনপি’র তথ্য বিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল বলেন, বিগত সময়ে ক্ষমতাসীনরা ক্রীড়াঙ্গনের উন্নয়ন চায়নি। নিজেদের উন্নয়ন ও লুটপাটে ব্যস্ত ছিলেন। এক সময়ে খুলনা থেকে সর্বাধিক খেলোয়াড়রা অংশ নিলেও এখানে খেলোয়াড়দের সুযোগ-সুবিধা বাড়েনি। সর্বক্ষেত্রে রাজনীতিকরণ করায় ক্রীড়াঙ্গনকে ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। দেশ সংস্কারের পাশাপাশি জনগণকে সাথে নিয়ে বিএনপি ক্রীড়াঙ্গণ সংস্কারের কাজ করবে বলে প্রতিশ্র“তি ব্যক্ত করেছেন তিনি।
কেন্দ্রীয় বিএনপি’র ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক রাকিবুল ইসলাম বকুল বলেন, খুলনার ম্যাচটিকে কেন্দ্র করে খুলনা অঞ্চলের মানুষের মধ্যে স্বতঃস্ফূর্ত প্রাণচাঞ্চল্যের প্রকাশ পেয়েছে। দীর্ঘদিন পর এখানকার দর্শকরা জাতীয় দলের সাবেক ও দেশসেরা সব ক্রিকেটারদের সম্মিলন দেখতে পেয়ে খুলনাবাসী ধন্য। ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা সরকার খুলনাসহ দেশের স্টেডিয়ামগুলোকে চারণ ভূমিতে পরিণত করেছে। সেগুলোকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনার জন্য জোর চেষ্টা চালানো হচ্ছে। তারা দেশের তরুণ সমাজের হাতে বল ও ব্যাট না দিয়ে তাদের হাতে মাদক তুলে দিয়েছেন। দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকেও মাদকের অভয়ারণ্যে পরিণত করেছিল। যুব সমাজকে তারা ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়েছে। ১৫ বছরের জঞ্জাল সরিয়ে দিতে হবে। ছাত্র ও যুব সমাজকে খেলাধুলার দিকে ধাবিত করে সুন্দর খেলা উপহার দিয়ে মাদক মুক্ত খুলনা শহর গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন বিএনপি’র ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বকুল।