খুলনা | শুক্রবার | ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪ | ১২ পৌষ ১৪৩১

অস্থির ভোজ্য সয়াবিন চাল ডাল চিনি মুরগি ও ডিমের বাজার

আল মাহমুদ প্রিন্স |
০১:০৩ এ.এম | ৩০ নভেম্বর ২০২৪


কমছে না ভোজ্য সয়াবিন, চাল, ডাল, ডিম, চিনি ও মুরগির দাম। এখনো স্বাভাবিক অবস্থায় নামেনি সবজির মূল্য। চলতি শীত মৌসুমে দোকানে সাজিয়ে রাখা হয়েছে নানা ধরনের টাটকা সবজি। পর্যাপ্ত সবজির সরবরাহ হলেও এখানো স্বাভাবিক অবস্থায় নামেনি সবজির মূল্য। কতিপয় অসাধু ও সিন্ডিকেট ব্যবসায়ী অধিক মুনাফার আশায় ইচ্ছামাফিক দাম বাড়িয়ে কৌশলে পকেট কাটছে ভোক্তাদের। লাভবান হচ্ছে মধ্যসত্ত¡ ভোগীরা। দাম অস্বাভাবিক থাকায় বিপাকে সমাজের নিম্ন ও মধ্য আয়ের মানুষ। বিশেষ করে যাদের নুন আনতে পানতা ফুরায় তাদের সবচয়ে বেশি সমস্যা।  পেঁয়াজ ও আলুতে শুল্ক কমালেও এর প্রভাব পড়েনি খুলনার বাজারে। জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য ও জিনিসের দাম নিয়ন্ত্রণে আনতে অভিযান অব্যাহত রাখলেও কোনো ভাবে নিয়ন্ত্রণে আসছে না পণ্য ও জিনিসের দাম।
গতকাল শুক্রবার নগরীর বিভিন্ন বাজারে প্রতিকেজি নতুন আলু ১০০ টাকা, পুরনো আলু ৭৫ টাকা, দেশি পেঁয়াজ ১৩০ টাকা, ভারতীয় পেঁয়াজ ১০০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। অথচ পেঁয়াজ ও আলুতে শুল্ক কমালেও বিন্দুমাত্র প্রভাব পড়েনি খুলনার বাজারে।  
বাজারে প্রতিকেজি দেশি রসুন ২৬০ টাকা, ফুলকপি ৬০ টাকা, বাঁধাকপি ৫০ টাকা, শালগম ৬০ টাকা, মূলা ৪০ টাকা, শাতকালীন শিম ৮০ টাকা, বরবটি শিম ৮০ টাকা, কাঁচামরিচ ১২০ টাকা, বেগুন ৭৫ থেকে ৮০ টাকা, টমেটো ১৬০ টাকা, গাজর ৯০ থেকে ১০০ টাকা, ঝিঙে ৬০ টাকা, উচ্ছে ৮০ টাকা, মিষ্টিকুমড়া ৫০ টাকা, পেঁপে ৫০ টাকা, পটল ৬০ টাকা, ঢেঁড়শ ৬০ টাকা, পেঁপে ৪০ টাকা, টমেটো ১২০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। লালশাক ও ঘিকাঞ্চন শাক ৪০ থেকে ৪৫ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। প্রতিহালি কাঁচাকলা বিক্রি হয়েছে ৪০ টাকা দরে।
উর্ধ্বমুখি হয়ে উঠেছে চালের বাজার। দুই মাসের  ব্যবধানে চালের মূল্য অন্তত কেজিপ্রতি বেড়েছে চার টাকা। নগরীর বিভিন্ন খুচরা বাজারে প্রতিকেজি মোটা চাল (স্বর্ণা) ৫২ থেকে ৫৪ টাকা, আঠাশ বালাম ৬০ থেকে ৬৫ টাকা, মিনিকেট ভালোমানের ৭০ থেকে ৭৫ টাকা, মিনিকেট নিম্নমানের ৬০ থেকে ৬৫ টাকা, বাসমতি ৭৫ থেকে ৭৮ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। অথচ দুই মাস আগে মোটা চাল (স্বর্ণা) ৪৮ থেকে ৫০ টাকা, আঠাশ বালাম ৫৫ থেকে ৫৬ টাকা, মিনিকেট ভালোমানের ৬০ থেকে ৬২ টাকা, মিনিকেট নিম্নমানের ৫৬ থেকে ৫৮ টাকা, বাসমতি ৭০ থেকে ৭২ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। 
কমেনি ডালের দাম। দীর্ঘদিন ধরে মশুর ডাল (সরু) ১৪০ টাকা, মশুর ডাল  (মোটা) ১২৫ থেকে ১৩০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। ডিমের বাজারও চড়া। বাজারে প্রতিহালি ব্রয়লার মুরগির ডিম ৫২ থেকে ৫৪ টাকা, প্রতিহালি দেশি মুরগির ডিম ৬০ থেকে ৬৪ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। অস্বাভাবিক মুরগির বাজার। বাজারে প্রতিকেজি ব্রয়লার মুরগি ১৭০ টাকা, কক মুরগি ২৮০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। 
বৃদ্ধি পেয়েছে ভোজ্য সয়াবিন তেলের দাম। বোতলজাত ফ্রেশ, তীর, বসুন্ধরা সয়াবিন (৫ লিটার) বিক্রি হচ্ছে ৮৬০ টাকা দরে। যা লিটার প্রতি বিক্রি হচ্ছে ১৭২ টাকা দরে। চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে লুজ সয়াবিন। খুচরা বাজারে প্রতিলিটার ১৯৫ টাকা। 
অথচ দুই সপ্তাহ আগে খুচরা বাজরে প্রতিলিটার সয়াবিন বিক্রি হয়েছে ১৮৫ টাকা দরে। বাজারে সুপার তেল বিক্রি হচ্ছে ১৭৯ থেকে ১৮০ টাকা দরে। অথচ গত ২৬ সেপ্টেম্বর ১ লিটার ভোজ্য সয়াবিন তেল ১৮০-১৮৫ টাকা, ২ লিটার সয়াবিন তেল ৩৪৫-৩৫৫ টাকা, ৩ লিটার সয়াবিন তেল ৫০০-৫২০ টাকা, ৫ লিটার সয়াবিন তেল ৮০০-৮২৫ টাকা  দরে বিক্রি হয়েছে। 
ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাবে ২০২০ সালের মে মাসে দেশের বাজারে প্রতি লিটার সয়াবিন তেলের দাম ছিল ১৩৫-১৪০ টাকা। এর পরের বছর একই মাসে ছিল ১৩৫-১৪৫ টাকা। 
তবে ২০২২ সালের শুরুতে প্রতি লিটার সয়াবিন তেলের দাম বেড়ে দাঁড়ায় ১৫০-১৬০ টাকায়। ২০২১ সালে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি টন সয়াবিন তেলের গড় মূল্য ছিল ১ হাজার ৩৮৫ ডলার। ২০২২ সালে বেড়ে হয় ১ হাজার ৬৬৭ ডলার। ২০২৩ সালে গড় মূল্য নেমে আসে ১ হাজার ১১৯ ডলারে। ২০২৩ সালের মে মাসে বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম বৃদ্ধি পেয়েছিলো লিটারে ১২ টাকা। খোলা সয়াবিনের দাম বেড়েছিলো লিটারে ৯ টাকা। আর পাঁচ লিটারের বোতলের দাম বেড়েছিলো ৬৪ টাকা। প্রতি লিটার সয়াবিন ১৭৪ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। এখনো কমেনি চিনির দাম। প্রতিকেজি ফ্রেশ চিনি ১৪০ টাকা, লাল চিনি (প্যাকেটজাত) ১৫০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। 
নগরীর এ্যাপ্রোচ রোডস্থ কেসিসি সুপার মার্কেটে আসা মৎস্য ব্যবসায়ী মোঃ মহিদুল  ইসলাম বলেন, বাজার দর নিয়ন্ত্রণে নেই। অভিযান হলেও দাম কমছে না। ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটের কারণে দাম কমছে না। নগরীর ময়লাপোতা এলাকায় শেরে বাংলা রোডস্থ কেসিসি সন্ধ্যা বাজারে আসা ক্রেতা শিক্ষক ইকবাল হোসেন বলেন, বাজারে অনেক সবজির সরবরাহ। এরপরও দাম স্বাভাবিক অবস্থায় নেমে আসেনি।