খুলনা | শুক্রবার | ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪ | ১৩ পৌষ ১৪৩১

ফ্যাক্টচেকিংয়ে ধরাশায়ী ভারতীয় তথ্য সন্ত্রাস

ভারতের পদদলিতের ঘটনা বাংলাদেশে ‘ধর্ষণ-হত্যা’ বলে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা

খবর প্রতিবেদন |
০২:২৭ পি.এম | ০১ ডিসেম্বর ২০২৪


শুধু মিথ্যা প্রচারণা নয়, বাংলাদেশের বিরুদ্ধে বয়ান প্রতিষ্ঠা করতে নতুন নতুন ক‚টকৌশলের আশ্রয় নিচ্ছে ভারত। যেখানে দেশটির স্থানীয় গণমাধ্যমের সর্বৈব মিথ্যা খবরের প্রভাব পড়েছে ভারতের মূল ধারার গণমাধ্যমে। যা উঠে আসছে দেশি বিদেশি নানা ফ্যাক্টচেকে। বিশ্লে¬ষকরা বলছেন, সংকট নিরসনের স্বার্থেই দু’দেশের উচিত আলোচনায় বসা।
স¤প্রতি বাংলাদেশে একাধিক হিন্দু নারী ও শিশুকে মুসলিমরা ধর্ষণের পর হত্যা করেছে দাবিতে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে প্রচার করা হচ্ছে। এসংক্রান্ত একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) পাঁচ লক্ষাধিক বার দেখা হয়েছে। 
তবে ফ্যাক্টচেক নিয়ে কাজ করা রিউমর স্ক্যানারে অনুসন্ধানে জানা গেছে, প্রচারিত ভিডিওটি হিন্দু নারী ও শিশুদের ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনা নয়। এমনকি দৃশ্যটি বাংলাদেশেরও নয়, এটি ভারতের। গত জুলাইয়ে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ধর্মীয় উৎসবে পদদলিত হয়ে শতাধিক নারী ও শিশু নিহতের ঘটনার ভিডিও ছিল এটি।
রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে বলা হয়েছে, অভিনন্দন কুমার নামে একটি ইউটিউব চ্যানেলে গত ৩ জুলাই একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। ভিডিওর দৃশ্যের সঙ্গে আলোচিত ভিডিওর মিল রয়েছে। হিন্দি ভাষায় লেখা ভিডিওটির ক্যাপশন ভাষান্তর করে জানা যায়, উত্তর প্রদেশে হাতরাসে যাওয়ার সময় পদদলিত হয়ে ১২২ জন নিহত হন। এদের মধ্যে অধিকাংশই নারী ও শিশু।
পরবর্তী অনুসন্ধানে ভারতীয় গণমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডের ওয়েবসাইটে গত ৫ জুলাইয় প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ২ জুলাই উত্তর প্রদেশের ফুলরাই গ্রামে হাতরাস অনুষ্ঠানে পদদলিত হয়ে অন্তত ১২৩ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে প্রায় সকলেই নারী ও শিশু। একই তথ্যে সে সময় সংবাদ প্রকাশ করে ভারতীয় গণমাধ্যম নিউজ ১৮।
রিউমর স্ক্যানার জানায়, ভারতে পদদলিত হয়ে নারী ও শিশু নিহতের দৃশ্যকে বাংলাদেশে মুসলিমরা হিন্দু নারী ও শিশুকে ধর্ষণের পর হত্যা করেছে বলে প্রচার করা হচ্ছে। যেটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।
ভারতের মিডিয়ার সর্বৈব মিথ্যা প্রচারণা বাংলাদেশকে নিয়ে ৫ আগস্টের পর থেকে। টানা এমন মিথ্যা প্রচারণার প্রভাব পড়েছে দেশটির মূলধারার গণমাধ্যমেও। স্বভাবতই যার রশে পড়ছে দু’দেশের মানুষের মানসপটে। হামলা হয়েছে আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাই কমিশনে। প্রতিবাদে মিছিল হচ্ছে বাংলাদেশেও। 
মেটা বা ফেইসবুক স্বীকৃত বাংলাদেশের একমাত্র ফ্যাক্টচেকিং প্রতিষ্ঠান ফ্যাক্টওয়াচের বিশে¬ষণ বলছে, স¤প্রতি বাংলাদেশ নিয়ে যে খবরগুলো আসছে তার বেশিভাগই মিথ্যা তথ্য। এই মিথ্যা প্রচারণায় বিশ্বের শীর্ষ দেশও এখন ভারত। যা ওঠে এসেছে জার্মানির এক গবেষণা প্রতিবেদনে। ফ্যাক্টচেকের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক সুমন রহমান বলছেন, বাংলাদেশের বিরুদ্ধে বিদ্বেষপূর্ণ জনমত গড়তে নানা উপায় নিচ্ছে ভারতীয় গণমাধ্যম। বিশেষ করে বাংলা ভাষার মিডিয়াগুলো। তারা তথ্য ম্যানুপুলেট করছে, মিথ্যা এক্সপার্ট তৈরি করে। এরপর এক্সপার্ট মতামত দিতে থাকে। এমন সব আর্টিক্যাল লিখবে যার কোনো ভিত্তি নেই। যেমন কয়েক দিন আগেও প্রফেসর ড. ইউনুসকে কোড করে একটি কথা লিখে। এবং কোড করা কথাটি কি পরিমাণ অযৌক্তিক সেটা নিয়ে বিরাট আর্টিক্যাল লিখে ফেলে। কিন্তু দেখা যায় ড. ইউনুসকে কোড করে যে কথা বলা হয়েছে সেটিই মূলত মিথ্যা।
ইসকন বাংলাদেশের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য হৃষীকেশ গৌরাঙ্গ দাস বলেন, এমন প্রচারণায় স¤প্রীতি নষ্ট হচ্ছে। ভারতকে গণমাধ্যমকে আহŸান জানাবো যে তারা সত্য তথ্য তুলে ধরুক। কোনো বিষয়কে বিশেষায়িত বা অতিরঞ্জিত করার দরকার নেই। এর জন্য বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের মানুষের সুন্দর সম্পর্ক সেটি খারাপ অবস্থার দিকে চলে যাচ্ছে।
অনেকটা যুদ্ধ ঘোষণা করার মতো করে ভারতীয় গণমাধ্যমের প্রচারণার বিষয়ে ক‚টনীতির যে রাজনীতি তা কি অন্তর্বর্তী সরকার সামাল দিতে পারছে এমন প্রশ্নে সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ুন কবির বলেন, পরিস্থিতির থেকে উত্তরণের একমাত্র মাধ্যম আলাপ-আলোচনা। দু’দেশের পররাষ্ট্র সচিবরা কয়েকদিন পর আলোচনায় বসবেন। আমি মনে করি উত্তেজনা কমাতে এটি একটি ইতিবাচক ধাপ হতে পারে। 
তার মতে, বাংলাদেশের হালকা করে দেখার সুযোগ নেই প্রতিবেশী দেশের এমন অবস্থানকে। যদিও ভারতেরে এই প্রোপাগণ্ডা দৃঢ় হচ্ছে বাংলাদেশের ভেতরকার বন্ধন। এক ছাতায় নিয়ে এসেছে সব পথের সব মতের মানুষকে।