খুলনা | শুক্রবার | ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪ | ১৩ পৌষ ১৪৩১

বেনজীরের অবৈধ সাম্রাজ্য

দেশে-বিদেশে জসিমের হাজার কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগ

খবর প্রতিবেদন |
০৪:৩১ এ.এম | ০২ ডিসেম্বর ২০২৪


পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজি) বেনজীর আহমেদের অবৈধ অর্থের প্রধান বিনিয়োগকারী ছিলেন স¤প্রতি গ্রেফতার হওয়া চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও ক্যাশিয়ার জসিম উদ্দিন আহমেদ। দেশের পাশাপাশি দুবাই ও সৌদি আরবে একাধিক হোটেলের মালিকানাসহ বিভিন্ন ব্যবসায় অন্তত ৫০০ কোটি টাকার বিনিয়োগ রয়েছে তার। সব মিলিয়ে দেশে-বিদেশে জসিম হাজার কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগ করে বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদ গড়ে তুলেছেন।
অতি স¤প্রতি ক্যাশিয়ার জসিমকে গ্রেফতারের পর পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদে এসব গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়েছে। এসব বিষয়ে তাকে আরো জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে বলে জানিয়েছেন বাড্ডা থানার ওসি মোঃ সাইফুল ইসলাম।
জানা গেছে, পুলিশের সর্বোচ্চ পদে পদায়ন হওয়ার পর বেনজীর আহমেদ ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে কেনা হয় ৪৬৬ বিঘা জমি। ১৯টি প্রতিষ্ঠানে শত শত কোটি টাকা বিনিয়োগ করেন তিনি। খতিয়ান অনুযায়ী, ১৬৩ দলিলে কেনা হয় এসব জমি। একই সময়ে ফ্ল্যাট-প্লটের বাইরে দেশে ব্যবসারত ১৯টি কম্পানির মালিকানা কেনা হয়েছে বেনজীর পরিবারের নামে। পাশাপাশি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কম্পানি ফান্ড ও সঞ্চয়পত্রেও করেন বিপুল বিনিয়োগ। বেনজীরের এসব অবৈধ অর্থ বিনিয়োগে সব ধরনের সহযোগিতাকারী হিসেবে ক্যাশিয়ার জসিমের নাম তদন্তে উঠে এসেছে।
জানা গেছে, কক্সবাজার কলাতলীতে হোটেল রামাদায় আড়াইশ’ কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগ রয়েছে জসিমের। রামাদার অংশীদার সাবেক একজন আইজিপির মালিকানাও এখন তার দখলে। এ ছাড়া ‘বিকাশ বিল্ডিং’ নামে পরিচিত একই এলাকায় একটি বহুতল আবাসিক হোটেলের ৭৯টি ফ্ল্যাট কিনেছেন তিনি। প্রায় শতকোটি টাকা মূল্যের মহল শপিং কমপ্লেক্সও কিনে নিয়েছেন চট্টগ্রাম শহরের লালদীঘির পশ্চিমপারে। এর বাইরে চান্দগাঁও আবাসিক ই-ব্লকের ১৪ নম্বর প্লটে তার ৮০ শতক জমি রয়েছে, যার বাজারমূল্য প্রায় ৭০ কোটি টাকা। তার তিনটি বহুতল আবাসিক ভবন, খুলশী এলাকায় তিন কানি জমি, বাকলিয়ায় পাঁচ কানি জমি রয়েছে ফিরিঙ্গি বাজারে।
এ ছাড়া চট্টগ্রামের পতেঙ্গা, হালিশহরের বিভিন্ন এলাকায় নামে-বেনামে শতকোটি টাকার জায়গা কিনেছেন জসিম। সূত্র বলছে, নামে-বেনামে আরো অন্তত শতকোটি টাকার সম্পদ কিনেছেন নিজ গ্রামে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, কক্সবাজার সাগরপারের একে একে তিনটি হোটেল জবরদখলের অভিযোগ রয়েছে জসিমের বিরুদ্ধে। বেনজীরের ক্ষমতায় জবরদস্তিমূলক ভাবে মালিকানাও হাতিয়ে নেন জসিম।
জানা গেছে, জসিম একসময় জীবিকার সন্ধানে মধ্যপ্রাচ্যে যান। জড়িয়ে পড়েন দুবাই-বাংলাদেশ স্বর্ণ চোরাচালান চক্রে। কিছুদিনের মধ্যে তরতর করে বাড়তে থাকে তার সম্পদ। টাকার খেল দেখিয়েই হয়েছিলেন চন্দনাইশ উপজেলা চেয়ারম্যান। ক্ষমতাচ্যুত আ’লীগ নেতাদের আশ্রয় পাওয়া জসিমের বড় শক্তি ছিল সাবেক আইজিপি বেনজীর। সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদের সঙ্গেও ছিল তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। এদের সঙ্গে খাতিরের সুবাদে বিগত সরকারের আমলে জসিম ব্যাংক থেকে শতকোটি টাকা ঋণ নিলেও তা ফেরত দেননি। জেসিকা গ্র“প নামের একটি প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান জসিমের বাড়ি চন্দনাইশের বদুরপাড়া গ্রামে। সেখানে তিনি বিলাসবহুল বাড়ি নির্মাণ করেছেন। 
সূত্র বলছে, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে অর্থের অন্যতম জোগানদাতা ছিলেন জসিম। স্থানীয় রাজনীতিবিদদেরও অর্থের জোগান দিতেন তিনি।
জসিম উদ্দিন সাবেক আইজিপি বেনজীরের ব্যবসায়িক পার্টনারও ছিলেন। তাই আদালতের পরোয়ানা নিয়েও পুলিশ প্রটোকলে নির্বাচনী প্রচারণা চালাতেন তিনি। ঋণখেলাপিতে দণ্ডিত হওয়ার পরও তার প্রার্থিতা বাতিল করেননি রিটার্নিং অফিসার। মনোনয়নপত্র দাখিলের সময় হলফনামায় খেলাপি ঋণের বিষয়টি গোপন করেন জসিম। অথচ পদ্মা ব্যাংক থেকে নেওয়া ৬০ কোটি টাকার ঋণ তিনি আট বছরেও দেননি। ওই ঋণটি এখন সুদসহ শতকোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। তার বিরুদ্ধে অর্থঋণ আদালতে মামলা করে পদ্মা ব্যাংক, যে মামলায় তার সাজাও হয়। গত ৪ এপ্রিল তাকে ঋণখেলাপি ঘোষণা দিয়ে বিদেশ গমনে নিষেধাজ্ঞা দেন অর্থঋণ আদালত। ৩০ এপ্রিল পাঁচ মাসের আটকাদেশও দেন।
সূত্র জানায়, ৫ আগস্টের পর ক্ষমতার পালাবদলে আত্মগোপনে থেকে জসিম বিএনপিতে ভেড়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু তাতে ব্যর্থ হন এবং অবশেষে গ্রেফতার হন। তিনি একসময় এলডিপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকার দাবি করলেও সুবিধা নিয়েছেন আ’লীগ সরকার থেকে।