খুলনা | শুক্রবার | ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪ | ১৩ পৌষ ১৪৩১

সৃষ্টি হয়েছে বেকারদের কর্মসংস্থান

খুলনায় পরিত্যক্ত প্লাস্টিক জাতীয় মালামাল এখন বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের মাধ্যম

আল মাহমুদ প্রিন্স |
০৪:৩২ এ.এম | ০২ ডিসেম্বর ২০২৪


এক সময় কোমল পানীয় পান করে খালি বোতলটি ফেলে দেওয়া হতো। কিন্তু কোমল পানীয় খালি বোতল, তেলের বোতলসহ পরিত্যক্ত বিভিন্ন প্লাস্টিক জাতীয় মালামাল সামগ্রী এখন বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের মাধ্যম হয়ে দাঁড়িয়েছে। বেড়েছে প্লাস্টিক জাতীয় পরিত্যক্ত মালামাল সামগ্রীর কদর। খুলনাসহ বিভিন্ন উপজেলায় ছড়িয়ে পড়েছে এসব মালামাল সামগ্রীর গুরুত্ব। নগরীসহ জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে গড়ে উঠেছে শতাধিক প্লাস্টিক রিসাইক্লিং (পুনঃব্যবহার উপযোগী করা) কারখানা। সৃষ্টি হয়েছে নারী-পুরুষের নতুন কর্মসংস্থান, দূর হচ্ছে বেকারত্ব।  
মানুষের দৈনন্দিন চাহিদায় বিশ্বজুড়ে বাড়ছে প্লাস্টিকের ব্যবহার। কিন্তু পরিবেশ দূষণে ভূমিকা রাখে পরিত্যক্ত প্লাস্টিক। তাই দূষণ রোধে ২০১২ সালে সারাদেশে তিনটি প্লাস্টিক রিসাইক্লিং কারখানা গড়ে তোলে একটি দেশীয় প্রতিষ্ঠান। এরপর নগরীসহ জেলার বিভিন্ন উপজেলায় গড়ে ওঠে প্লাস্টিক রিসাইক্লিং কারখানা। খুলনায় ইতোমধ্যে গড়ে উঠেছে শতাধিক কারখানা। মহানগীর ময়ূর ব্রিজ সংলগ্ন এলাকায় ‘বিসমিল­াহ প্লাস্টিড’, খুলনা-মোংলা মহাসড়ক সংলগ্ন রূপসা কলেজের পশ্চিম পাশের্^ ‘সাইফুল প্লাস্টিড ওয়ার্ল্ড’সহ খুলনা মহানগরীর বিভিন্ন এলাকায় গড়ে ওঠা প্লাস্টিক রিসাইক্লিং কারখানাগুলোতে প্রতিদিন কাজ করে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করছেন শতশত নারী-পুরুষ। দূর হচ্ছে বেকারত্ব। 
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা হকারদের মাধ্যমে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কাছ থেকে সংগ্রহ করছে প্লাস্টিকের পরিত্যক্ত বোতলসহ বিভিন্ন ধরনের মালামাল সামগ্রী। তারা হকারদের কাছ থেকে ক্রয় করে কারখানায় রিসাইক্লিং করে ডিলারদের কাছে বিক্রি করেন। ডিলাররা এসব মালামাল ঢাকায় বিক্রি করেন। এসব মালামাল চীন, কাতার, জার্মান, মালেশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করেন। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা প্রতিকেজি কোমল পানীয় লাল বোতল ৪২/৪৪ টাকা, নীল বোতল ৫২/৫৫ টাকা, সাদা বোতল ৬৩/৬৫ টাকা দরে বিক্রি করেন।      
প্রাপ্ত তথ্যমতে, পাঁচশ’ বছরেও পচে না প্লাস্টিক। পুড়িয়েও রক্ষা নেই। তাতে তৈরি হয় বিষাক্ত গ্যাস ‘ডাইঅক্সিনক্স’, যা ক্যান্সারের কারণ। আরও তৈরি হয় কার্বনমনোক্সাইড ও কার্বন ডাই-অক্সাইড। উভয়টিই পরিবেশ ও প্রাণিকূলের জন্য ক্ষতিকর। মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইরের পানিয়াশাইলে চীনা প্রযুক্তিতে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে মুমানু পলিয়েস্টার ইন্ডাস্ট্রিজ। সেখানে প্লাস্টিক দিয়ে উৎপাদিত হচ্ছে তুলা। প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কাছ থেকে সংগ্রহ করা হচ্ছে প্লাস্টিকের পরিত্যক্ত বোতল। তা কেটে ছোট ছোট ফ্লেক্স তৈরি করা হয়। সেগুলো গরম পানিতে ধোঁয়ার পর উচ্চ চাপ ও তাপে বায়ুনিরোধক ড্রামে রাখা হয় আধা ঘণ্টা। তাপ দেয়ার পর তৈরি হয় পেস্ট। তা দিয়ে বিশেষ প্রক্রিয়ায় তৈরি হয় সূ² সুতা। এগুলো বিভিন্ন আকারে কেটে মেশিনে দেয়ার পর পলিয়েস্টার স্ট্যাপল ফাইবার হিসেবে সাদা তুলা বেরিয়ে আসে, যা কার্পাসের মতোই মোলায়েম ও মসৃণ। এরপর প্যাকেজিং হয়। পুরো প্রক্রিয়ায় যে বর্জ্য উৎপন্ন হয়, তাও রিসাইকেল করে তুলা তৈরি হয়। এছাড়া পরিত্যক্ত এসব মালামাল দিয়ে তৈরি হয় জিও ব্যাগ, সোফা, কম্বল, জানালার কাপড়, প্যাকেজিং প্যাকেট, সিনথেটিক তুলাসহ বিভিন্ন হস্তশিল্প। বিশেষ করে শিমুল তুলার বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে সিনথেটিক তুলা। 
খুলনা প্লাস্টিক রিসাইক্লিং ব্যবসায়ী এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোঃ মশিউর রহমান বলেন, প্লাস্টিক রিসাইক্লিং কারখানা গড়ে ওঠায় নতুন নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। তিনি বলেন, এক সময় প্লাস্টিকের বোতল ব্যবহারের পর মানুষ ফেলে দিতেন। এতে পরিবেশ নষ্ট হতো। এখান খালি বোতলসহ বিভিন্ন পরিত্যক্ত মালামাল সামগ্রী রিসাইক্লিং করে বিক্রি করা হয়।   
রূপসায় সাইফুল প্লাস্টিড ওয়ার্ল্ড কারখানার স্বত্বাধিকারী মোঃ সাইফুল ইসলাম বলেন, প্রায় আট বছর তিনি তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করে আসছেন। বর্তমানে তার প্রতিষ্ঠানে ১৫ জন নারী-পুরুষ শ্রমিক নিয়োজিত আছেন। খুলনায় এসব কারখানা গড়ে ওঠায় বেকারত্ব দূর হচ্ছে। প্লাসিটক রিসাইক্লিং মালামাল দ্বারা বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা হচ্ছে। 
খুলনা মহানগরীর বিসমিল­াহ প্লাস্টিক কারখানার স্বত্বাধিকারী দিদার হোসেন ইরাজ বলেন, শিমুল তুলার বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে সিনথেটিক তুলা। তিনি বলেন, প্লাস্টিক রিসাইক্লিং কারখানা গড়ে ওঠায় বেকারত্ব দূর হচ্ছে। নারী-পুরুষ উভয় এসব কারখানায় কাজ করে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন। তার কারখানায় বর্তমানে ১৩/১৪ জন শ্রমিক নিয়োজিত আছেন।