খুলনা | শুক্রবার | ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪ | ১৩ পৌষ ১৪৩১

ভারতের সঙ্গে আর নতজানু পররাষ্ট্রনীতি নয়

এবার রাজপথে ভারতীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে জাতীয় ঐক্যের আহবান সাবেক সেনা সদস্যদের

খবর প্রতিবেদন |
০৪:৪৪ এ.এম | ০২ ডিসেম্বর ২০২৪


ভারতে বাংলাদেশ হাইকমিশনে হামলা এবং জাতীয় পতাকা অবমাননা স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতি ‘হুমকি’ মনে করে দেশটির ক্ষেত্রে আর ‘নতজানু’ পররাষ্ট্রনীতি নয়, বরং ‘সাম্যতার ভিত্তিতে’ সেটি ঠিক করতে সরকারকে আহŸান জানিয়েছেন সশস্ত্র বাহিনীর সাবেক সদস্যরা। 
শনিবার দুপুরে রাজধানীর রাওয়া কমপ্লেক্সের নিচে ভারতীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে জাতীয় ঐক্যের আহŸান জানিয়ে সশস্ত্র বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত সদস্যবৃন্দের আয়োজনে প্রতিবাদ সমাবেশে এমন আহŸান জানানো হয়।
সরকারকে আহŸান জানিয়ে অনুষ্ঠানের আহŸায়ক মুক্তিযোদ্ধা ও অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল মোহাম্মদ আহসানুল­াহ বলেন, আর কোনো নতজানু পররাষ্ট্রনীতি নয়, সাম্যতার ভিত্তিতে পররাষ্ট্রনীতি চাই। কোনো ধরনের নতজানু নীতিকে কোনো অবস্থাতেই আমরা আশ্রয়-প্রশ্রয় দেব না।  
একই সঙ্গে ভারতের জনগণের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আপনাদের সাথে আমাদের কোনো শত্র“তা নেই। আপনারা আমাদের বন্ধু, কিন্তু ভারতের গেরুয়া পোশাকধারী হিন্দু আধিপত্যবাদকে আমরা কোনো ভাবেই এ দেশে প্রশ্রয়-আশ্রয় দিতে রাজি নই।  
তারা বলেন, আমরা ঐক্যের উদ্যোগ নিয়েছি তা আজ এখানেই শেষ নয়। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যেকোনো অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র হবে তা দেশবাসীকে সঙ্গে নিয়ে রুখে দিতে চাই। আমরা দেশের স্বাধীনতা রক্ষার শপথ নিয়েছিলাম। আমরা সেই শপথ থেকে বিচ্যুত হইনি। আমরা ভারতীয় আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে।
এ নিয়ে চলমান উত্তেজনার মধ্যে ‘ভারতীয় আগ্রাসনের’ বিরুদ্ধে সশস্ত্র বাহিনীর সাবেক সদস্যদের আয়োজিত প্রতিবাদ সমাবেশে অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল মোহাম্মদ আহসানুল­াহ বলেন, হজরত শাহজালাল, হজরত শাহ মখদুম, অতীশ দীপঙ্কর, শ্রী চৈতন্য, অনুক‚ল ঠাকুর, লোকনাথ ব্রহ্মচারী প্রমুখের আবাসভূমি এই বাংলাদেশ। আমরা যুগ যুগ ধরে এই শ্যামল ভূমিতে স¤প্রীতির সাথে বসবাস করে আসছি। কিন্তু অতি উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করছি, স¤প্রীতি বাংলাদেশের লেডি ফেরাউন পালিয়ে যাওয়ার পর থেকে ভারতের হিন্দু নেতৃত্বের শ্যেন দৃষ্টি পড়েছে আমাদের দিকে। তাদের ইদানিংকালের কর্মকান্ড এটা সুস্পষ্ট ভাবে প্রমাণ করে। 
তিনি বলেন, তাদের সর্বশেষ উদ্যোগ ছিল আগরতলা এবং কলকাতার বাংলাদেশি দূতাবাসে আক্রমণ চালানো এবং আমাদের বাংলাদেশের পতাকাকে অবমাননা করা। আমরা এই সমস্ত ঘটনাগুলোকে আমাদের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতি হুমকি হিসেবে মনে করছি। এ ছাড়া ভারতের কিছু মিডিয়া ও রাজনৈতিক নেতা বাংলাদেশকে নিয়ে সার্বক্ষণিক বিষোদগার করে চলেছে। ভিয়েনা কনভেনশন অনুযায়ী যে কোনো দূতাবাসে হামলা মানে সেই দেশের সার্বভৌম এলাকার ওপরে হামলা। দেশের এই সংকটময় পরিস্থিতিতে যখন আমাদের সার্বভৌমত্বের উপরে হামলায় হয়, আমাদের পতাকা পদদলিত হয়, তখন আমরা সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা চুপ করে থাকতে পারি না।
এ ক্ষেত্রে আমাদের দেশের তরুণ ছাত্র এবং শ্রমিক জনতাকে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে মন্তব্য করে তিনি বলেন, আপনাদের আরও আশ্বস্ত করতে চাই সশস্ত্র বাহিনীর লাখ লাখ প্রশিক্ষিত সৈনিক, হাজার হাজার প্রশিক্ষিত অফিসার সব সময় এ দেশের জনগণের পাশে ছিলাম, আমরা থাকবো। আমরা যে কোনো প্রয়োজনে দেশের জন্য জীবন বিলিয়ে দিতে প্রস্তুত। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে আভ্যন্তরীণ, আন্তর্জাতিকসহ যে কোন ধরনের ষড়যন্ত্র হবে আমরা আপনাদের সকলকে সাথে নিয়ে সেই ষড়যন্ত্রকে রুখে দিতে চাই।
সমাবেশে লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অবঃ) মানেশ দেওয়ান বলেন, আমরা ছাত্র-জনতার পাশে দাঁড়িয়ে কারফিউ উপেক্ষা করেছি। সেদিনের মতো যেকোনো প্রয়োজনে আমরা দেশের জন্য রাজপথে থাকবো। যেকোনো পরিস্থিতিতে দেশের পাশে থাকব।
সমতার ভিত্তিতে সম্পর্ক স্থাপনের আহŸান জানিয়ে তারা বলেন, ভারতের সঙ্গে নতজানু পররাষ্ট্রনীতি নয়। সম্পর্ক হতে হবে সমতার ভিত্তিতে।
সমাবেশে বিগত সরকারের সময় ভারতের সঙ্গে করা চুক্তিগুলো প্রকাশের দাবি জানানো হয়।
ভারতের নরেন্দ্র মোদি সরকারকে ‘বার্তা দিয়ে’ তিনি বলেন, মোদিজি, অমিতজি এবং রাজনাথজি, আপনারা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর যেটা দেখেছেন, ’৭২ সালের সেই সেনাবাহিনী এখন আর নাই। আমরা এখন যে কোনো শত্র“ মোকাবেলায় প্রস্তুত। আপনারা আর আস্ফালন তুলবেন না, ভয় দেখাবেন না। আমরা শুধু সশস্ত্র বাহিনী নই, ১৭ কোটি জনতা আছে আমাদের সাথে আপনাদের সীমান্তেই রুখে দিতে।
সমাবেশ সঞ্চালনার সময় সরকারের উদ্দেশ্যে অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল লুৎফুল হক বলেন, ভারতের সঙ্গে আমাদের সকল জাতীয় চুক্তিগুলো তুলে ধরুন। যেসব ভারতীয় বাংলাদেশে আছে, সেগুলো পুনর্বিবেচনা করে প্রয়োজন না থাকলে তাদের ফেরত পাঠানো হোক। যেসব ভারতীয় মিডিয়া সরকারের বিরুদ্ধে বিষোদগার করছে দেশে সেগুলো বাতিল করা হোক।
সমাবেশ শেষে বিভিন্ন বাহিনীর সাবেক সদস্যসহ পাঁচ শতাধিক মানুষের অংশগ্রহণে একটি মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। মিছিলটি রাওয়া ক্লাব থেকে শুরু হয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় সংলগ্ন ক্রসিং হয়ে ঘুরে আবার রাওয়া ক্লাবে এসে শেষ হয়।