খুলনা | শুক্রবার | ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪ | ১৩ পৌষ ১৪৩১

এলাকায় নানা প্রশ্ন

মোংলায় জখমী ব্যক্তির মৃত্যুর পর ময়নাতদন্ত ছাড়াই তড়িঘড়ি দাফন

মোংলা প্রতিনিধি |
০৫:১৫ এ.এম | ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪


মোংলা শহরতলীর মনপুরা ব্রিজ সংলগ্ন বঙ্গবন্ধু সড়ক এলাকায় জমিজমা সংক্রান্ত পূর্ব বিরোধকে কেন্দ্র করে প্রতিপক্ষের হামলায় আহত এক ব্যক্তির মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে পরস্পর বিরোধী বক্তব্য পাওয়া গেছে। অভিযোগ উঠেছে, জমির সীমানা দ্ব›দ্বকে পুঁজি করে সামান্য মারামারির ঘটনায় পরিকল্পিতভাবে নিজেদের রান্না ঘরে আগুন দিয়ে প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে থানায় প্রতিবেশীদের নামে মামলা দিয়ে হয়রানী করা হচ্ছে। 
এদিকে বাড়ির সীমানা নির্ধারণকে কেন্দ্র করে অগ্নিকান্ড ও মারামারির এ ঘটনায় আহত মোঃ লিয়াকত মাঝির (৬১) মৃত্যুর পর লাশ পুলিশকে অবহিত না করে ময়নাতদন্ত ছাড়াই তড়িঘড়ি করে দাফন দেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে এলাকাবাসীর মধ্যে নানা প্রশ্ন ও রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে। তবে পুলিশ মৃত্যুর কারণ উদ্ঘাটনে লাশ উত্তোলন করে ময়নাতদন্তের জন্য আদালতে অনুমতি চেয়ে আবেদন জানিয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত এ ব্যাপারে আদালেেতর কোন নির্দেশনা পুলিশের হাতে এসে পৌঁছায়নি। এ নিয়ে উভয় গ্র“পের মধ্যে এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। 
এলাকাবাসী ও ভুক্তভোগীদের সূত্রে জানা গেছে, মোংলা পৌরসভাধীন ৭নং ওয়ার্ডের মনপুরা ব্রিজ সংলগ্ন বঙ্গবন্ধু সড়ক এলাকায় মোঃ সেলিম হোসেন মাঝি গংদের সাথে প্রতিবেশী মোঃ আবুল কালাম হাওলাদারের সাথে দীর্ঘ প্রায় ১৫/২০ বছর ধরে জমির সীমানা নিয়ে বিরোধ চলে আসছিল। বিষয়টি স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও এলাকাবাসী মিলে বেশ কয়েকবার সমাধান করা হলেও সেলিম মাঝি গং তার সহযোগীরা তা না মানায় বিরোধ রয়ে যায়। এই বিরোধের জের ধরে গত ২৮ নভেম্বর সকালে দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। এতে উভয়পক্ষের বেশ কয়েকজন আহত হয়। 
অভিযোগ উঠেছে মারামারির ৩ ঘন্টার পর সেলিম হোসেন মাঝি গং পরিকল্পিতভাবে নিজেদের রান্না ঘরে আগুন দিয়ে প্রতিপক্ষ প্রতিবেশী কালাম হাওলাদার, এমাদুল হাওলাদার, মাসুম হাওলাদার, মেহেদী হাসান, ইমান হোসেন, মোঃ সালাউদ্দিনসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে মোংলা থানায় মারামারি ও ঘরে অগ্নিকান্ডের ধারায় মামলা দায়ের করেন। যদিও সেলিম মাঝির স্বজনেরা দাবি করেছেন, যা ঘটনা ঘটেছে সে অনুযায়ীই তারা থানায় মামলা করেছেন। অপর দিকে একই ঘটনায় প্রতিবেশী মোঃ মেহেদী হাসান হাওলাদার বাদী হয়ে প্রতিপক্ষ মোঃ সেলিম হোসেন মাঝি গংদের বিরুদ্ধে বসত ঘরে হামলা ভাঙচুর ও মারপিটসহ সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের ঘটনায় মোংলা থানায় মামলা দায়েরের জন্য অভিযোগ দিলেও পুলিশ তা মামলা হিসেবে নথিভুক্ত করেনি বলে উল্টো অভিযোগ করে মোঃ আবুল কালাম হাওলাদার বলেন, প্রতিপক্ষ তাদের জব্দ করতে নিজেরা হামলা ও অগ্নিকান্ডের নাটক সাজিয়ে তাদের নামে থানায় মিথ্যা মামলা দায়ের করেছেন।
এদিকে মারামারি ঘটনার তিন দিন পর আহত মোঃ লিয়াকত মাঝির শারীরিক অসুস্থতা দেখা দিলে প্রথমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়া হলে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য গত ১ ডিসেম্বর সকালে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। খুলনা হাসপাতালে পৌঁছানোর কিছুক্ষণ পর তিনি মৃত্যুবরণ করলে স্বজনেরা তার লাশ মোংলায় নিয়ে আসে। পরে পুলিশকে না জানিয়ে তড়িঘড়ি করে ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ দাফন করে ছেলেসহ তার স্বজনরা।
লিয়াকত মাঝির মৃত্যুকে কেন্দ্র করে এলাকায় নানা গুঞ্জন চলছে। কেউ কেউ বলছেন, অন্য কোন কারণে লিয়াকত মারা গেলে মৃতের স্বজনেরা পুলিশকে না জানিয়ে ময়নাতদন্ত ছাড়াই তড়িঘড়ি করে লাশ দাফন সম্পন্ন করে। তবে এখন প্রতিপক্ষ প্রতিবেশীদের ফাঁসাতে আগে হওয়া মামলাটিকে মৃতের স্বজনরা হত্যা মামলায় রুপান্তরিত করার নানা পাঁয়তারা চালাচ্ছে।
এ ব্যাপারে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মোংলা থানার উপ-পুলিশ পরিদর্শক (এসআই) মোঃ আসাদুজ্জামান বলেন, লাশ দাফনের পর পুলিশ লিয়াকত মাঝির মৃত্যুর খবর পায়। এখন কি কারণে তিনি মারা গেছেন সেজন্য কবর থেকে লাশ উত্তোলন করে ময়না তদন্ত করার জন্য আদালতের অনুমতি চাওয়া হয়েছে। এখন পর্যন্ত এ ব্যাপারে আদালতের কোন নির্দেশনা পুলিশের হাতে পৌঁছায়নি। তবে ময়না তদন্ত রিপোর্ট হাতে পেলে বোঝা যাবে কি কারণে লিয়াকত মাঝি মারা গেছেন।থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ আনিসুর রহমান বলেন, দুইপক্ষের মারামারির ঘটনায় সেলিম মাঝি থানায় অভিযোগ করলে মামলা হিসেবে নেয়া হয়েছে। আর অপরপক্ষের অভিযোগ আমার কাছে না আসায় মামলা নেয়া হয়নি। তবে সেলিম মাঝির মৃত্যুর বিষয়ে আদালতে আবেদন করা হয়েছে। নির্দেশনা পেলে সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।