খুলনা | শুক্রবার | ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪ | ১৩ পৌষ ১৪৩১

কপিলমুনি মুক্ত দিবস আজ

কপিলমুনি (পাইকগাছা) প্রতিনিধি |
০৫:১৬ এ.এম | ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪


আজ ৯ ডিসেম্বর কপিলমুনি মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এ দিনে ১৫৫ জন রাজাকারকে গণআদালতের রায়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। অবসান ঘটে পাকিস্তানী হানাদার রাজাকারদের নির্মম অত্যাচার নিপীড়ন-নির্যাতনসহ অনৈতিক কর্মকান্ডের লোমহর্ষক ঘটনার।
কপিলমুনির স্থপতি স্বর্গীয় রায়সাহেব বিনোদ বিহারী সাধুর বাসভবন রাজাকাররা তাদের সুরক্ষিত দুর্গ হিসেবে বেছে নিয়েছিল। ৭১ সালের মুক্তি যুদ্ধের সময় বাড়িটি দীর্ঘ নয় মাস ব্যবহার করেছিল পাকিস্তানী দোসর রাজাকাররা। সেখানে খুন, গুম, ধর্ষণসহ অনেক অনৈতিক ঘটনার অবতারণা করা হয়। আর সেসব দিনের স্মৃতি চিহ্ন নিয়ে ইতিহাসের সাক্ষ্য বহন করে চলেছে দ্বিতল বিশিষ্ট বাড়িটি। বাড়ির অভ্যন্তরে এমন কোন অপরাধ নেই যা তারা করেনি। কথিত আছে কপিলমুনিসহ পার্শ্ববর্তী এলাকা থেকে সংখ্যালঘু ও রাজাকারদের সাথে বৈরি সম্পর্কের লোকদের অর্থাৎ মুক্তিকামী মানুষদেরকে ধরে এনে কপোতাক্ষ নদীর পাড়ে কৃষ্ণচ‚ড়া গাছের নিচে নির্মম ভাবে হত্যাযজ্ঞ চালাতো পাক হানাদাররা। প্রতিদিন এই বধ্যভ‚মিতে মানুষের লাশ কুকুর, কাক, শকুনে ছিঁড়ে ছি^ড়ে খাওয়ার দৃশ্য ছিল খুবই লোমহর্ষক ও মর্মপীড়াদায়ক। 
জানা গেছে, ১৯৭১ সালের এই দিনে ৪৮ ঘন্টা রক্ষক্ষয়ী যুদ্ধ শেষে ১৫৫ রাজাকারের আত্মসমপনের মধ্য দিয়ে দক্ষিণ খুলনার সর্ব বৃহৎ শত্র“ ঘাঁটির পতন ঘটে। ঐ দিন উপস্থিত হাজার হাজার জনতার রায়ে আত্মসমর্পণকৃতদের মধ্যে ১৫১ জন রাজাকারকে সারিবদ্ধ ভাবে দাঁড়িয়ে প্রকাশ্যে গুলি করে রায় কার্যকর করা হয়। এর আগে ১১ নভেম্বর ক্যাপ্টেন আরেফিনের নেতৃত্বে একদল মুক্তি বাহিনী প্রথমে কপিলমুনি রাজাকারদের ঘাঁটিতে আঘাত করে। কিন্তু সুরক্ষিত দুর্গ আর রাজাকারদের শক্ত অবস্থানের কারনে সেই যুদ্ধে কোন সফলতা পায়নি। পরবর্তিতে পুনরায় পরিকল্পনা করে দক্ষিণ খুলনার বিভিন্ন এলাকার কমান্ডিং অফিসাররা উপজেলার রাড়–লীর বাঁকা ক্যাম্পে এসে সকলে একত্রিত হন এবং কপিলমুনিকে রাজাকার মুক্ত করতে পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। ঐ সময় পরিকল্পনায় অংশ গ্রহণ করেন নৌ-কমান্ডার গাজী রহমত উল­াহ দাদু, শেখ কামরুজ্জামান টুকু, স ম বাবর আলী, গাজী রফিক, ইউনুস আলী ইনু, শেখ শাহাদাত হোসেন বাচ্চু, মোড়ল আব্দুস সালাম, আবুল কালাম আজাদসহ অনেকে কপিলমুনি মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দেন। মুক্তিযোদ্ধারা ৫টি ভাগে বিভক্ত হয়ে অবশেষে ৭ ডিসেম্বর রাতে চারিদিক থেকে কপিলমুনি শত্র“ ঘাঁটি আক্রমণ করে। দীর্ঘ যুদ্ধ শেষে ৯ ডিসেম্বর বেলা ১১টার দিকে অস্ত্র ফেলে সাদা পতাকা উড়িয়ে ১৫৫ জন রাজাকার পাকিস্তানি দোসররা আত্মসমর্পণ করে। সাথে সাথে পতন ঘটে খুলনাঞ্চলের বৃহত্তর শত্র“ ঘাঁটির। এই যুদ্ধে খুলনার আইসগাতির আনোয়ার ও সাতক্ষীরার আশাশুনির গলডাঙ্গা গ্রামের গাজী আনসার আলী নামে দুই মুক্তিযোদ্ধা শহিদ হন। শত্র“দের বন্দি করে নিয়ে আসা হয় কপিলমুনি সহচরী বিদ্যামন্দির ঐতিহাসিক ময়দানে। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে, এলাকার হাজার হাজার জনতার ঢল নামে ময়দানে। জনগণের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তাৎক্ষণিক যুদ্ধকালীন কমান্ডাররা সিদ্ধান্ত নিয়ে রাজাকারদের প্রকাশ্যে গুলি করে মৃত্যুদণ্ড দিয়ে জনতার রায় কার্যকর করা হয়। শেষ হয় যুদ্ধ। হানাদার মুক্ত হয় কপিলমুনি।