খুলনা | বুধবার | ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪ | ৪ পৌষ ১৪৩১

আশাশুনিতে শিশু রাহি হত্যা : আসামি জনির আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি

নিজস্ব প্রতিবেদক, সাতক্ষীরা |
১২:৩০ এ.এম | ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪


সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার আগরদাড়ি গ্রামের দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্রী শিশু নুসরাত জাহান রাহি হত্যা মামলার প্রধান আসামি রেজাউল কবীর জনি ও প্রধান সাক্ষী অজয় পাইন আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। সোমবার বিকেলে তারা সাতক্ষীরার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম মোঃ মহিদুল হাসানের কাছে এ জবানবন্দি দেয়।
আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি প্রদানকারি আসামি রেজাউল কবীর জনি (২২) আশাশুনি উপজেলার কুল্যা ইউনিয়নের আগরদাড়ি গ্রামের আব্দুর রাজ্জাক সরদারের ছেলে। একই ধারায় অপর জবানবন্দি প্রদানকারি সাক্ষী অজয় পাইন একই উপজেলার বুধহাটা গ্রামের সুকুমার পাইনের ছেলে ও বুধহাটা বাজারের পলাশ জুয়েলার্সের স্বত্বাধিকারী।
নিহত শিশু নুসরাত জাহান রাহি (৯) উপজেলার আগরদাড়ি গ্রামের রবিউল ইসলাম রুবেল এর মেয়ে ও আগরদাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্রী। সম্পর্কে জনি রাহির প্রতিবেশী চাচা। মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা আশাশুনি থানার উপ-পরিদর্শক মোঃ ফয়সাল আহম্মেদ জানান, জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম মোঃ মহিদুল হাসানের কাছে নিজেকে মাদকাসক্ত হয়ে পড়ার কথা স্বীকার করে কানের দুল কেড়ে নেওয়ার ঘটনা বাবা ও মাকে জানিয়ে দেওয়ার কথা বলায় রাহিকে তার সোয়েটার ছিঁড়ে হাত-পা বেঁধে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেছে বলে উলে­খ করেছে। সে ওই দুল বুধহাটার অজয় পাইনের কাছে নয় হাজার টাকায় বিক্রি করেছিল বলে স্বীকার করে। জবানবন্দি শেষে জনিকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। অজয় বাইনকে নিজ জিম্মায় ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। 
একই ভাবে অজয় বাইন তার জবানবন্দিতে জানিয়েছে ৫ মাস আগে জনি তার মায়ের সাড়ে চার ভরি সোনার দুল তার কাছে ২০ হাজার টাকায় বিক্রি করেছিল। সেকারণে গত শনিবার দুপুর দেড়টার দিকে দুই আনা ওজনের এক জোড়া ছোট দুল বিক্রি করতে এলে তার কাছে জানতে চাইলে সে বলে, মায়ের দুল বিক্রি করে পরে সে ছোট আকারে তৈরি করে দিয়েছিল। সেই দুল সে বিক্রি করতে এসেছে। একপর্যায়ে ওই দুলজোড়া বাবদ জনি নয় হাজার টাকা নিয়ে যায়।
সাতক্ষীরা পুলিশ সুপার মনিরুল ইসলাম জানান, জনি ঢাকায় একটি কোম্পানিতে চাকুরি করতো। নয় মাস আগে সে বিয়ে করে। বিয়ের পরে মাস চারেক আগে সে চাকুরি হারায়। এতে ব্যাপক অর্থনৈতিক সংকটে পড়ে জনি। পরে গ্রামের বাড়িতে এসে সে মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে। মাদকের টাকা জোগাড় করতে সে রাহির কানে থাকা সোনার দুল ছিনিয়ে নেওয়ার চিন্তা করে। শনিবার (১৪ ডিসেম্বর) সকালে রাহি তার বান্ধবী মিতা বসুর সাথে খেলা করছিল। জনি শিশু রাহিকে খাবার কিনে দেওয়ার কথা বলে বান্ধবীর বাড়ি থেকে পার্শ্ববর্তী হলুদ ক্ষেতে নিয়ে যায়। সেখানে জোরপূর্বক তার কানের সোনার দুল খুলে নেয়। এ সময় রাহি বিষয়টি তার বাবা ও মাকে জানিয়ে দেওয়ার কথা বললে জনি তার গায়ের সোয়েটার ছিঁড়ে হাত ও পা বেঁধে শ্বাসরোধ করে রাহিকে হত্যা করে। পরে তার লাশ পুকুরে ফেলে দেয়। তিনি আরো বলেন, শিশু রাহি হত্যার ঘটনায় রেজাউল কবীর জনিকে রোববার (১৫ ডিসেম্বর) বিকেলে তার গ্রাম থেকে গ্রেফতার করা হয়। সোমবার বিকেলে জনি আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে। তাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারের প্রেরণ করা হয়েছে।
এদিকে স্কুলছাত্রী রাহিকে অপহরণ করে হত্যার ঘটনায় গ্রেফতারকৃত ঘাতক জনির দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন করেছে এলাকাবাসী। ছাত্র অধিকার পরিষদ সাতক্ষীরা জেলা শাখা ও কুল­া ইউনিয়নবাসীর উদ্যোগে মঙ্গলবার দুপুরে সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়। মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন জেলা ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি আল ইমরান, সাধারণ সম্পাদক শারাফাত হোসেন, নিহতের পিতা রবিউল ইসলাম, মাতা সাবিনা খাতুন, সুজন হোসেন প্রমুখ। সভায় বক্তারা দ্রুত মামলা নিষ্পত্তি করে আসামির ফাঁসির দাবি জানান।