খুলনা | বৃহস্পতিবার | ০৩ জুলাই ২০২৫ | ১৯ আষাঢ় ১৪৩২

জলাবদ্ধতা নিরসনে নাগরিক মন্তব্য

অলকেশ মন্ডল |
০১:১৮ এ.এম | ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২১

জলাবদ্ধতা বড় বড় শহরগুলির এখন নৈমিত্তিক সমস্যা। একটু বেশী বৃষ্টি হলেই রাজধানী ঢাকা, বন্দর নগরী চট্টগ্রাম-এর অনেক এলাকাতেই দেখা দেয় এই সমস্যা। শিল্প নগরী খুলনাও এর ব্যতিক্রম নয়। একটু বৃষ্টি হলেই শহরের প্রাণকেন্দ্র রয়েল মোড়সহ নগরীর অনেক রাস্তা পানিতে প্লাবিত হয়। দেশের তৃতীয় বৃহত্তম নগরী খুলনা সিটি কর্পোরেশনের আয়তন ১৫০.৬ বর্গকিলোমিটার। নতুন তিনটি থানা মেট্টোপলিটনের অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় কর্পোরেশনের প্রসারমান প্রক্রিয়া অব্যাহত আছে। ১৯৮৪ সালে এটি মিউসিপ্যাল কর্পোরেশন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৯০ সালে এই মহানগরী মিউনিসিপ্যালিটি থেকে সিটি কর্পোরেশনে উন্নীত হয়। কর্পোরেশনের মোট ৩১টি ওয়ার্ড রয়েছে। খুলনা সিটি কর্পোরেশনকে একটি বিশ্বমানের মহানগরীতে উন্নীত করার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বর্তমানে সিটি কর্পোরেশনের মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক। এ লক্ষ্যে ৮২৩ কোটি ৭৯ লক্ষ টাকা ব্যয়ে “জলাবদ্ধতা দূরীকরণে ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন প্রকল্প”, ৬০৮ কোটি টাকা ব্যয়ে সিটি কর্পোরেশনের গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা মেরামত ও উন্নয়ন প্রকল্প” এবং তৃতীয় দফায় “খুলনার বর্জ্য ব্যবস্থাপনা উন্নয়ন প্রকল্পে’ আরও ৩৩৮ কোটি টাকা উন্নয়ন ব্যয় বরাদ্দ হয়েছে। এতে খুলনা সিটির কতোটা উন্নয়ন ঘটতে পারে নগরবাসী তা প্রত্যক্ষ করছে। ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়নে এ প্রকল্পের বরাদ্দকৃত ৮২৩ কোটি ৭৯ লক্ষ টাকা দ্বারা মৃত প্রায় ময়ূর নদীসহ ৯টি খাল খনন ও পাড় বাঁধাই। ৬২.৯৪ কিঃমিঃ প্রাইমারী ড্রেন এবং ১২৯.৪২ কিলোমিটার সেকেন্ডারী ড্রেন, স্লুইচ গেট, পাম্প হাউজ, ব্রীজ নির্মাণসহ বহু কাজ চলমান রয়েছে। যা আমরা সবাই দেখতে পাচ্ছি। তবে নগরবাসীর দুর্ভোগ কমাতে কাজের গতি বাড়িয়ে নির্ধারিত সময়ে প্রকল্প শেষ করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করছি।
এত বড় বড় মেগা প্রকল্প গ্রহণের পরও মহানগরীর জলাবদ্ধতা নিরসন কি সম্ভব? এ প্রশ্ন থেকেই যায়। গ্রীন হাউজ ইফেক্টের ফলে বর্তমানে সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে যাওয়ায় অভ্যন্তরীণ নদীগুলিতে লবণ পানির জোয়ারের উচ্চতা অনেক বেড়েছে। এক সময় যেখানে জোয়ারের সময় লবণ পানি খুলনা পর্যন্ত পৌঁছাতো না সেখানে লবণ পানি জোয়ারে যশোরকেও ছাড়িয়ে যাচ্ছে। শহরের অনেক রাস্তা জোয়ারের পানিতে নিয়মিতভাবে প্লাবিত হতে দেখা যায়। নদীতে পানির উচ্চতা এখন এতটা যে যদি পানি অবাধে মহানগরীতে প্রবেশের সুযোগ পেত তাহলে জোয়ারে সম্পূর্ণ শহর প্লাবিত হত। বর্তমানে নগরীর ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটায় ড্রেনে পানির গতি সচল হবে। এ কারণে পানি যাতে নগরীতে অবাধে প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য নদী ও ড্রেনের সংযোগ স্থলে স্লুইচ গেট নির্মাণ করে সেখানে একমুখো ভালব/পাটার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। যার ফলে পানি শুধু শহর থেকে নদীতে যেতে পারবে কিন্তু নদী থেকে শহরে প্রবেশ করতে পারবে না। নদীর সাথে এক্সিট পয়েন্ট গুলিতে শক্তিশালী পাম্প বসানোর ব্যবস্থা করা হলে আপদকালীন সময়ে দ্রুত মহানগরীর পানি নিষ্কাশন সহজ হবে। জোয়ারের সময় যেহেতু নদীর পানির উচ্চতা বেশী থাকে তাই এই সময়ে বৃষ্টি হলে সে পানি নদীতে পড়বে না। ফলে নগরীর নিচু এলাকা, বাড়ী, রাস্তা জলাবদ্ধতা থেকে মুক্ত রাখতে শক্তিশালী পাম্পগুলি তখন বিরাট ভূমিকা পালন করতে পারে। সিটি কর্পোরেশনের পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা যেমন প্রতিদিন বাড়ী বাড়ী যেয়ে ময়লা সংগ্রহ করে শহরকে পরিচ্ছন্ন রাখতে ভূমিকা রাখে তেমনি ড্রেনেজ ব্যবস্থার রক্ষণাবেক্ষণের জন্য সার্বক্ষণিকভাবে নিযুক্ত জনবল থাকবে, যারা আইনতভাবে জলাবদ্ধতার জন্য দায়ী থাকবেন। তাদের অবশ্যই জোয়ার-ভাটা, ভরাকটাল-মরাকটাল, অমাবশ্যা-পূর্ণিমা ইত্যাদি জ্ঞান সম্পন্ন হতে হবে। এই সময়গুলিতে আকাশে মেঘের অবস্থা বা নি¤œচাপের পূর্বাভাসে তাদের করণীয় তারা যেন উপলব্ধি করতে পারেন।
আমরা নিয়মিতভাবে দেখছি জোয়ারের পানিতে শহরের অনেক রাস্তা প্লাবিত হচ্ছে। শহরে জোয়ারের পানি ঢুকানোর উপকারিতা আমার বোধগম্য নয়, কিন্তু এর থেকে কিছু অপকারিতা আমি উপলব্ধি করতে পারি। নিয়মিতভাবে রাস্তা-ঘাট পানিতে প্লাবিত হতে থাকলে রাস্তাগুলো দ্রুত নষ্ট হওয়ায় সম্ভাবনা দেখা দেয়। লোকজনের যাতায়াতের সমস্যা হয়, নিচু বাড়ীগুলিতে পানি ঢুকে পড়ে। তাছাড়া বিভিন্ন স্থানে ও অব্যবহৃত পড়ে থাকা বিভিন্ন জিনিসে পানি জমে মশার বংশ বিস্তার সহজতর হয়। ডেঙ্গু মশা ও অন্যান্য মশা বাহিত রোগ জীবাণু বৃদ্ধি সহজ হয়। ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়নের ফলে যেটা লক্ষ্য করা যাচ্ছে ড্রেন ও রাস্তার উচ্চতা অনেক অনেক বেড়েছে। পুরানো বাড়ীগুলো রাস্তার তুলনায় অনেক নিচু হয়েছে। এ অবস্থায় যদি আমরা ভেবে নেই যে রাস্তায় পানি উঠছে না মনে জলাবদ্ধতা নেই তবে ভুল ভাবা হবে। কারণ জোয়ারের পানি তখন নিচু জায়গা ও বাড়ীগুলোকে ডোবাবে। এজন্য সংস্কার পরবর্তী সময়ে ড্রেনের পানি সার্বক্ষণিকভাবে তলানীতে রাখা এবং পলিথিন ব্যাগ আইনগতভাবে নিষিদ্ধ করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করি। নগরের একজন নাগরিক হিসেবে জলাবদ্ধতা মুক্ত আধুনিক নগরী আমাদের প্রত্যাশা। 
লেখক : প্রভাষক, তেরখাদা চিত্রা মহিলা ডিগ্রি কলেজ।