খুলনা | রবিবার | ০৫ জানুয়ারী ২০২৫ | ২১ পৌষ ১৪৩১

চোখের দেখায় জয়সওয়ালকে আউট দিলেন সৈকত, আলোচনার ঝড়

ক্রীড়া প্রতিবেদক |
০২:২৩ পি.এম | ৩০ ডিসেম্বর ২০২৪


স্নিকোগ্রাফে ধরা পড়েনি বড় কিছু। কিন্তু দিক বদল ছিল স্পষ্ট। বাংলাদেশি আম্পায়ার শরফুদ্দৌলা ইবনে শহিদ সৈকত ভরসা রাখলেন চোখের ওপর। প্রযুক্তির ছোঁয়া ক্রিকেটে এসেছে সিদ্ধান্তকে নির্ভুল করতে। কিন্তু জয়সওয়ালের আউটের বেলায় নিজের চোখকেই বিশ্বাস করেছেন বাংলাদেশি আম্পায়ার। অন-ফিল্ড আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত বদল হলো। আউট হলেন ভারতীয় ব্যাটার।

এই আউটের পর থেকেই ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছেন শরফুদ্দৌলা সৈকত। টুইটারে বেশ বড় রকমের সমালোচনা চলছে বাংলাদেশি আম্পায়ারকে নিয়ে।

ঘটনার সূত্রপাত প্যাট কামিন্সের ৭১তম ওভারে। টেস্ট জিততে অস্ট্রেলিয়ার দরকার ৪ উইকেট। ভারতের ২০০ রান। এমন সময় বাউন্সার বলে ফাইন লেগে খেলতে চেয়েছিলেন জয়সওয়াল। তবে বল জমা পড়ে  উইকেটকিপার অ্যালেক্স ক্যারির কাছে। ক্যাচের আবেদন করে অস্ট্রেলিয়া। মাঠের আম্পায়ার দেন আউট দেননি। কামিন্স রিভিউ নিলে সিদ্ধান্ত যায় তৃতীয় আম্পায়ার শরফুদ্দৌলার কাছে।

রিভিউ নেওয়ার রিপ্লেতে দেখা যায় বল ব্যাট ও গ্লাভস ছুঁয়েছে। শরফুদ্দৌলাও সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় জানান, তিনি স্পষ্ট করেই দেখতে পেয়েছেন বলের গতিপথ পরিবর্তন হয়েছে। তবে আরও নিশ্চিত হওয়ার জন্য তিনি স্নিকোর সাহায্য চান। কিন্তু স্নিকোগ্রাফে পরিবর্তন আসেনি। তাতে অবশ্য বাংলাদেশি আম্পায়ারের মন গলেনি। ঠিকই দিলেন আউটের সিদ্ধান্ত।

মাঠেই আম্পায়ারদের ওপর ক্ষোভ ঝেড়েছেন জয়সোয়াল। উইকেট ছাড়তে ছাড়তেও কিছু একটা বলেছেন তিনি। ধারাভাষ্যকারদের অবশ্য পাশে পেয়েছেন শরফুদ্দৌলা। হার্শা ভোগলে ও মার্ক নিকোলাসরা এটাকে সাহসী ও ন্যায্য সিদ্ধান্তই বলেছেন। এমনকি অস্ট্রেলিয়ার চ্যানেল সেভেনে আউটের সিদ্ধান্তের পক্ষেই মত দিয়েছেন অভিজ্ঞ আম্পায়ার সাইমন টোফেল।

জয়সওয়ালের সেই আউটের পর ভারতীয় ইনিংস শেষ হয়েছে তাসের ঘরের মতোই। আকাশ দীপ, জাসপ্রীত বুমরাহরা বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। দিনের খেলা বাকি ছিল ১০ ওভার। তখনই শেষ হয়েছে ভারতের ইনিংস। জয়সওয়ালের পর আকাশ দীপের আউটেও হস্তক্ষেপ করতে হয়েছে সৈকতকে। অন-ফিল্ড আম্পায়ার আউট না দিলেও সৈকতের হাত ঘুরে ঠিকই প্যাভিলিয়নে যেতে হয়েছিল ভারতীয় বোলারকে।

তবে এমন সিদ্ধান্তের পর ভারতীয় নেটিজেনদের তোপের মুখে পড়েছেন বাংলাদেশের আম্পায়ার। অনেকেই তাকে পরের ম্যাচে দেখতে চান না বলে মন্তব্য করেছেন। কারো কারো মতে, অস্ট্রেলিয়ার হয়ে পক্ষপাতী এক সিদ্ধান্ত দিয়েছেন শরফুদ্দৌলা ইবনে শহিদ সৈকত।

যদিও, ম্যাচ শেষে ব্রডকাস্টিং স্টার স্পোর্টসে কথা বলতে গিয়ে সাবেক ক্রিকেটার ও কোচ রবি শাস্ত্রীও মত দিয়েছেন আউটের পক্ষে।  রবি শাস্ত্রী মত দিয়েছেন, ‘তৃতীয় আম্পায়ার চাইলে স্নিকো না-ও মানতে পারেন। সেই ক্ষমতা তাঁর আছে। তিনি দেখছেন বল গ্লাভসে লাগার পর দিক পরিবর্তন করেছে। তাই তিনি আউট দিয়েছেন। আমার মনে হয় সঠিক সিদ্ধান্ত।’

রিকি পন্টিং বলেন, ‘তারা এটা নিয়ে যা খুশি তাইই বলতে পারে। স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে ওটা (বল) তার হাতে লেগেছে। আর আমি তখনই খেয়াল করেছি জয়সওয়াল হাঁটতে শুরু করেছে। স্নিকো শতভাগ সঠিক বলে প্রমাণিত না, কিন্তু আম্পায়ার বলের দিক পরিবর্তন আমলে নিয়েছেন, আর ফ্রেম ঠিক সে সময় থামাতে পেরেছেন যখন বল গ্লাভসে লেগেছে।’

সাবেক আম্পায়ার সাইমন টফেলও মত দিয়েছেন বাংলাদেশি আম্পায়ারের পক্ষে, ‘শেষ পর্যন্ত থার্ড আম্পায়ার সঠিক সিদ্ধান্তই দিয়েছেন। যখন এখন আম্পায়ার স্পষ্টভাবে ব্যাটের স্পর্শে বলের দিক পরিবর্তন দেখতে পাবেন, তখন আর বেশি কিছু পরখ করার দরকার নেই। অন্যান্য প্রযুক্তি ব্যবহার করা যেতে পারে কেবল সিদ্ধান্ত প্রমাণের জন্য।’

বাংলাদেশি সাবেক ক্রিকেটার শাহরিয়ার নাফিসও পক্ষ নিয়েছেন শরফুদ্দৌলা ইবনে সৈকতের। নিজের ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, 'আজ মেলবোর্ন টেস্ট ম্যাচে ক্রিটিকাল মুহূর্তে নিঃসন্দেহে সৈকত ভাই নিখুঁত এবং সাহসী সিদ্ধান্ত দিয়েছেন।'