খুলনা | বৃহস্পতিবার | ০৯ জানুয়ারী ২০২৫ | ২৫ পৌষ ১৪৩১

ডিসেম্বরে কিছুটা কমেছে, তবু দুই অংকের ঘরে মূল্যস্ফীতি

খবর প্রতিবেদন |
০১:৩৭ পি.এম | ০৬ জানুয়ারী ২০২৫


কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে শুরু হওয়া ক্ষমতার পালাবদলে রাজনৈতিক অস্থিরতা ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের স্থবিরতার চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি প্রায় তলানিতে নেমেছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে জিডিপি প্রবৃদ্ধি কমে ১ দশমিক ৮১ শতাংশে নেমেছে। আগের অর্থবছরের একই প্রান্তিকে ৬ দশমিক ০৪ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি হয়েছিল।
তবে এরপরও অসহনীয় মাত্রার মূল্যস্ফীতি নিয়ে বছর শুরু করেছে দেশের অর্থনীতি। খাদ্য ও অন্যান্য পণ্যের মূল্যস্ফীতি উভয়টি এখনো দুই অংকের ঘরে রয়েছে। আগামী জুনের মধ্যে মূল্যস্ফীতি সাত শতাংশে নামিয়ে আনার যে ঘোষণা বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর দিয়েছেন, সেটা কতটা কার্যকর হবে তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।
সোমবার বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসের জিডিপির তথ্য প্রকাশ করেছে। বিবিএসের তথ্যে দেখা যাচ্ছে, গত জানুয়ারি মাস থেকে টানা তিন প্রান্তিকেই জিডিপির প্রবৃদ্ধি ধারাবাহিকভাবে কমেছে।
কৃষি, শিল্প ও সেবাÑএই তিন খাতের উপাত্ত নিয়ে জিডিপি প্রকাশ করা হয়। গত জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে সবচেয়ে কম প্রবৃদ্ধি হয়েছে কৃষি খাতে। এই খাতে প্রবৃদ্ধি ছিল মাত্র দশমিক ১৬ শতাংশ। এর মানে, কৃষি খাতে নামমাত্র প্রবৃদ্ধি হয়েছে।
অন্যদিকে, সেবা খাতে প্রবৃদ্ধি ছিল মাত্র ১ দশমিক ৫৪ শতাংশ। আর প্রথম প্রান্তিকে শিল্প খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২ দশমিক ১৩ শতাংশ।
বিবিএসের তথ্য অনুসারে, জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে দেশের ভেতরে স্থিরমূল্যে ৮ লাখ ৪ হাজার ৯৪২ কোটি টাকার মূল্য সংযোজন হয়, যা গত ৪ প্রান্তিকের মধ্যে সর্বনিম্ন। আর ১১টি উপখাতের মধ্যে খনিজ ও পাথর উত্তোলন খাতে সবচেয়ে বেশি ১২ দশমিক ৬৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। আর সবচেয়ে বেশি ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি হয়েছে আর্থিক ও বিমা খাতে।
জুলাই-আগস্টে চাকুরিতে কোটাবিরোধী ও পরবর্তী সময় আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের লক্ষ্যে যে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মধ্যে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের গতি কমে যায়। এরপর অন্তর্র্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ও ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধ মামলা ও সম্পদ জব্দের মতো পদক্ষেপের ফলে শিল্পে উৎপাদন মারাত্মক ভাবে বাধাগ্রস্ত হয়েছে।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) গত মাসে বলেছে, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বেশ শ্লথ হয়ে পড়েছে। এর ফলে চলতি অর্থবছর শেষে প্রবৃদ্ধি ৩ দশমিক ৮ শতাংশে নেমে আসতে পারে। যদিও পরের অর্থাৎ ২০২৫-২৬ অর্থবছরে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ৭ শতাংশে উন্নীত হবে পূর্বাভাস দিয়েছে সংস্থাটি।
বিবিএস মূল্যস্ফীতির যে হালনাগাদ তথ্য দিয়েছে, সে অনুযায়ী, বাজারে শীতকালীন সবজির সরবরাহ বাড়া এবং খাদ্যপণ্যের দাম স্থিতিশীল থাকায় ডিসেম্বরে খাদ্য মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমে দাঁড়িয়েছে ১২ দশমিক ৯২ শতাংশ, যা নভেম্বরে ছিল ১৩ দশমিক ৮০ শতাংশ। এছাড়া খাদ্য বহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি কমে দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ২৬ শতাংশে, যা আগের মাসে ছিল ৯ দশমিক ৩৯ শতাংশ।
বিবিএস জানায়, গত ডিসেম্বর শেষে খাদ্যপণ্যের পাশাপাশি খাদ্য বহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতিও কমেছে। এর মধ্যে খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি নভেম্বরের ১৩ দশমিক ৮০ শতাংশ থেকে কমে হয়েছে ১২ দশমিক ৯২ শতাংশ। আর খাদ্য বহির্ভূত পণ্যের ক্ষেত্রে এ হার নভেম্বরের ৯ দশমিক ৩৯ শতাংশ থেকে সামান্য কমে দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ২৬ শতাংশ।
ডিসেম্বর শেষে গ্রামে সার্বিক মূল্যস্ফীতি কমে দাঁড়িয়েছে ১১ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশে, যা গত নভেম্বরে ছিল ১১ দশমিক ৫৩ শতাংশ। এর মধ্যে খাদ্যপণ্যে মূল্যস্ফীতি ১৩ দশমিক ৪১ শতাংশ থেকে কমে দাঁড়িয়েছে ১২ দশমিক ৬৩ শতাংশ। আর খাদ্য বহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি ৯ দশমিক ৭২ শতাংশ থেকে কমে দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৬৫ শতাংশ।
বিবিএসের তথ্য অনুযায়ী, ডিসেম্বর শেষে শহরাঞ্চলে সার্বিক মূল্যস্ফীতি কমে দাঁড়িয়েছে ১০ দশমিক ৮৪ শতাংশ, যা গত নভেম্বরে ছিল ১১ দশমিক ৩৭ শতাংশ। এর মধ্যে খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি ১৪ দশমিক ৬৩ শতাংশ থেকে কমে দাঁড়িয়েছে ১৩ দশমিক ৫৬ শতাংশ। আর খাদ্যবহির্ভূত পণ্যে মূল্যস্ফীতি ৯ দশমিক ৩১ শতাংশ থেকে কমে দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ১৭ শতাংশ।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, নভেম্বরে মূল্যস্ফীতি চার মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ ১১ দশমিক ৩৮ শতাংশে পৌঁছে। খাদ্য মূল্যস্ফীতি অক্টোবরে ১২ দশমিক ৬৬ শতাংশ থেকে বেড়ে হয় ১৩ দশমিক ৮০ শতাংশ।
গত নভেম্বরে ১২ মাসের গড় মূল্যস্ফীতি ছিল ১০ দশমিক ২২ শতাংশ। অক্টোবরে ছিল ১০ দশমিক শূন্য পাঁচ শতাংশ।
বিশ্বব্যাংকের সর্বশেষ পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি কমতে পারে। তবে এটি নয় শতাংশের কাছাকাছি থাকবে। ২০২৫ সালের মাঝামাঝি তা সাত শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় অনেক বেশি। যদিও বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর আশা প্রকাশ করেছেন, আগামী জুনের মধ্যে মূল্যস্ফীতি সাত শতাংশে নেমে আসবে।