খুলনা | বৃহস্পতিবার | ০৯ জানুয়ারী ২০২৫ | ২৫ পৌষ ১৪৩১

সেই কলঙ্কিত ডামি নির্বাচনের দিন আজ

নিজস্ব প্রতিবেদক |
০১:২১ এ.এম | ০৭ জানুয়ারী ২০২৫


আজ ৭ জানুয়ারি। বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি কলঙ্কিত দিন। গত বছর ৭ জানুয়ারি পতিত স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা সারাবিশ্বকে তাক লাগিয়ে দেন এক অভিনব প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে। বিশ্বের বুকে নির্লজ্জভাবে তুলে ধরেন ক্ষমতা আঁকড়ে রাখতে কিভাবে ডামি নির্বাচন করতে হয়। ওই ডামি নির্বাচন করার পর টানা চতুর্থবারের জন্য প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শেখ হাসিনা শপথ গ্রহণ করেন এবং মন্ত্রীপরিষদ গঠন করেন। গত ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি ডামি নির্বাচনে গণতন্ত্র, মানবাধিকার এবং সুশাসনকে তুচ্ছ, তাচ্ছিল্য এবং উপহাসের পাত্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন। কিন্তু শেখ হাসিনা জানতো না মাত্র ৭ মাসের মাথায় ৭ জানুয়ারির ডামি নির্বাচনের সরকারের করুণ পতন হবে। নিজেসহ তার দলের সকল নেতা-কর্মী আজ পলাতক। নিজের জীবন বাঁচানোর জন্য তিনি পালিয়ে যান পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে। সেখানে সাময়িক আশ্রয় নিয়ে কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে অজ্ঞাত স্থানে দিনাতিপাত করছেন। বিশ্বের তাবৎ স্বৈরাচারের শেষ জীবন এবং পতনের মতো তারও একটি পতন হয়েছে।
মূলত: ডামি নির্বাচন হয় বিগত দিনে পরপর তিন জাতীয় নির্বাচনের পথ ধরে। শেখ হাসিনা তার ক্ষমতা এবং শাসন ব্যবস্থা ধরে রাখার জন্য অভিনব প্রতারণা ও প্রহসনের আশ্রয় নেন। দেশের সংসদ, বিচার বিভাগ, শাসন বিভাগসহ সর্ব ক্ষেত্রে এক ব্যক্তির ইচ্ছা-খুশিতে পরিণত হয়। দেশে চলে চরম নৈরাজ্য। ভিন্নমত দমন, নিপীড়ন এবং গুম, খুন, মামলা-হামলা, গায়েবি মামলাসহ অর্থ লুটপাট ও পাচারের এক মহা ক্লেপ্টোক্রেসি (চোরতন্ত্র) সংস্কৃতি চালু করে শেখ হাসিনার সরকার। ২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বিরোধীল বর্জন করে। তখন সারাদেশে ৩০০ আসনের মধ্যে ১৫৩টি আসনে বিনাপ্রতিদ্ব›িদ্বতায় নির্বাচিত সরকার গঠন করেন শেখ হাসিনা। তখন দেশে-বিদেশে নানা সমালোচনার জন্ম দেন শেখ হাসিনা। ওই নির্বাচনের আগে তিনি বলেন, শিগগিরই দেশে সকল দলের অংশগ্রহণের মাধ্যমে একটি অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচনের ব্যবস্থা করা হবে। শুধুমাত্র সাংবিধানিক ধারবাহিকতা রক্ষার জন্য এই নির্বাচন হচ্ছে। কিন্তু সুচতুর শেখ হাসিনার ওটি ছিল কথার কথা। অতীতের কথা বেমালুম ভুলে যেয়ে বিনাভোটের সরকার পুরো ৫ বছর ক্ষমতায় থাকে। সেই সঙ্গে চলতে থাকে তার একক ক্ষমতার দাপট। পরবর্তীতে ২০১৮ সালে বিরোধীদলকে নির্বাচনে আসার জন্য গণভবনে আলোচনার নামে নাটক করেন। সেখানে নিজের পিতার নামে কসম করে বলেন, তিনি একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কোনো প্রকার কারচুপির আশ্রয় নেবেন না। কিন্তু ভূতের মুখে রাম নাম। ওটা ছিল শেখ হাসিনার অভিনয় ও জাতির কাছে জাতীয় প্রতারণা। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগের দিন রাতে পুলিশ ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে ভোট ডাকাতি করেন। যা পরবর্তীতে নিশি রাতের নির্বাচন বলে দেশ-বিদেশে পরিচিতি লাভ করে। শেখ হাসিনা আবারও দেশের মানুষের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়ে বিরোধীদলও  বিশ্বকে বোকা বানিয়ে রাজনীতির মহা কৌশলী হিসেবে উপস্থাপন করেন। সর্বশেষ তার তৃতীয় সংস্করণ। আর তা হলো ডামি নির্বাচন। এ জন্য মাঠ তৈরির জন্য পুরো প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিলেন। তারই অংশ হিসেবে গত ২০২৩ সালের ২৮ অক্টোবর ঢাকায় বিএনপি ও বিরোধীদলের মহাসমাবেশ পণ্ড করে দিয়ে তাক লাগিয়ে দেন। গ্রাম থেকে শহর, শহর থেকে নগরে চলে বিরোধীদল নিধনের মহাকর্মযজ্ঞ। মাঠ ছাড়া হয় বিরোধীদল। সেই সঙ্গে বিরোধীদল নির্বাচন বর্জন করে এবং শেখ হাসিনা তার একতরফা নির্বাচনের পথ প্রশস্ত করতে সক্ষম হন। চতুর শেখ হাসিনা ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের অনুকরণ না করে নিজ দলের নেতা, আত্মীয় এবং কর্মচারীদের স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে দাঁড়ানোর অনুমতি দিয়ে বলেন, কোনো আসনে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে না। সবখানে ডামি প্রার্থী থাকবে। যেটি বাংলাদেশের ইতিহাসের সর্বশেষ ডামি নির্বাচন হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। যা জাতির জন্য একটি কলঙ্কিত দিন হিসেবে ইতিহাসে স্থান করে নিয়েছে।