খুলনা | শুক্রবার | ১০ জানুয়ারী ২০২৫ | ২৭ পৌষ ১৪৩১

ইউএনও’র হস্তক্ষেপে ট্রলার চলাচল স্বাভাবিক

রূপসায় ট্রলার মাঝিদের মারপিট, প্রায় এক ঘন্টা ট্রলার চলাচল বন্ধ : ভোগান্তিতে যাত্রীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক |
০১:৪৫ এ.এম | ১০ জানুয়ারী ২০২৫


খুলনার রূপসাঘাট টোল ইজাদারের ষড়যন্ত্রে পূর্ব রূপসাঘাটে তিন ট্রলার মাঝিকে বেধড়ক মারপিট করায় এক ঘন্টা ট্রলার চলাচল বন্ধ ছিলো। গতকাল বৃহস্পতিবার বাদ মাগরিব এ মারপিটের ঘটনা ঘটে। ট্রলার মাঝিদের মারধর করায় পূর্ব ও পশ্চিম রূপসা ইঞ্জিন চালিত মাঝি সংঘ নেতাদের হস্তক্ষেপে সন্ধ্যা ৬টা থেকে সোয়া ৭টা পর্যন্ত ট্রলার বন্ধ করে রাখা হয়। সোয়া এক ঘন্টা ট্রলার চলাচল বন্ধ রাখায় চরম ভোগান্তিতে পড়ে যাত্রীরা। খবর পেয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) আকাশ কুমার কুন্ডু ঘটনাস্থলে আসেন। ইউএনও’র হস্তক্ষেপে ট্রলার চলাচল স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে। 
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা দেশ ত্যাগের পর বিআইডব্লিউটিএ’র কাছ থেকে মোঃ আলী আকবর শেখ রূপসা ঘাটে টোল আদায় ইজারা নেন। টোল আদায় ইজারা নেওয়ার পর থেকে পূর্ব ও পশ্চিম রূপসা ইঞ্জিন চালিত মাঝি সংঘের কার্যনির্বাহী কমিটির দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের কাছে প্রকাশ্যে বিভিন্ন সময় চাঁদার টাকা দাবিসহ নানা ভাবে অত্যাচার চালিয়ে আসছেন। মাঝি সংঘের নেতারা চাঁদার টাকা দিতে রাজি না হওয়ায় টোল ইজারাদারের ইন্ধনে মাঝিদের বিভিন্ন সময় মারধর করা হয়। 
ট্রলার মাঝি সূত্রে জানা গেছে, রূপসাঘাট টোল ইজারাদার আলী আকবর শেখ বিভিন্ন সময় মাঝি সংঘের শীর্ষ কর্মকর্তাদের কাছে চাঁদার টাকাসহ নানা ভাবে অত্যাচার চালিয়ে আসছেন। ফলে মাঝি সংঘের সংদস্যরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে টোল ইজারাদার আলী আকবর শেখের অত্যাচার থেকে রক্ষা পেতে উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন। বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগের অনুলিপি প্রেরণও করা হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, রূপসাঘাট টোল ইজারাদার আলী আকবরের এক আপনজন কোন এক সরকারি দপ্তরের কর্মকর্তা থাকায় তার মাধ্যমে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে দিয়ে মারধর করানো হচ্ছে। 
এসব ঘটনার জের ধরে গতকাল বৃহস্পতিবার বাদ মাগরিব ট্রলার মাঝি নিশাত, সুমন ও চাঁনমিয়াকে বেধড়ক মারপিট করা হয়। মারপিটের ঘটনায় মাঝিরা তাৎক্ষণিকভাবে ট্রলার চলাচল বন্ধ করে দেয়। সন্ধ্যা ৬টা থেকে সোয়া ৭টা পর্যন্ত ট্রলার চলাচল বন্ধ রাখা হয়। চরম ভোগান্তির শিকার হয় যাত্রীরা। পরে ইউএনও’র হস্তক্ষেপে ট্রলার চলাচল স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে। 
এ ঘটনার পর সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে রূপসা-বাগেরহাট আন্তঃজেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়ন কার্যালয়ে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার আকাশ কুমার কুন্ডু, সেনা ক্যাম্প ইনচার্জ রূপসা, রূপসা থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ মাহফুজুর রহমান, রূপসা বাসস্ট্যান্ড পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ, উপজেলা বিএনপি’র আহŸায়ক সাইফুর রহমান মোল­া, রূপসা চিংড়ি বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোল­া রিয়াজুল ইসলাম, রূপসা-বাগেরহাট আন্তঃজেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মোঃ ইউনুচ গাজী। উপজেলা নির্বাহী অফিসার এ ঘটনার বিষয়ে সুষ্ঠু সমাধানের জন্য মাঝিদের প্রতিশ্র“তি দেন। 
এর আগে গত ৩০ ডিসেম্বর বিকেলে মাঝি আমির হোসেন, জাহাঙ্গীর হাওলাদার, খলিল শিকদার, আরমান মৃধা, সুমন ঘরামিকে রূপসাঘাটে মারপিট করা হয়। গত ৭ জানুয়ারি বিকেলে মাঝি রাজিব, হালান শেখ, সাকিবকে মারপিট করা হয়। গত ৮ জানুয়ারি বিকেল ৪টার দিকে মাঝি সাইফুল ইসলাম, নুর ইসলাম ও রবিউল বেপারীকে ঘাট কর্তৃপক্ষের পোষা বাহিনী দিয়ে মারপিট করে আহত করা হয় বলে মাঝিরা অভিযোগ করেন।  
পূর্ব ও পশ্চিম রূপসা ইঞ্জিনচালিত মাঝি সংঘের সভাপতি আব্দুল হালিম শেখ বলেন, টোল ইজারাদার আলী আকবর শেখ বিভিন্ন সময় চাঁদার টাকা দাবি করে আসছেন। টোল ইজারাদার মাঝিদের বিভিন্ন সময়ে শারীরিকভাবে অত্যাচার চালিয়ে আসছে এমনকি আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে দিয়েও মারপিট করানো হচ্ছে। তার অত্যাচার থেকে রক্ষা পেতে মাঝিরা একত্রিত হয়ে প্রায় দুই সপ্তাহ আগে ইউএনও’র কাছে লিখিত অভিযোগ করেছি।   
পূর্ব ও পশ্চিম রূপসা ইঞ্জিনচালিত মাঝি সংঘের সাধারণ সম্পাদক হারেজ হাওলাদার বলেন, রূপসাঘাটে টোল মালিক বিভিন্ন সময়ে আমাদের কাছে চাঁদার টাকা দাবি করে আসছে। এমনকি মাঝিদের তার বাহিনী দিয়ে একাধিকবার মারপিট করে আহত করা হয়েছে। তার অত্যাচার থেকে রক্ষা পেতে আমরা একত্রিত হয়ে প্রায় দুই সপ্তাহ আগে ইউএনও’র কাছে লিখিত অভিযোগ করেছি।