খুলনা | বুধবার | ১৫ জানুয়ারী ২০২৫ | ২ মাঘ ১৪৩১

ঠাকুরগাঁওয়ে ইত্যাদির শুটিংয়ে কী ঘটেছিল

খবর বিনোদন |
০৬:২৮ পি.এম | ১০ জানুয়ারী ২০২৫


বাংলাদেশ টেলিভিশনের জনপ্রিয় ম্যাগাজিন ‘ইত্যাদি’ এর শুটিং অনুষ্ঠানে বিশৃঙ্খলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। বৃহস্পতিবার (৯ জানুয়ারি) সন্ধ্যার পরে ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈলের রাজবাড়িতে (রাজা টংকনাথের বাড়িতে) শুটিং অনুষ্ঠান শুরু হয়। এরপর চেয়ারে বসাকে কেন্দ্র করে দর্শকদের মাঝে চেয়ার ছুড়ে মারার ঘটনা ঘটে বলে জানা যায়। তখন দর্শকদের সামাল দিতে শুটিং অনুষ্ঠান সাময়িক স্থগিত করে ইত্যাদি কর্তৃপক্ষ।

এ প্রসঙ্গে ‘ইত্যাদি’ অনুষ্ঠানের পরিকল্পক, নির্মাতা ও উপস্থাপক হানিফ সংকেত একটি গণমাধ্যমকে বলেন, এটা অনাকাঙ্ক্ষিত ও বিচ্ছিন্ন ঘটনা। এখানে কোনো ঝগড়া নেই, মারামারি নেই, হামলা নেই। সবাই পরে খুব দুঃখ প্রকাশ করেছে। তারা বলেছে, ‘আপনাদের ভালোবাসে, এটা তো অন্যায় না। ভালোবাসি বলেই এই ঘটনা ঘটেছে।’ এখানে কেউই মারামারি করতে আসেনি, হামলাও করতে আসেনি। এখানে এসেছিল উৎসুক জনতা। তারা এসেছে ‘ইত্যাদি’ দেখবে, আমাদের দেখবে, ‘ইত্যাদি’র শুটিং দেখবে বলে।

ঘটনার সূত্রপাতের বিষয়ে তিনি বলেন, অনুষ্ঠান শুরু করি সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায়। সাড়ে সাতটা কি আটটার সময় ঘটনার সূত্রপাত, যখন আমি মঞ্চে উঠলাম। ওঠার পর যখন কথা বললাম, তখনই বিশৃঙ্খলা শুরু হয়। এরপর একটা নাচ করলাম। তারপর রবি চৌধুরী ও লিজার গানের অর্ধেকটা করলাম, তখন সেকেন্ড বিশৃঙ্খলা শুরু হয়। এক থেকে দেড় ঘণ্টা অনুষ্ঠানের দৃশ্যধারণ বন্ধ রেখে রাত সাড়ে ৯টা কি ১০টার দিকে আবার শুরু করেছি। দিবাগত রাত সাড়ে ১২টা পর্যন্ত শুটিং করেছি।

ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈলের রাজবাড়িতে শুটিংয়ের কারণ জানিয়ে হানিফ সংকেত বলেন, আমরা কোনো মাঠে এই অনুষ্ঠানের রেকর্ডিং করি না। সাধারণত যেকোনো প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন বা দেশের কোনো ঐতিহ্যবাহী স্থানে আমরা অনুষ্ঠানটা করি। ঠাকুরগাঁওয়ে এ রকম কিছু নেই। তারপরও আমরা জানতে পেরেছি, রানীশংকৈল উপজেলায় টংকনাথের রাজবাড়ি নামে একটি জমিদারবাড়ি আছে, যেটা খুবই বিখ্যাত, প্রত্নতত্ত্ব নিদর্শনও। এরপর আমরা ওখানকার জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বললাম। তারা বললেন, ‘এটা তো গ্রামীণ এলাকা, এখানে অত লোক পাবেন? অন্য জায়গায় করা যায় কি না, ঠাকুরগাঁওয়ে।’ আমি তখন বলেছি, ‘ঠাকুরগাঁওয়ে করব না। আমরা তো মাঠে করি না।’ তখন তারাও বলছিলেন, ‘দর্শক না এলে হবে?’ আমি তখন বলেছি, ‘আমাদের দুই থেকে তিন হাজার দর্শক হলেই চলবে। আমরা তো স্থাপনার বাইরে যেতে পারব না।’

পাঁচ লাখের বেশি লোক হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, অনুষ্ঠানের আগে আমরা আট হাজার প্রবেশ পাস দিয়েছি। যেই আমি মঞ্চে এলাম, শুনলাম, চারদিক থেকে তিন কিলোমিটারের মতো রাস্তা প্যাকড। পাঁচ লাখের অধিক লোক। এত মানুষকে আমি কোথায় বসতে দেব। লোকজন বাঁশের ব্যারিকেড ভেঙে ঝাঁপিয়ে পড়ল। তখন তো ম্যাসাকার অবস্থা। ওখানে নারী আছেন, শিশু আছে, আছেন বিভিন্ন বয়সী মানুষ। এরপর হাউকাউ শুরু হয়ে গেল। পুলিশ থামানোর চেষ্টা করছে, আমিও করছি। অস্থির অবস্থা। কেউ চেয়ার–ছোড়াছুড়ি করছে।

হানিফ সংকেত বলেন, আসলে সেখানে সমস্যাটা হয়েছে কি, আমরা পরিস্থিতির শিকার হয়ে গেছি। আমরাও বুঝিনি যে এত লোক হবে। কর্তৃপক্ষও বোঝেনি যে এত লোক হবে। আমাদের জায়গাটা আসলে আরও বড় হওয়া উচিত ছিল।

অতীতেও এ ধরণের বিচ্ছিন্ন ঘটনা আরও হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ময়মনসিংহের ত্রিশালে ঘটেছে, ওখানেও কয়েক লাখ লোক হয়েছিল। এরপর তো ছাদ ভাঙার উপক্রম হয়েছিল। তেঁতুলিয়ায়ও যখন শুটিং করেছি, তখন ছাদ ভেঙে পড়ে গিয়েছিল। এমন ঘটনা আমার জীবনে নতুন নয়। তবে আমরা এত কিছুর মধ্যে অনুষ্ঠান একেবারের জন্যও বন্ধ করিনি। এবার যে এক থেকে দেড় ঘণ্টা স্থগিত করেছি, এ রকম হয়নি।