খুলনা | মঙ্গলবার | ২৪ জুন ২০২৫ | ১০ আষাঢ় ১৪৩২

অল্প জমিতে স্বল্প খরচে শিম চাষে ভাগ্য বদলের স্বপ্ন দেখছেন কালীগঞ্জের চাষীরা 

কালীগঞ্জ (ঝিনাইদহ) প্রতিনিধি |
১১:৪১ পি.এম | ১১ জানুয়ারী ২০২৫


শিম চাষ করে ভাগ্য বদলের স্বপ্ন দেখছেন ঝিনাইদহের কালীগঞ্জের চাষিরা। এই উপজেলায় বিভিন্ন গ্রামের মাঠে মাঠে উঁচু ভূমিতে অন্যান্য সবজির পাশাপাশি শিম চাষও করেছেন কৃষকেরা। বেগুনী রঙের রঙিন ফুল আর শিম থোকায় থোকায় সেজেছে শিমের ক্ষেত। আর শীতের হালকা বাতাসে শিম ফুলের সঙ্গে দুলছে কৃষকের স্বপ্ন।
শনিবার কালীগঞ্জ উপজেলার নিয়ামতপুর, বারোপাখিয়া, তৈলকূপী গ্রামের মাঠসহ বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা যায় প্রতি ক্ষেতে শিম ও ফুলের সমারোহ। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এ বছর বাম্পার ফলন হয়েছে শিমের। থোকা থোকা শিমে স্বপ্ন বুনছেন চাষিরা। অল্প জমি আর স্বল্প পুঁজিতে শিম চাষে অনেক চাষির ভাগ্য বদল হয়েছে।
উপজেলার চাষিরা জানায়, আশ্বিন মাসের শেষ দিকে সারিবদ্ধভাবে গর্ত খুঁড়ে কিছু গোবর সার প্রয়োগ করে শিমের বীজ বপন করতে হয়। এরপর কিছুদিন সার, সেচ ও কীটনাশক দিয়ে পরিচর্যা করলে চারাগুলো বড় হয়। এরপর বান বা মাচা তৈরী করে দিলে মাত্র ৩/৪ মাসের মধ্যেই বিক্রি করার মতো হয়ে যায় শিম। স্বল্প পুঁজিতে শিম চাষ করে অনেক কৃষকের ভাগ্য বদল করতে সক্ষম হয়েছেন।
শুধু শাক সবজি হিসেবে নয়, বীজ হিসেবে শিম চাষাবাদ করেও লাভবান হচ্ছেন এ অঞ্চলের চাষিরা। বাজারে বেশ কদর রয়েছে শিম বীজের। বীজ উৎপাদন করতে চাষিদের আগাম পরামর্শ দিয়ে থাকেন বিভিন্ন সিড কোম্পানির প্রতিনিধিরা। পরে উৎপাদিত বীজ সেই সিড কোম্পানি ন্যায্যমূল্যে চাষিদের কাছ থেকে ক্রয় করে সংরক্ষণ ও পরে বাজারজাত করেন। এটিতে একটু যতœ ও খরচ বেশি বলে দামও বেশি পান চাষিরা।
উপজেলার নিয়ামতপুর ইউনিয়নের বারোপাখিয়া গ্রামের চাষি মনিরুল ইসলাম বলেন, অল্প জমিতে স্বল্প পুঁজিতে অধিক মুনাফা অর্জন করতে শিম চাষের বিকল্প নেই। তিনি বলেন আমার ১০ শতক জমিতে মাত্র ১২ হাজার টাকা খরচ করে শিম চাষ করে প্রতি সপ্তাহে দেড় মণ শিম বিক্রি করছি। উৎপাদন খরচ এর আগেই উঠেছে। এখন শুধু প্রতিদিন সকালে ফুল থেকে শুকনা পাপড়ি ফেলে দিচ্ছি আর মাঝে মধ্যে কীটনাশক ¯েপ্র করতে হয়। আর শিম তুলে বাজারে বিক্রি করি। রোগবালাই না হলে এমন করে আরও প্রায় চার মাস শিম আসবে। গত বছর এ জমি থেকে প্রায় এক লক্ষ টাকা আয় হয়েছে। এ বছর দাম ভালো থাকায় দ্বিগুণ লাভের আশা করছেন মণিরুল। তার দেখাদেখি এবার তার বড় ভাই পাতা মিয়াও ৬ শতক জমিতে শিম চাষ করে লাভবান হওয়ার কথা জানান।
কালীগঞ্জ উপজেলার জামাল ইউনিয়ন তৈলকূপী গ্রামের দক্ষ সবজি চাষি নাজমুল তার ১৫ শতক জমিতে প্রতি বছর শিমসহ নানান জাতের সবজি চাষাবাদ করেন। শিম চাষে কম খরচে অধিক লাভ তাই এ বছর ৩০ শতক জমিতে শিম চাষ করেছেন তিনি। এতে তার খরচ পড়েছে মাত্র ১৩ হাজার টাকা। প্রতি সপ্তাহে ৪ থেকে ৫ মণ শিম উঠছে। এটি চলবে আরও তিন মাস। তবে দিন যত যাবে উৎপাদন তত বাড়লেও কমে যাবে দাম। বর্তমান বাজারে শিমের চাহিদা ভালো থাকায় দামও ভাল পাচ্ছেন তিনি। কালীগঞ্জ পাইকাড়ি বাজারে নিয়ে প্রতি কেজি ২০/২২ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছেন তিনি।
কালীগঞ্জ উপজেলার রঘুনাথপুর গ্রামের রাকিব মিয়া জানান, উঁচু জমিতে ধান চাষ করে তেমন মুনাফা না আসায় চাষাবাদ ছেড়ে দেওয়ার চিন্তা করেছিলেন। হঠাৎ আরেক চাষির পরামর্শে এক বছর আগে পরীক্ষামূলকভাবে মাত্র ১৫ শতক জমিতে শিমের চাষ করে বেশ লাভবান হয়েছিলেন। সেই থেকে শিম চাষে আগ্রহ বাড়ে তার। এবার তিনি প্রায় ৩৩ শতকের এক বিঘা জমিতে শিমের চাষ করে এ পর্যন্ত প্রায় ২৫ হাজার টাকা বিক্রি করেছেন। উৎপাদন খরচ উঠে গিয়ে এখন লাভ আসতে শুরু করেছে। আবহাওয়া আর বাজার যদি অনুকূলে থাকে তাহলে এক লাখ টাকা আয় করার আশা করছেন এই চাষি। এই অঞ্চলে অনেক চাষি এখন বাণিজ্যিকভাবে শিম চাষ শুরু করেছেন।
কালীগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাহবুব আলম রনি বলেন, এ মৌসুমে পুরো কালীগঞ্জ উপজেলায় মোট শিমের চাষ হয়েছে ২শত ৩০ হেক্টর জমিতে। এবার হেক্টর প্রতি ১৭ টনের মতো শিমের ফলন হবে। আশা করছি কোন দুর্যোগ যদি না হয় তাহলে সব মিলিয়ে ৩ হাজার ৯০০ টনের মতো ফলন হবে। এখন পর্যন্ত আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় অন্যান্য বারের চেয়ে ফলন বেশী। আর আমাদের উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তাবৃন্দ মাঠ পর্যায়ে সার্বক্ষণিক কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছেন। আমরা কৃষকদের প্রশিক্ষণ সহ বিভিন্ন মাঠ দিবস পরামর্শ প্রদান করে থাকি। আমরা মাঠ পর্যায়ে কৃষকের সাথে কথা বলেছি তারা আমাদের পরামর্শে শীতকালীন শিমের আবাদ করছেন। এবার আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে কৃষকরা বেশি লাভবান হবেন। 
তিনি আরো বলেন শিম প্রোটিনসমৃদ্ধ একটি সবজি। এর বিচিও সবজি হিসেবে খাওয়া যায়। তাই দেশে এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। চলতি মৌসুমে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় শিমের বাম্পার ফলন হয়েছে। চাষিরা আগামীতেও বেশী করে শিম চাষ করবেন বলে প্রত্যাশা এই কর্মকর্তার।