খুলনা | বুধবার | ০৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৫ | ২৩ মাঘ ১৪৩১

পূর্বাচলে প্লট দুর্নীতির মামলায় গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ ১৪ আসামি

দুদকের মামলায় আসামি হাসিনা-পুতুল

খবর প্রতিবেদন |
১২:৪১ এ.এম | ১৩ জানুয়ারী ২০২৫


ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ এবং জাতীয় গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে পূর্বাচলে ৬০ কাঠা প্লট বরাদ্দ নেওয়ার প্রমাণ পাওয়ায় মামলা দায়ের করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
রোববার দুদকের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে সংস্থাটির সহকারী পরিচালক আফনান জান্নাত কেয়া বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন। দুদক মহাপরিচালক মোঃ আক্তার হোসেন মামলা দায়েরের বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
মামলার আসামিরা হলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ (পুতুল), জাতীয় গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃ শহীদ উল­া খন্দকার, অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) কাজী ওয়াছি উদ্দিন, প্রশাসনিক কর্মকর্তা মোঃ সাইফুল ইসলাম সরকার, সিনিয়র সহকারী সচিব পূরবী গোলদার, রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যান মোঃ আনিছুর রহমান মিঞা, সাবেক সদস্য (এস্টেট ও ভূমি) মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, সদস্য (প্রশাসন ও অর্থ) কবির আল আসাদ, সদস্য (উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণ) তন্ময় দাস, সদস্য (এস্টেট ও ভূমি) মোঃ নুরুল ইসলাম, সাবেক সদস্য (পরিকল্পনা) মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন, সাবেক সদস্য মেজর (ইঞ্জিঃ) সামসুদ্দীন আহমদ চৌধুরী (অবঃ), পরিচালক (এস্টেট ও ভূমি-২) শেখ শাহিনুল ইসলাম, উপ-পরিচালক মোঃ হাফিজুর রহমান ও হাবিবুর রহমান।
মূল অভিযোগে রাজনৈতিক বিবেচনায় সরকারের বিশেষ ক্ষমতাবলে শেখ হাসিনা ক্ষমতার অপব্যবহার করে অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের যোগসাজশে নিজের ও ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল, বোন শেখ রেহানা, বোনের ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি ও মেয়ে আজমিনা সিদ্দিক রূপান্তির নামে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পের ২৭ সেক্টরের কূটনৈতিক জোনের ২০৩ নম্বর রোড থেকে ১০ কাঠা করে মোট ৬০ কাঠার ছয়টি প্লট বরাদ্দের কথা বলা হয়েছে। এদিন শুধু শেখ হাসিনার মেয়ে পুতুলের নামে ১০ কাঠা প্লট বরাদ্দে অনিয়মের অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয়েছে। অনুসন্ধানে বাকিদের বিরুদ্ধেও প্লট বরাদ্দে প্রমাণ পাওয়া গেছে বলে জানা গেছে। শিগগিরই বাকিদের বিরুদ্ধে পর্যায়ক্রমে মামলা দায়ের হতে পারে।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, সরকারের সর্বোচ্চ পদাধিকারী ও পাবলিক সার্ভেন্ট হিসেবে বহাল থাকাকালে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার উপর অর্পিত ক্ষমতার অপব্যবহার করে বরাদ্দ পাওয়ার যোগ্য না হওয়া সত্ত্বেও অসৎ উদ্দেশ্যে পূর্বাচল আবাসন প্রকল্পের ২৭ নং সেক্টরের ২০৩ নং রাস্তার প্লট নং ১৭ সায়মা ওয়াজেদের নামে বরাদ্দ নিয়ে এবং প্লটের বাস্তব দখলসহ রেজিস্ট্রিমূলে প্লট গ্রহণ করেছেন। আসামিদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধি, ১৮৬০ এর ১৬১/১৬৩/১৬৪/৪০৯/১০৯ ধারা তৎসহ দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন, ১৯৪৭ এর ৫(২) ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।
এর আগে গত ৮ জানুয়ারি দুদকের মহাপরিচালক (ডিজি) মোঃ আক্তার হোসেন সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে জানিয়েছিলেন, এ বিষয়ে আমাদের অনেক অগ্রগতি আছে। অনুসন্ধান দল এ নিয়ে অনেক কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। আমাদের হাতে পর্যাপ্ত তথ্য এসেছে। যেগুলোর মধ্যে বিশেষ করে রাজউকের পূর্বাচল প্রকল্পের ৬০ কাঠা বরাদ্দ সংক্রান্ত বিষয়ে শিগগিরই ভালো কিছু তথ্য আপনাদের (সাংবাদিক) জানাতে পারব। আমরা যেসব তথ্য-উপাত্ত পেয়েছি, সেগুলোতে স্পষ্টভাবেই ক্ষমতার অপব্যবহারের প্রমাণ পাওয়া গেছে। শেখ হাসিনাসহ তার পরিবারের ছয় সদস্যের বিরুদ্ধে পূর্বাচলে প্লট বরাদ্দে অনিয়মের অভিযোগ দুদক থেকে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত দেওয়ার কথা গত ২৭ ডিসেম্বর জানিয়েছিল দুদক।
অভিযোগে বলা হয়, রাজনৈতিক বিবেচনায় সরকারের বিশেষ ক্ষমতাবলে শেখ হাসিনা ক্ষমতার অপব্যবহার করে অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের যোগসাজশে নিজের ও ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল, বোন শেখ রেহানা, বোনের ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি ও মেয়ে আজমিনা সিদ্দিক রূপান্তির নামে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পের ২৭ সেক্টরের কূটনৈতিক জোনের ২০০৩ নম্বর রোড থেকে ১০ কাঠা করে মোট ৬০ কাঠার ছয়টি প্লট বরাদ্দ নিয়েছেন।
দেড় দশক দেশ শাসনের পর ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নেন আ’লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। এরপর থেকে সেখানেই রয়েছেন তিনি।
দুদক গত ২২ ডিসেম্বর সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের বিরুদ্ধে ওঠা ৩০০ মিলিয়ন ডলার (৩০ হাজার কোটি টাকা) বিদেশে পাচারের অভিযোগ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয়। তার আগে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা পরিবারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন প্রকল্পে ৮০ হাজার কোটি টাকা দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধানে পাঁচ সদস্যের একটি অনুসন্ধান দল গঠন করেছে। একই দলকে নতুন করে আসা ৩০০ মিলিয়ন ডলার পাচারের অভিযোগটি অনুসন্ধানের নির্দেশ দেয় কমিশন। সবগুলোই অনুসন্ধান পর্যায়ে রয়েছে বলে জানা গেছে।
ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে রূপপুর পরমাণু বিদ্যুৎ প্রকল্পে কয়েক বিলিয়ন ডলার দুর্নীতির অভিযোগকে ‘সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন’ বলে দাবি করেছেন তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, যিনি যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন। একই সঙ্গে এই ‘দুর্নীতি’র প্রমাণ দিতে দুদকের প্রতি চ্যালেঞ্জ জানিয়েছেন তিনি।
জুলাই অভ্যুত্থানে হত্যা-নিপীড়নের ঘটনাগুলোর জন্য আ’লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার বিচার করতে আন্দোলনকারীরা তাকে ফেরত আনার জোর দাবি জানিয়ে আসছেন। ৮ আগস্ট অন্তর্র্বর্তী সরকার গঠনের পর দেশের বিভিন্ন স্থানে ছাত্র-জনতার হত্যা, গুম ও গণহত্যার দায়ে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে, এখনও হচ্ছে।
জুলাই-আগস্টে হত্যা, গণহত্যাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে এবং গত দেড় দশকে আ’লীগের শাসনামলে গুম-খুনের অভিযোগে দুই মামলায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল থেকে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে।
এরই মধ্যে শেখ হাসিনার পাসপোর্ট বাতিল করেছে অন্তর্র্বতীকালীন সরকার। তাকে ফেরত পাঠাতে বেশ কিছুদিন কথা-বার্তার পর আনুষ্ঠানিকভাবে দিলি­তে চিঠি পাঠিয়েছে সরকার। নরেন্দ্র মোদি সরকার চিঠি পাওয়ার কথা স্বীকার করলেও কোনো সিদ্ধান্ত জানায়নি।