খুলনা | বৃহস্পতিবার | ২৩ জানুয়ারী ২০২৫ | ৯ মাঘ ১৪৩১

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করুন

|
১২:০৪ এ.এম | ২০ জানুয়ারী ২০২৫


মূল্যস্ফীতি, বিশেষ করে খাদ্য মূল্যস্ফীতি কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না। মূল্যস্ফীতির সঙ্গে তাল মেলাতে না পেরে দরিদ্র মানুষ আরো দরিদ্র হয়ে যাচ্ছে। সমাজে বৈষম্য বাড়ছে। ফলে ২০২৫ সাল যে বাংলাদেশের জন্য নানা দিক থেকে অনেক বেশি চ্যালেঞ্জিং হবে, তা সহজেই অনুমান করা যায়।
গণমাধ্যমের প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখা যায়, ওয়ার্ল্ড ইকোনোমিক ফোরাম বা ডব্লিউইএফ ২০২৫ সালে বাংলাদেশের জন্য যে পাঁচটি প্রধান ঝুঁকি চিহ্নিত করেছে, তারও শীর্ষে রয়েছে মূল্যস্ফীতি। গত বুধবার প্রকাশিত ডব্লিউইএফের বৈশ্বিক ঝুঁকি প্রতিবেদন ২০২৫-এ এমন তথ্য উঠে এসেছে। বৈশ্বিক ঝুঁকি প্রতিবেদনে বাংলাদেশের জন্য আরো যে চারটি প্রধান ঝুঁকি চিহ্নিত করা হয়েছে, সেগুলো হলো চরম ভাবাপন্ন আবহাওয়া (বন্যা, তাপপ্রবাহ), দূষণ (বায়ু, পানি, মাটি), বেকারত্ব ও অর্থনৈতিক সুযোগের অভাব এবং অর্থনৈতিক নিম্নমুখিতা (মন্দা, স্থবিরতা)। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সারা পৃথিবীতেই আবহাওয়া ক্রমে চরম ভাবাপন্ন হয়ে উঠছে।
বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ¡াস, তাপপ্রবাহ ইত্যাদির ঘটনসংখ্যা এবং তীব্রতা দু’টিই বাড়ছে। বাংলাদেশে অপরিকল্পিত উন্নয়ন, নগরায়ণ, পানিপ্রবাহ রোধসহ মানুষের নানা রকম প্রকৃতিবিরোধী কর্মকান্ড দুর্যোগপ্রবণতা বাড়িয়ে দিয়েছে। বিভিন্ন গবেষণায় উঠে এসেছে, বাংলাদেশে নদীগুলোর নাব্যতা কমে যাওয়ায় বন্যার প্রকোপ ক্রমেই বাড়ছে। অন্য সব প্রাকৃতিক দুর্যোগে যত ক্ষতি হয় তার চেয়ে অনেক অনেক বেশি ক্ষতি হয় কেবল বন্যার কারণে।
সেই সঙ্গে নদীভাঙনেও প্রতিবছর হাজার হাজার পরিবার নিঃস্ব হয়ে যায়। বেকারত্ব দ্রুত বাড়ছে। অন্যদিকে বিনিয়োগের প্রবৃদ্ধি ক্রমেই শ্লথ হচ্ছে। কলকারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। কর্মসংস্থানের সুযোগ আরো সংকুচিত হচ্ছে।
যথাযথভাবে মোকাবেলা করা না হলে দ্রুতই তা সামাজিক সমস্যা হয়ে দেখা দেবে। সা¤প্রতিক বিভিন্ন পরিসংখ্যানেও দেখা যাচ্ছে, দেশে অর্থনৈতিক উন্নয়নের গতি ক্রমেই নিম্নমুখী হচ্ছে।
বৈশ্বিক ঝুঁকি প্রতিবেদনে বাংলাদেশের আরো একটি প্রধান ঝুঁকি হিসেবে পরিবেশ দূষণকে তুলে ধরা হয়েছে। রাজধানী ঢাকা প্রায়ই বায়ুদূষণের দিক থেকে বিশ্বে শীর্ষস্থানে থাকে। দেশ হিসেবে বাংলাদেশের অবস্থানও প্রায়ই শীর্ষে বা কাছাকাছি থাকে। বায়ুদূষণের কারণে প্রতিবছর লক্ষাধিক মানুষের মৃত্যু হয়। চিকিৎসা করাতে গিয়ে বহু মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে যায়। মারা না গেলেও বহু মানুষ অকালেই তাদের কর্মক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। পরিবারের পাশাপাশি দেশের অর্থনীতির জন্যও এটি এক বড় ঝুঁকি। প্লাস্টিক-পলিথিন দূষণ দেশের নদী, খাল, জলাশয় ভরাট করে ফেলছে। ফসলি জমি উর্বরতা শক্তি হারাচ্ছে।
রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর আরো অনেকভাবেই দেশ নানা রকম চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করছে। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ক্রমে বেশি করে উদ্বেগ ছড়াচ্ছে। শিল্প, ব্যবসা-বাণিজ্য, বিশেষ করে ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগ নানা রকম প্রতিকূলতা মোকাবেলা করছে। গ্যাস, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সংকটের কারণে উৎপাদন বাঁধাগ্রস্ত হচ্ছে। অনেক কারখানা লাভজনক থাকছে না। শ্রমিক-কর্মচারীর বেতন পরিশোধ করতে পারছে না। ফলে বাড়ছে শ্রমিক অসন্তোষ। সেটিও উৎপাদনে প্রভাব ফেলছে। ডলারের বিপরীতে ক্রমেই বেশি করে টাকার অবমূল্যায়ন হচ্ছে। এতেও পণ্যমূল্য বেড়ে যাচ্ছে। আমরা মনে করি, এসব ঝুঁকি মোকাবেলায় পরিকল্পিত পদক্ষেপ নিতে হবে। সবার আগে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।