খুলনা | বৃহস্পতিবার | ২৩ জানুয়ারী ২০২৫ | ৯ মাঘ ১৪৩১

সীমান্তে উত্তেজনা নিরসনে কূটনৈতিক তৎপরতা কাম্য

|
১২:২১ এ.এম | ২১ জানুয়ারী ২০২৫


চাঁপাইনবাবগঞ্জের কিরণগঞ্জ সীমান্তে আবারও উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। রোববার যুগান্তরের খবরে প্রকাশ, ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী-বিএসএফের সহযোগিতায় ভারতীয়দের বাংলাদেশি কৃষকের গাছকাটাকে কেন্দ্র করে শনিবার এ পরিস্থিতি তৈরি হয়। এ সময় আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে বিএসএফ। মুহুর্মুহু পাথর ছোড়ে ভারতীয়রা। তাদের হামলায় ৫ বাংলাদেশি আহত হন। তবে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) তাৎক্ষণিক তৎপরতায় অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতি এড়ানো সম্ভব হয়। দিনভর চরম উত্তেজনার পর বিকালে পতাকা বৈঠকে দুঃখ প্রকাশ করেছে বিএসএফ। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে উভয় বাহিনী সীমান্তে অতিরিক্ত সদস্য মোতায়েন করে। রাতে এ রিপোর্ট লেখার সময়ও কিরণগঞ্জ সীমান্তে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছিল। এদিকে সাতক্ষীরার ভোমরায় ল²ীদাঁড়ি সীমান্তে জিরো পয়েন্টের বিভিন্ন গাছে সার্চ লাইট লাগিয়েছে বিএসএফ। এ নিয়ে ক্ষোভ জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
জানা যায়, ওইদিন বেলা সাড়ে ১১টায় কিরণগঞ্জ সীমান্তের আন্তর্জাতিক সীমান্ত পিলার-১৭৭-এর সাব পিলার ৩/৪এস পিলারের কাছে এ উত্তেজনার সৃষ্টি। বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে দুই বাহিনীর ব্যাটালিয়ন পর্যায়ে পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে দুঃখ প্রকাশ করে বিএসএফ। বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে স্থানীয়দের সঙ্গে নিয়ে বিএসএফের এমন তৎপরতাকে ভালোভাবে দেখার যে কোনো কারণ নেই, তা বলাই বাহুল্য। সীমান্তের ব্যবস্থাপনাটা কীভাবে হবে, তা নিয়ে ১৯৭৫ সালে দু’দেশের মধ্যে ‘বর্ডার গাইডলাইনস’ তৈরি করা হয়েছে। তারই ভিত্তিতে সীমান্তে নিরাপত্তাসহ বিভিন্ন দিকনির্দেশনা অনুসরণ করার কথা। সেখানে পরিস্কার করে বলা আছে, সীমান্তরেখার ১৫০ গজের মধ্যে কোনোদিকেই কেউ এমন কোনো স্থাপনা করবে না, অনুপ্রবেশ করবে না-যাতে সীমান্তের এ অঞ্চলে নিরাপত্তায় কোনো প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়। কাজেই দু’দেশের মধ্যে এ বর্ডার গাইডলাইনস অনুযায়ী, সীমান্ত ব্যবস্থাপনার কাজটা বিজিবি ও বিএসএফের করার কথা। স¤প্রতি দু’দেশের সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণসহ অনুপ্রবেশ, স্থানীয়দের ওপর চড়াও হওয়ার মতো ঘটনা ঘটতে দেখা যাচ্ছে, যা গভীর উদ্বেগের বিষয়। এমনিতেই সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে এ দেশের মানুষের মৃত্যুর ঘটনার কোনো সুরাহা হতে আমরা দেখিনি। বিগত সরকারের আমলে যা দেখেছি, তা হচ্ছে দু’দেশের পতাকা বৈঠক এবং ভারতীয় সীমান্ত বাহিনীর দুঃখ প্রকাশ। কিন্তু এটি কোনো সমাধান হতে পারে না। এ অঞ্চলে ভারতীয় বাহিনীর আধিপত্য স্পষ্টই সীমান্ত আইনের লঙ্ঘন।
সীমান্তকে কেন্দ্র করে দু’দেশের সম্পর্কের যে টানাপোড়েনটা দেখছি আমরা, সেটা দুই দিকের বৃহত্তর বোঝাপড়ার ঘাটতির জায়গাটাই স্পষ্ট করে তুলছে। নিকট প্রতিবেশী হিসাবে যেহেতু ভারতের সঙ্গে আমাদের বহুমাত্রিক সম্পর্ক আছে, সেটা অবশ্যই পারস্পরিক, এটা দিলি­কেও মনে রাখতে হবে এবং এ কারণেই অহেতুক উস্কানিমূলক কর্মকান্ড বিএসএফের পরিহার করা প্রয়োজন। দায়িত্ব রয়েছে আমাদের সরকার ও সীমান্ত বাহিনীরও। সীমান্তে উত্তেজনা কমাতে দ্বিপাক্ষিক আলাপ-আলোচনার দিকেই বেশি গুরুত্ব দেওয়া উচিত বলে মনে করি আমরা। সুসম্পর্কের অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়, এমন যে কোনো কাজকে কৌশলেই এড়িয়ে যাওয়ার বিকল্প নেই। একই সঙ্গে এ দেশের মানুষের আত্মমর্যাদাবোধকেও ভারতের সম্মান দেখাতে হবে। অন্যথায় সীমান্ত পরিস্থিতি ক্রমেই আরও জটিল হয়ে উঠতে পারে। বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে উত্তেজনা নিরসনে সরকার কূটনৈতিক তৎপরতা আরও জোরদার করবে, এটাই প্রত্যাশা।