খুলনা | বৃহস্পতিবার | ৩০ জানুয়ারী ২০২৫ | ১৭ মাঘ ১৪৩১

শুরু হচ্ছে তদন্ত

অস্তিত্ব নেই ‘১০০’ নং ওয়ার্ডের, কেসিসিতে অনিয়মের মাধ্যমে ইজিবাইকের লাইসেন্স ইস্যু

এন আই রকি |
০১:৩২ এ.এম | ২১ জানুয়ারী ২০২৫


খুলনা সিটি কর্পোরেশনে (কেসিসি) ব্যাটারি চালিত ইজিবাইকের লাইসেন্স প্রদানে মহাদুর্নীতির ঘটনা ঘটেছে। এই দুর্নীতি দেখে হতবাক কেসিসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। বিষয়টি নিয়ে কেসিসিতে তোলপাড়ের সৃষ্টি হয়েছে। 
২০১৯-২০২০ সালে নগর আ’লীগের সভাপতি তালুকদার আব্দুল খালেক কেসিসির মেয়র থাকাকালীন সময়ে এই দুর্নীতি হয়েছে বলে জানা গেছে। কেসিসি এলাকায় চলাচলের জন্য প্রায় ১৩০টি যাত্রীবাহী ব্যাটারিচালিত ইজিবাইকের লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে ‘১০০’ নম্বর ওয়ার্ডের ঠিকানা দেখিয়ে। বাস্তবে কেসিসি’র ওয়ার্ড রয়েছে ৩১টি। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত শুরু করতে যাচ্ছে কেসিসি কর্তৃপক্ষ। অভিযোগ রয়েছে এসব লাইসেন্স দেওয়ার সময় সঠিক ভাবে যাচাই বাছাই না করা এবং বিশেষ সুপারিশে ইস্যু করা হতে পারে। 
জানা যায়, নগরীতে ব্যাটারী চালিত ইজিবাইক চলাচল নিয়ন্ত্রণের জন্য কেসিসি লাইসেন্স দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। ২০১৯ সালে প্রথমবারের মত যাত্রীবাহী ইজিবাইকের লাইসেন্স প্রদানের জন্য ৭ হাজার ৯৮০টি আবেদন ফরম বিক্রি হয়। প্রতি ফরম বাবদ ইজিবাইকের চালকরা ৫০০ টাকা জমা দেয়। এরপর কেসিসি কর্তৃপক্ষ ৭ হাজার ৮৯৮টি লাইসেন্স ইস্যু করে। এ সময় প্রত্যেক ইজিবাইক লাইসেন্সধারীর নিকট থেকে ১০ হাজার টাকা জামানত স্বরূপ প্রায় ৭ কোটি ৮৯ লাখ টাকা নেওয়া হয়। এরপর ২০২১ সালে পণ্যবাহী ব্যাটারী চালিত ইজিবাইকের জন্য ২ হাজার ৮০২টি ফরম বিক্রি হয়। যাচাই বাছাই শেষে ২ হাজার ৯৮টি লাইসেন্স প্রদান করা হয় এবং জামানত নেওয়া হয় ২ কোটি ৯ লাখ নেওয়া হয়। যাত্রীবাহী ও পণ্যবাহী মিলেয়ে নগরীতে চলাচলের জন্য ৯ হাজার ৯৯৬টি লাইসেন্স প্রদান করা হয়। বর্তমানে প্রতি বছর লাইসেন্স নবায়ন করতে ২ হাজার টাকা এবং হারিয়ে গেলে ১৫ হাজার টাকা জরিমানা দিয়ে পুনরায় লাইসেন্স নিতে হচ্ছে। এছাড়া ১০ হাজার টাকা মূল্যের লাইসেন্স অনেকে ১ লাখ টাকায় বিক্রিও করছে এফিডেভিটের মাধ্যমে। 
কেসিসির লাইসেন্স শাখার সূত্রমতে, লাইসেন্সের আবেদনের শর্ত ছিল অবশ্যই আগ্রহীকে নগরের বাসিন্দা হতে হবে। প্রত্যেককে জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে আবেদন করতে হবে। কিন্তু অনেক আবেদনকারীর জাতীয় পরিচয়পত্রে নানান ত্র“টি ছিল। যার কারণে তাদের ঐ সময় লাইসেন্স দেওয়া হয়নি। কিন্তু যাদের লাইসেন্স দেওয়া হয়েছিল তাদের সকলের লাইসেন্সে সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড নম্বর উলে­খ করা হয়েছিল। বর্তমানে নগরীতে ৩১টি ওয়ার্ড রয়েছে। আরও জানা যায়, স¤প্রতি ১২৮-১৩০টি ইজিবাইকের লাইসেন্স পাওয়া গেছে যেখানে ওয়ার্ড নম্বর উলে­খ রয়েছে ‘১০০’। বাস্তবে এই নামে কেসিসিতে কোন ওয়ার্ডই নেই। তাহলে কি করে এটা হলো এবং এতদিন বিষয়টি কেন নজরে আসেনি সেটা নিয়ে কেসিসি জুড়েই আলোচনা শুরু হয়েছে। এসব লাইসেন্স দেওয়ার সময় সঠিক ভাবে যাচাই বাছাই না করা এবং বিশেষ সুপারিশে ইস্যু করা হতে পারে বলে অনেকে জানিয়েছেন। আবার অনেকে বলেছেন, যে সব আবেদনকারীদের জাতীয় পরিচয়পত্রে ত্র“টি ছিল তাদেরকে পরবর্তী লাইসেন্স দেওয়া হয়েছিল তবে ওয়ার্ড নম্বরটি সঠিক হয়নি। 
অন্যদিকে লাইসেন্স প্রদান করার সময় শাখাটির দায়িত্বে ছিলেন কেসিসির তৎকালীন মেয়রের আস্থাভাজন এবং আত্মীয় পরিচয় দানকারী ফারুক তালুকদার এবং আইটি শাখার দায়িত্বে ছিলেন অবসরপ্রাপ্ত নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ জাহিদ হোসেন। আরও জানা যায়, কেসিসির ইজিবাইকের লাইসেন্স শাখা আরও বেশি নজরদারীতে রাখার জন্য ডিজিটাল নম্বর প্লেট, স্টিকার এবং চালকদের জন্য আরএফআইডির কাজ চলমান রয়েছে। ইতিমধ্যে ডিজিটাল নম্বর প্লেট চলে এসেছে। এরপর লাইসেন্স শাখায় অনিয়মের বিষয়েটি নজরে আসার পর সেই কার্যক্রমও ধীর গতিতে চলছে। 
কেসিসি প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা লস্কার তাজুল ইসলাম বলেন, কেসিসিতে ওয়ার্ড ৩১টি। কিভাবে ১০০ নম্বর ওয়ার্ডে লাইসেন্স ইস্যু হলো এটা তদন্ত করা হবে। খুব দ্রুতই আমরা তদন্তের কাজ শুরু করবো।