খুলনা | শুক্রবার | ৩১ জানুয়ারী ২০২৫ | ১৭ মাঘ ১৪৩১

জুলাই আন্দোলনে আহতদের তালিকায় যুক্ত হচ্ছে ছবি

খবর প্রতিবেদন |
০১:০৪ এ.এম | ২৮ জানুয়ারী ২০২৫


জুলাই-আগস্টের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আহতদের প্রকৃত সংখ্যা এখনও জানা যায়নি। তবে আহতদের তালিকাভুক্তির কাজ চলমান আছে। এখন পর্যন্ত আহত ১২ হাজার ৩৮০ জনের নাম স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তালিকায় যুক্ত হয়েছে। আগামী ৭ ফেব্র“য়ারির মধ্যে এই তালিকা চূড়ান্ত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। গত ১৫ জানুয়ারি নিহতদের তালিকার গেজেট প্রকাশ হলেও আহতদের তালিকার কোনও গেজেট এখনও প্রকাশ করা হয়নি। তালিকায় এবার নামের সঙ্গে অন্যান্য প্রয়োজনীয় তথ্যসহ ছবি যুক্ত করার কাজ হাতে নেওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, গত ৯ জানুয়ারি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে তালিকা হালনাগাদ করার বিষয়ে এবং স্বাস্থ্য কার্ড বিতরণ নিয়ে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডাঃ সায়েদুর রহমান। সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মীর মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধ। তিনি সভায় আহতদের তালিকায় ছবি যুক্ত করার প্রস্তাব দেন।
সভায় মীর মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধ জানান, স্বাস্থ্য অধিদফতরের ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম (এমআইএস) সার্ভারে আহতদের প্রায় ৪০ শতাংশের তথ্য নেই। তিনি আহতদের নামের সঙ্গে ছবি যুক্ত করতে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য অনুরোধ জানান। এ সময় অধ্যাপক ডাঃ সায়েদুর রহমান স্বাস্থ্য অধিদফতরের এমআইএস শাখার পরিচালককে বিশেষ ব্যবস্থায় ছবি আপলোড করার ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের এমআইএস শাখার পরিচালক ডাঃ শাহ আলী আকবর আশরাফী বলেন, ‘তথ্য হালনাগাদে আমরা একটি সিস্টেম তৈরি করেছি। সেটির লিংক এসএমএস’র মাধ্যমে আহতদের কাছে পাঠানো হচ্ছে। তারা সেই লিংকে প্রবেশ করে ছবিসহ অন্যান্য তথ্য যুক্ত করতে পারবেন।’
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ওই সভায় আগামী ৭ ফেব্র“য়ারির মধ্যে আহতদের তালিকা চূড়ান্ত করার নির্দেশ দেওয়া হয়। তবে ওই সভায় ১১ হাজার ৮৪৩ জনের নাম গেজেট আকারে প্রকাশের ব্যবস্থা নিতে বলা হলেও সেটি এখনও প্রকাশ হয়নি। এছাড়া ওই সভায় আহতদের চিকিৎসায় দেওয়া স্বাস্থ্য কার্ডেও ছবি যুক্ত করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। সেখানে বলা হয়, এমআইএস থেকে মোবাইলে এসএমএস’র মাধ্যমে জেলা কমিটির সহায়তায় আহত ব্যক্তির প্রয়োজনীয় তথ্য (ছবি, এনআইডি/জন্ম নিবন্ধন সনদ, রক্তের গ্র“প) সংগ্রহ করা হবে। এমআইএস হেলথ কার্ড প্রস্তুত করার তথ্যাদি সেল কর্তৃক নিয়োগকৃত ভেন্ডরকে সরবরাহ করবে। আহত ব্যক্তিরা সংশ্লিষ্ট সিভিল সার্জন অফিস থেকে হেলথ কার্ড সংগ্রহ করবেন। হেলথ কার্ডের জন্য নতুন আবেদন গ্রহণ ও রি-ইস্যু সংক্রান্ত কার্যক্রম সংশ্লিষ্ট সিভিল সার্জন অফিস থেকে করা হবে। জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আহত ব্যক্তিরা হেলথ কার্ডের মাধ্যমে সব সরকারি হাসপাতালে বিনামূল্যে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সেবা গ্রহণ করবেন।
আন্দোলনে আহত যারা বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছিলেন, তাদের চিকিৎসার খরচ ফেরত দেবে সরকার। এ জন্য তাদের আবেদন এবং বিল দাখিল করতে হবে গণঅভ্যুত্থান সংক্রান্ত বিশেষ সেলে, অথবা সংশ্লিষ্ট সিভিল সার্জনের অফিসে। সেল প্রাপ্ত বিল যাচাই-বাছাই করার জন্য স্বাস্থ্য অধিদফতরে পাঠাবে, সেখান থেকে যাচাই-বাছাই শেষে পুনরায় বিলটি সেলে পাঠানো হবে। সিভিল সার্জন অফিসও বিল যাচাই-বাছাই করে সেলে পাঠাবে। বিশেষ সেল মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী বিল পরিশোধের ব্যবস্থা করবে।
এর আগে বিলসহ আবেদন করা লাগতো স্বাস্থ্য অধিদফতরে। সেদিনের সভায় স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডাঃ মোঃ আবু জাফর বিল পরিশোধ সংক্রান্ত জটিলতার কথা তুলে ধরেন। এরপর সেলের মাধ্যমে বিল পরিশোধের সিদ্ধান্ত হয়।
আন্দোলনে গুরুতর আহতদের বিদেশে পাঠানোর ও চিকিৎসার দায়িত্ব স্থানান্তর করা হয়েছে গণঅভ্যুত্থান সংক্রান্ত বিশেষ সেল এবং মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের কাছে। তবে আহত রোগীদের উন্নত চিকিৎসা ও পুনর্বাসনে সহায়তা করবে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ।
এ প্রসঙ্গে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, আগামী মাসে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করবে জুলাই গণঅভ্যুত্থান অধিদফতর। সেটি মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকবে। এই অধিদফতরের কাজ হচ্ছে আহতদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসন। তাই বিদেশে চিকিৎসার দায়িত্ব সেখানে হস্তান্তর করা হয়েছে। কারণ এটি ফলোআপের ওপর রাখতে হবে।