খুলনা | শুক্রবার | ৩১ জানুয়ারী ২০২৫ | ১৭ মাঘ ১৪৩১

দিঘলিয়ার যুগিপোল ইউপি চেয়ারম্যান লিংকনকে অপসারণ, প্রশাসক নিয়োগ

দিঘলিয়া প্রতিনিধি |
১১:৪৫ পি.এম | ২৯ জানুয়ারী ২০২৫


বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা দেশ থেকে পলায়নের পূর্বে বিএনপি’র কর্মীদের উপর হামলা, নাশকতা ও হত্যা মামলার কারণে আত্মগোপনে চলে যান চেয়ারম্যানরা। এরপর চেয়ারম্যানদের অপসারণের আবেদন দাখিল করেন সংশ্লিষ্ট ইউপি সদস্যরা। এরই প্রেক্ষিতে যুগিপোল ইউপি চেয়ারম্যান সাজ্জাদুর রহমান লিংকনকে অপসারণ করে উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা খন্দকার জহিরুল ইসলামকে প্রশাসক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন উপজেলা নিবার্হী অফিসার আরিফুল ইসলাম।
দিঘলিয়া উপজেলা ৬ টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত। উপজেলার ৫ টি ইউনিয়নে রয়েছে আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান। এর মধ্যে ৪ টির ইউপি চেয়ারম্যান ফৌজদারি মামলার আসামি হওয়ায় আত্মগোপনে। এর ফলে সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে ইউনিয়নবাসী। আতœগোপনে থাকা চেয়ারম্যানদের হস্তক্ষেপের ফলে সঠিকভাবে কাজ করতে পারছেনা দায়িত্বপ্রাপ্তরা। দ্রুত তাদের অপসারণের দাবি জানিয়েছেন ইউনিয়নের সাধারণ মানুষ।
অনুসন্ধানে জানা যায়, উপজেলা গাজিরহাট, বারাকপুর, দিঘলিয়া, সেনহাটি, যুগিপোল ও আড়ংঘাটা এই ৬টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত। এর মধ্যে ৫টি ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান এবং একটিতে বিএনপি সমর্থিত চেয়ারম্যান রয়েছে। আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যানদের বেশির ভাগের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা হয়েছে। তাদের প্রত্যেকে গ্রেফতার আতঙ্কের পাশাপাশি নিজেদের ওপর হামলা হওয়ার আশঙ্কায় ইউনিয়ন পরিষদে যাচ্ছেন না। 
তবে আওয়ামী লীগের ৫ জন চেয়ারম্যানের মধ্যে সদর ইউপি চেয়ারম্যান হায়দার আলী মোড়ল ক্লিন ইমেজের জনপ্রতিনিধি। দীর্ঘ ২৪ বছর ধরে সু- নামের সাথে এই ইউনিয়নের অভিভাবক হিসাবে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। পরিচ্ছন্ন রাজনীতির কারণে এলাকায় রয়েছে তার অবাধ বিচরণ।
অপরদিকে বাকি ৪ চেয়ারম্যান অনিয়ম, দুর্নীতি, হত্যা ও ফৌজদারি মামলার কারণে ৫ আগস্টের পর থেকে আত্মগোপনে চলে গেছেন।
আত্মগোপনে থাকা আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান গাজিরহাট ইউপি’র মোল­া মফিজুল ইসলাম ঠান্ডু, বারাকপুর ইউপি’র গাজী সাহাগীর হোসেন পাবেল, সেনহাটি ইউপি’র গাজী জিয়াউর রহমান জিয়া, যুগিপোল ইউপি চেয়ারম্যান সাজ্জাদুর রহমান লিংকন। এ সকল চেয়ারম্যানদের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার , স্বেচ্ছাচারিতা, জমি দখল, হত্যা ও দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। দুর্নীতির মাধ্যমে উপার্জিত অর্থ গরীব-দুঃখী মানুষের মাঝে বিলিয়ে দেওয়ার আহŸান জানিয়েছেন বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন।
উপজেলার ৪ টি ইউনিয়নে নাগরিক সেবা অব্যাহত রাখতে দ্রুত আত্মগোপনে থাকা ইউপি চেয়ারম্যানদের অপসারণের মাধ্যমে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন ইউনিয়নের সাধারণ মানুষ।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার আরিফুল ইসলাম জানান, শুনেছি চেয়ারম্যানরা অনুপস্থিত রয়েছে এ কারণে প্যানেল চেয়ারম্যানের মাধ্যমে পরিষদের কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে যোগিপোল ইউপি চেয়ারম্যান সাজ্জাদুর রহমান লিংকনকে অব্যাহতি দিয়ে প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। বারাকপুর ইউপি চেয়ারম্যান গাজী সাহাগীর হোসেন পাবেলের বিরুদ্ধে অভিযোগ পেলে তাকেও অপসারণ করে প্রশাসন নিয়োগ দেয়া হবে। 
তিনি আরো জানান, সব চেয়ারম্যান ফৌজদারি মামলার আসামি হয়েছেন তাদের আদালতের মাধ্যমে নিষ্পত্তি করতে হবে। উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন চেয়ারম্যানরা যেহেতু স্থায়ীভাবে অনুপস্থিত রয়েছেন তাঁদের বিষয়ে জেলা প্রশাসকের সাথে আলোচনার মাধ্যমে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। 
স্থানীয় সরকার, পল­ী উন্নয়ন ও সমবায় উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফ বলেন, ‘রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর জনপ্রতিনিধিরা নিরুদ্দেশ হয়েছেন। ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান-মেম্বাররাও গাঁ ঢাকা দিয়েছেন। যেখানে ১০ থেকে ১২ জন থাকার কথা, সেখানে হয়তো দু-তিনজন আছেন। এতে জনগণ সেবা বঞ্চিত হচ্ছে। আমরা এ বিষয়ে কাজ করছি। শিগগিরই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।