খুলনা | শনিবার | ০৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৫ | ২৬ মাঘ ১৪৩১

ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে ধ্বংস হওয়া শেখ মুজিবের বাড়িটি দেখতে ভিড়

খবর প্রতিবেদন |
০৫:৫৮ পি.এম | ০৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৫


রাজধানীর ধানমন্ডি ৩২ নম্বর সড়কে শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়ি ভাঙচুরের পর সর্বশেষ কী অবস্থা তা দেখতে হাজারো মানুষ ভিড় জমাচ্ছে। কেউ এসেছেন বাড়িটির বর্তমান পরিস্থিতির সাক্ষী হয়ে থাকতে, টিভিতে দেখার পর কেউ এসেছেন সরাসরি পরিদর্শনে। নানা শ্রেণি-পেশার মানুষের এখনো আগ্রহ আর উৎসাহ এই বাড়ি নিয়ে। ছবি তোলা ও ভিডিও করার পাশাপাশি অনেককে দেখা গেছে লোহালক্কড়, ভাঙাচোরা জিনিসপত্র নিতেও।

আজ শুক্রবার (০৭ ফেব্রæয়ারি) ছুটির দিন সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ঘটনাস্থলে অবস্থান করে এমন চিত্র দেখা গেছে। 

ভাঙা ভবনটির সামনে আসা আগতরা বলছেন, এই বাড়ি ভাঙা হয়েছে মূলত শেখ হাসিনার উসকানিমূলক বক্তব্যের কারণে। এছাড়াও তিনি গত ১৫ বছর এই জাতির ওপর যে জুলুম নিপীড়নের স্টিম রোলার চালিয়েছেন এতে ক্ষুব্ধ দেশের আপামর জনতা। সেই ক্ষত থেকে তারা তিন দিন আগে এই বাড়িটিতে আসেন, আগুন দেন ও ভাঙচুর করেন। শুধু তাই নয়, এই বিষয়টিকে স্মরণীয় করে রাখতে গতকাল রাতে এখানে জিয়াফতের আয়োজনও করা হয়েছিল।

লালবাগ থেকে এসেছেন গোলাম রব্বানী। তিনি বলছিলেন, এই বাড়ি থাকার যোগ্যতা হারিয়ে ফেলেছে। আমরা গত তিন দিন থেকে টিভি ও ইউটিউবে দেখেছি। আজ সরাসরি দেখতে আসলাম।

বনশ্রী থেকে আসা রফিকুল ইসলাম বলছিলেন, হাসিনার বাবার হয়তো ২৪ এ এসে কোনো দোষ করেনি। যা করার তিনি ৭১ এর পরেই করেছেন। তবে সেই শাস্তি তিনি পেয়েছেন। এখন তার মেয়ে হাসিনার কৃতকর্মের কারণে বাবার বাড়িটার এই অবস্থা হলো। এজন্য হাসিনাই দায়ী।

সেখান সকাল সাড়ে ১০টা থেকে সোয়া ১ পর্যন্ত অবস্থান করে দেখা গেছে, গত তিন দিন আগে যেমন মানুষর আগ্রহ ও উৎসাহ ছিল আজো তাই। এসেছেন নারী পুরুষ, তরুণ তরুণী, বৃদ্ধরা। কেউ এসে আবার ছবি তোলার পাশাপাশি ইট ও কনক্রিটের অংশগুলো নিয়ে যাচ্ছেন। তাদের ভাষ্য, সেগুলো তারা স্মৃতির অংশ হিসেবে বাসায় রেখে দেবেন। যেন তার পরের প্রজন্ম দেখতে পারেন হাসিনা স্বৈরাচার ছিল। ফলে তার ও তার বাবার বাড়ির পরিণতি কী হয়েছে।

ভবনটির সামনে পেছনে ও চারদিকে এখন মানুষ আর মানুষ। ভিড় করতে শুরু করেছে সামাজিক মাধ্যমে ভিডিও ছাড়নো ব্যক্তিরাও। তারা কেউ কেউ লাইভ দিচ্ছেন। আবার এরই মাঝে এক দল লোককে ধ্বংসে পড়া ভবনের রড খুলে নিতে দেখা যাচ্ছে। ফাঁকে স্মৃতিকে অম্লান করে রাখতে কেউ কেউ ছবির পাশাপাশি ভিডিও করে সামাজিক মাধ্যমে ছাড়ছেন।

মূল ভবনের নিচ, দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলায় উৎসুতক জনতা এখনো উঠছেন নামছেন। কারও মাঝে কোনো ভয় নেই। তবে এই ভবনটির পূর্ব, দক্ষিণ ও উত্তরের অংশ ভাঙার ফলে যে কোনো সময় ধ্বসে পড়তে পারে বলে মনে করছেন কেউ কেউ। এরপরও থেমে নেই লোকজনের ওঠানামা। 

একই চিত্র মূল ভবনের পূর্ব দিকের ভবনটিতেও। সেখানেও উৎসুক জনতা ভিড় করছেন। তবে দুপুর ১২টার পর পূর্ব দিকে থাকা ভবনটির দক্ষিণ কোণে লোকজন খড়কুটা, টিন ও কাঠ দিয়ে আগুন ধরিয়ে দেন। পরে সেই আগুনের ভিডিও ছবি কেউ কেউ ধারণ করছিলেন।

কেন আগুন দিলেন জিজ্ঞাসা করতেই একজনের উত্তর ছিল, জ্বলে যাক। কেন এই অংশগুলোও থাকবে!

তবে অনেকেই পলাতক শেখ হাসিনার অপকর্ম নিয়ে এখানে কথা বললেও কিছু মানুষজনকে চুপ থাকতে দেখে গেছে। তাদের এ নিয়ে প্রশ্ন করা হলেও তারা কোনো মন্তব্য করেননি। তাদের এমন নিশ্চুপ থাকার বিষয়টি দেখে কেউ কেউ বলছেন, তারা তো ফ্যাসিস্টের সমর্থক। দর্শক সেজে ভবনটির সর্বশেষ চিত্র দেখতে এসেছেন তারা।

ভারতে পালিয়ে যাওয়া ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তৃতা প্রচারের ঘোষণাকে কেন্দ্র করে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা গত বুধবার রাতে ধানমন্ডির এই বাড়ি ঘিরে ব্যাপক বিক্ষোভ করেন। একপর্যায়ে বাড়িটিতে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। বুধবার রাত ৮টা থেকে বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা পর্যন্ত এক্সকাভেটর (খননযন্ত্র), ক্রেন ও বুলডোজার দিয়ে বাড়িটির অর্ধেকের বেশি অংশ গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।