খুলনা | বৃহস্পতিবার | ১৩ মার্চ ২০২৫ | ২৯ ফাল্গুন ১৪৩১

সরকারি কেনাকাটায় দুর্নীতি হয়েছে সবচেয়ে বেশি

২০২৪-এ দুর্নীতির সূচকে দুই ধাপ অবনতি, দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় বাংলাদেশ ১৪তম

খবর প্রতিবেদন |
০১:৪৫ এ.এম | ১২ ফেব্রুয়ারী ২০২৫


বিশ্বের ১৮০টি দেশের মধ্যে সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় বাংলাদেশ ১৪তম অবস্থানে রয়েছে। দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ হিসেবে বাংলাদেশের স্কোর ২৩। সমান স্কোর নিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে একই অবস্থানে রয়েছে কঙ্গো ও ইরান। এ ছাড়া দুর্নীতির ধারণা সূচকে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান এখন ১৫১তম। গত বছর এ অবস্থান ছিল ১৪৯তম। সে হিসাবে সূচকে বাংলাদেশের দুই ধাপ অবনতি হয়েছে। বার্লিনভিত্তিক ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল (টিআই) পরিচালিত ‘দুর্নীতির ধারণা সূচক (সিপিআই) ২০২৪-এ এমন চিত্র তুলে ধরা হয়েছে।
এই প্রকাশ উপলক্ষে ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. মোঃ ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘আওয়ামী লীগ আমলে সরকারি প্রকল্পে কেনাকাটায় সবচেয়ে বেশি দুর্নীতি হয়েছে। অথচ কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। দুদকসহ দুর্নীতি প্রতিরোধে সৃষ্ট সংস্থাগুলোর নিষ্ক্রিয়তায় অর্থ পাচার ও দুর্নীতির বিস্তার ঘটেছে।’
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক আরও বলেন, ‘বিগত ১৩ বছর কর্তৃত্ববাদী সরকার মুখে দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বললেও, বাস্তবে দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দিয়েছে, লালন করেছে, এমনকি দুর্নীতি সংঘটনে সহায়তা ও অংশগ্রহণ করেছে। এর প্রভাবে যথেচ্ছ লুটপাট, দুর্নীতিবাজদের রাষ্ট্রীয় ভাবে তোষণ, আইনের সঠিক প্রয়োগ না করা এবং সার্বিক কাঠামোগত দুর্বলতায় বাংলাদেশের অবস্থানের ক্রম অবনতি হয়েছে।’
দুর্নীতি বিরোধী বাগাড়ম্বর ছাড়া এ নিয়ে পতিত আওয়ামী সরকারের কোনো বিকার বা চিন্তা দেখা যায়নি উলে­খ করে তিনি বলেন, ‘এমনকি দুর্নীতি দমনে দায়িত্বপ্রাপ্ত দুর্নীতি দমন কমিশনসহ (দুদক) অন্যান্য সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোও তাদের প্রকৃত ভূমিকা পালন করতে ব্যর্থ হয়েছে।’
মঙ্গলবার রাজধানীর ধানমন্ডিতে টিআইবি কার্যালয়ে  বৈশ্বিক দুর্নীতি ধারণা সূচক প্রকাশ করা হয়। বিশ্বের ১৮০টি দেশের ওপর জরিপ চালিয়ে এই র‌্যাঙ্কিং প্রকাশ করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন টিআইবির উপদেষ্টা (নির্বাহী ব্যবস্থাপনা) অধ্যাপক সুমাইয়া খায়ের, পরিচালক (আউটরিচ এ্যান্ড কমিউনিকেশন) মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম।
সংবাদ সম্মেলনে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. মোঃ ইফতেখারুজ্জামান বলেন, দুর্নীতির ধারণা সূচক (সিপিআই)-২০২৪ অনুযায়ী বাংলাদেশের বিগত ১৩ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। এ বছর স্কোর বিবেচনায় উচ্চক্রম অনুসারে দুই ধাপ অবনতি হয়ে বাংলাদেশের অবস্থান ১৮০টি দেশের মধ্যে ১৫১ তম এবং নিম্নক্রম অনুসারে ১৪তম। একই স্কোর নিয়ে তালিকার উচ্চক্রম অনুযায়ী বাংলাদেশের সঙ্গে যৌথভাবে ১৫১তম অবস্থানে রয়েছে কঙ্গো ও ইরান। দক্ষিণ এশিয়ায় আফগানিস্তান ১৭ পয়েন্ট নিয়ে সর্বনিম্ন স্কোর ও অবস্থানে রয়েছে। এ অঞ্চলে আফগানিস্তানের পরই বাংলাদেশের স্কোর ও অবস্থান দ্বিতীয় সর্বনিম্ন।
টিআইর সিপিআই সূচকের বিলে­ষণ বলছে, ২০২৪ সালে স্কোর বিবেচনায় বাংলাদেশের নিম্নমুখী যাত্রা সুস্পষ্ট। ২০১২ থেকে সূচকে ব্যবহৃত ১০০ স্কেলে বাংলাদেশের স্কোর ২০২২ সাল পর্যন্ত “২৫ থেকে ২৮” এর মধ্যে আবর্তিত ছিল। ২০২৩ সালে এক পয়েন্ট অবনমন হয়ে ২৪ এবং ২০২৪ সালে আরও এক পয়েন্ট অবনমন হয়ে ২৩ হয়েছে। ২০১২ থেকে ২০২৪ মেয়াদে সিপিআই স্কোরের প্রবণতা বিশ্লেষণ অনুযায়ী টানা চার বছরসহ মোট ছয়বার বাংলাদেশের স্কোর ছিল ২৬, তিনবার ২৫ এবং একবার করে ২৪, ২৭ ও ২৮। নিম্নক্রম অনুযায়ী বাংলাদেশের অবস্থান ছিল সর্বোচ্চ চারবার ১৩তম, তিনবার ১৪তম, দুইবার ১২তম এবং একবার করে ১৫, ১৬ ও ১৭তম।
গত বছর বিশ্বের ১৮০টি দেশের মধ্যে ‘সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত’ দেশের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ১০ম ছিল। দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ হিসেবে বাংলাদেশের স্কোর হয়েছে ২৪। সমান স্কোর নিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে একইঅবস্থানে ছিল আফ্রিকান রিপাবলিক, ইরান, লেবানন ও জিম্বাবুয়ে। আর ২০২৩ সালে সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১২তম। বাংলাদেশের স্কোর ছিল ২৫। 
টিআই এমন সময় সিপিআই সূচক প্রকাশ করেছে যখন দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে চলমান দুর্নীতি বিরোধী অভিযান চলমান রয়েছে। ১৯৯৫ সাল থেকে বেসরকারি সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল দ্বারা প্রতি বছর এই সূচক প্রকাশ করা হয়। ২০০১ সালে বাংলাদেশ প্রথম তালিকাভুক্ত হয়। তখন এ তালিকায় মোট ৯১টি দেশ ঠাঁই পায়।