খুলনা | শনিবার | ১৫ মার্চ ২০২৫ | ১ চৈত্র ১৪৩১

নওয়াপাড়া ডিজিটাল টেলিফোন এক্সচেঞ্জটি চলছে ২২৮ টি সংযোগ দিয়ে, লোকসানে সরকার

অভয়নগর প্রতিনিধি |
১১:৪৮ পি.এম | ১৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৫


দেশের প্রথম ডিজিটাল জেলা যশোরের অভয়নগর উপজেলার নওয়াপাড়া ডিজিটাল টেলিফোন এক্সচেঞ্জটি চলছে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে। এক্সচেঞ্জটির জরাজীর্ণ অবস্থা বিরাজ করছে বহু দিন যাবত। স্মার্টফোন, মুঠোফোন, ব্রড ব্যান্ড বা ওয়াই ফাই-এর যুগে ধীরে ধীরে উদ্যম হারিয়ে ফেলেছে শিল্প ও বন্দর নগরীর নওয়াপাড়ার ডিজিটাল টেলিফোন এক্সচেঞ্জটি। এক সময়ের জনপ্রিয় যোগাযোগ মাধ্যম টেলিফোন এখন লোকসানী প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। 
১৯৯৪ সালে শিল্প ও বন্দর নগরী নওয়াপাড়ায় দেশব্যাপী সরাসরি ডায়ালিং পদ্ধতির উদ্বোধন করেন তৎকালীন ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী তরিকুল ইসলাম। প্রাথমিকভাবে বিটিসিএল-এর নিয়ন্ত্রনাধীণ প্রতিষ্ঠানটিতে গ্রাহক সংখ্যা বাড়তে থাকলেও মোবাইল ফোনের যুগে ধীরে ধীরে গ্রাহক সংখ্যা কমার সাথে সাথে কমেছে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সংখ্যাও। খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে এ প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম। হাতেগোনা কয়েকটি সরকারি ও প্রাইভেট অফিস ছাড়া এখন আর কেউ এ প্রতিষ্ঠানের সেবা গ্রহণ করেন না। অপরদিকে নতুন গ্রাহক তৈরিতে প্রতিষ্ঠানের কোন তৎপরতাও চেখে পড়ে না। 
অফিস সূত্রে জানা যায়, পূর্বে অফিস প্রধান সামছুল আলম, লাইনম্যান নুরুল ইসলাম, গার্ড হবিবর রহমান, পিএ প্রীতিলতা, টেকনিশিয়ান তহমিনা খাতুনসহ মোট ৫ জন ছিলেন এ প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারী। বর্তমানে ওই অফিসের সদ্য যোগদান করা প্রধান এস এম রিয়াজুর রহমান, গার্ড হবিবুর রহমান ছাড়া আর কেউ নেই। যে কোনো প্রয়োজনে সরকারি অফিসের পিছনে পরিবারসহ বসবাস করা গার্ড হাবিবুর রহমানের মোবাইল নম্বর তালাবদ্ধ গেটে ঝুলতে দেখা যায়। এর আগে ২০০৭ সালে ওই অফিসে ১জন যান্ত্রিক প্রকৌশলী, ২জন লাইনম্যান, ১জন অফিস সহকারী ও ১জন নিরাপত্তা কর্মী কর্মরত ছিলেন। সরেজমিনে নওয়াপাড়া পৌরসভার সম্মুখে অবস্থিত নওয়াপাড়া ডিজিটাল টেলিফোন এক্সচেঞ্জে দেখা যায়, জনমানবশূন্য অফিসের গেট বন্ধ। ভুতুড়ে পরিবেশ বিরাজ করছে। খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, স্বপরিবারে অফিসের পিছনের কোয়ার্টারে থাকেন গার্ড হাবিবুরর রহমান। তিনি ছাড়া উপস্থিত নেই অফিসের অন্য কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। যশোর খুলনা মহাসড়ক সংস্কারের সময় সমস্ত ক্যাবল নষ্ট হয়ে যায় এবং সেবা বন্ধ থাকে ২ বছরেরও বেশি সময় ধরে। পরে নতুন ক্যাবলের মাধ্যমে এখন মাত্র ২২৮ জন গ্রাহককে এ টেলিফোন সেবা প্রদান করা হচ্ছে। যদিও এক সময় ১৩শ’ ৭২ জন গ্রাহক টেলিফোন সেবা পেত এবং মাসিক ৯২ টাকা মিনিমাম চার্জ ও টেলিফোন টু টেলিফোন মিনিট প্রতি ৩০ পয়সা কলরেট, টেলিফোন টু মোবাইল ভ্যাট সহ ৬৫ পয়সা খরচ হত বলে অফিস সূত্রে জানায়। বর্তমানেও সবকিছুর দাম বৃদ্ধি পেলেও বিটিসিএল এর কলরেট বাড়েনি। নওয়াপাড়ার কয়েকজন ব্যবসায়ী অভিযোগ করে বলেন, ভাল সেবা না পেয়ে অনেক আগেই সংযোগ বিচ্ছিন্নের আবেদন করেছি। তবুও আমার বাসায় বিল আসে, যেটা দুঃখ জনক। আমার মতে শুধু শুধু রাষ্ট্রের ক্ষতি না করে এ জনবল সম্পত্তি অন্য খাতে ব্যবহার করলে রাষ্ট্রের উন্নতি হবে। শুধু শুধু কর্মকর্তাদের বেতন দেওয়ার কোন প্রশ্ন আসে না। 
নতুন গ্রাহক সেবা নিতে প্রয়োজন জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি। সদ্য তোলা ২ কপি রঙিন পাসপোর্ট সাইজের ছবি। গ্রাহকের নাম ও পিতা-মাতার নাম সহ পূর্ণাঙ্গ ঠিকানা। এরপর বিটিসিএল বরাবর অনলাইনে কম্পিউটার থেকে সংযোগ পেতে একটি আবেদন করতে হবে। যাচাই বাছাই করে ওই আবেদন এর কপি অনলাইনে নওয়াপাড়া বিটিসিএল অফিসে পাঠানো হয়। এই সময়ে অগ্রণী ব্যাংক নওয়াপাড়া শাখায় ৬৫০ টাকা সরকারি চালান জমা দিতে হবে। আবেদন কপি এবং ব্যাংকের চালান রশীদ সহ প্রয়োজনীয় সকল কাগজ পত্র নওয়াপাড়া বিটিসিএল অফিসে জমা দিতে হবে। এরপর অফিস ওই গ্রাহকের সংযোগ দিতে যশোর খুলনা মহাসড়ক সংলগ্ন রাস্তার দুই পাশ্বে তৈরি করে রাখা পয়েন্ট থেকে নতুন সংযোগ দেবেন। তবে পয়েন্ট থেকে গ্রাহকের বাড়ি অথবা অফিস পর্যন্ত তার বা কেবল নিজের অর্থে ক্রয় করে দিতে হবে।
জানতে চাইলে কনিষ্ঠ সহকারী ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী এস এম রিয়াজুর রহমান বলেন আমি অল্প কিছু দিন এখানে যোগদান করেছি। সবকিছু ভালো করে খোঁজ-খবর নিয়ে নতুন গ্রাহক তৈরি ও সেবার মান উন্নয়নে কাজ করবো সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এখানে এসে শুনেছি যশোর খুলনা মহাসড়কের নতুন নির্মাণ কাজ করার সময়ে রাস্তার ম্যাগাডাম স্কেমিটার দিয়ে খোচার সময়ে বিটিসিএল এর ক্যাবল গুলো ছিঁড়ে যায়। আর ওই ক্যাবলগুলো রিপেয়ার করা হয়নি। উদ্ধর্তন অফিসে সমস্যা গুলো জানিয়ে চিঠি পাঠিয়েছি। দ্রুত সকল সমস্যার সমাধান করা হবে। সামনে সুযোগ আসছে একই সংযোগের মাধ্যমে ইন্টারনেট গ্রাহকের কাছে পৌঁছে দিতে।