খুলনা | বুধবার | ১২ মার্চ ২০২৫ | ২৮ ফাল্গুন ১৪৩১

সাবেক উপমন্ত্রী ও সিটি মেয়রের ক্ষমতাবলে দুধ বিক্রেতা শত কোটি টাকার মালিক

অপারেশন ডেভিল হান্ডে আটক হওয়া মোংলা পৌর আ’লীগ নেতা নাসির ছিলো দিগরাজের ত্রাস

নিজস্ব প্রতিবেদক |
০১:৩৯ এ.এম | ১৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৫


সারাদেশব্যাপী শুরু হওয়া “অপারেশন ডেভিল হান্ট”- এর অংশ হিসেবে খুলনা মহানগরীতেও নানা অপরাধ কর্মকান্ডের সাথে জড়িতদের আটক করা শুরু হয়েছে। সে অভিযানে গত মঙ্গলবার ১১ ফেব্র“য়ারি মধ্যরাতে নগরীর সোনাডাঙ্গা আবাসিক এলাকার ১১ নং রোডে নিজ বাড়ির দোতলা থেকে আটক করা হয় মোংলা পৌর আওয়ামীলীগের কোষাধ্যক্ষ নাসির হাওলাদারকে। একে একে বেরতে শুরু করেছে এই নাসির হাওলাদারের নানা কুকীর্তির কথা। ভ‚মিদস্যু, নারী ব্যবসা, মাদক, সর্ণ চোরা চালান, খুনের তথ্য লোপাটসহ নানা অভিযোগ এই আওয়ামী লীগ নেতার বিরুদ্ধে। 
আওয়ামী সরকারের আমলে বাগেরহাটের মোংলা উপজেলার দিগরাজ এলাকায় এক দস্যুতার সম্রাজ্য গড়ে তুলেছিলো মোংলা পৌর আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ নাসির হাওলাদার। মালিক হয়েছে শত শত কোটি টাকার। একের পর এক জমি দখল করে বুক ফুলিয়ে এলাকায় বসবাস করা এই নাসির ছিলো খুলনা সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেকের একান্ত সহচর। এছাড়াও সাবেক মেয়রের স্ত্রী সাবেক উপমন্ত্রী বেগম হাবিবুন নাহারও নাসিরকে দিতেন ছায়া। সব মিলিয়ে কোনো কিছুর তোয়াক্কা না করে দিনের পর দিন নানা অপরাধের সাথে জড়িয়ে ছিলেন এই আওয়ামী লীগ নেতা। 
দিগরাজ এলাকার ব্যবসায়ী ও নাসিরের শ্যালক মোঃ শাহিন শেখ সময়ের খবরকে বলেন, নাসির সব সময় তার স্ত্রী আসমা আরোজকে মারধোর করতো। গত ২০১৯ সালের মে মাসে নাসির আসমাকে হত্যা করে। ঘুমের ওষুধ খাইয়ে গলায় ফাঁস দিয়ে ঝুলিয়ে রাখে। খালেক তালুকদারের কারণে আমরা কোনো মামলা করতে পারিনি তার বিরুদ্ধে। সে আমার বোনের ময়না তদন্তের রিপোর্ট পর্যন্ত গায়েব করে দিয়েছে। 
মোঃ শাহিন শেখের বড় ভাই মোংলার একটি স্থানীয় পত্রিকার সম্পাদক মোঃ হেমায়েত হোসেন সময়ের খবরকে বলেন, আমার তিনটি জায়গা নাসির জোর করে ভোগ দখল করছে। আমার ছোট ভাইকে ফুসলিয়ে তার কাছ থেকে জমি লিখিয়ে নেয়। পরে আমাদের পুরো জমি সে দখল করে নেয়। তৎকালীন সময় খালেক তালুকদারকে বলা হলে তিনি কোনো ব্যবস্থা নেননি। স্থানীয় প্রশাসনও সামনে আসেনি। এখনো পর্যন্ত সে সেই জমি দখল করে আছে। সকল কাগজপত্র আমার থাকার পরেও ভোগদখল করতো নাসির। থানা এবং বিএনপি’র একটা অংশের সহায়তার শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুৎ হওয়ার পরেও সে আমাদের একটা জমির কাজে বাধা দিয়েছে, লোকজনকে তাড়িয়ে দিয়েছে। এলাকায় সরকারি জমি ও খালের জমি প্লট তৈরি করে নাসির বিক্রি করতো বলে জানান তিনি। 
সাংবাদিক আজিম সময়ের খবরকে বলেন, মোংলা পৌর আওয়ামী লীগ নেতা নাসির হাওলাদার এক সময়ের দুধ বিক্রেতা থেকে এখন হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক হয়েছে। আমি ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা মামলায় জেলে থাকাকালীন এই ভূমিদস্যু নাসির হাওলাদার মোংলার দিগরাজ হাজিবাড়ি খুলনা-মোংলা মেইন সড়কের পাশে আমার মা'য়ের (৩৯ শতক) তিন কোটি টাকার জমি দেড় কোটি টাকা চুক্তিতে প্রতারণা করে মা'য়ের স্বাক্ষর নিয়ে নেয়। পরবর্তীতে জমির পাওনা টাকা আনতে গেলে আমাদের দূর-দূর করে তাড়িয়ে দেয়। আদালতে ওই জমির মামলার বাদীও ছিলো আমার আম্মা। বর্তমানে সেই জায়গার উপর প্রতারক নাসির মার্কেট বানিয়ে নিয়েছেন।
এই ঠকবাজ ও মামলাবাজ নাসির স্থানীয় প্রতিমন্ত্রী ও মেয়রের ছত্রছায়ায় এসকল অপরাধমূলক কর্মকান্ড করে আসছিলো। ২০১৬-১৭ সালে খোকা তালুকদার হত্যা মামলার আজও কোন সূরাহা হয়নি। সড়ক দুর্ঘটনা বলে চালিয়ে দেওয়া হয়েছে। সিআইডি ডিবি সবাই টাকা খেয়ে তার কাছে এ হত্যা মামলার বিচার পাইনি বলে অভিযোগ তার পরিবারের। 
নাসিরের বিরুদ্ধে চোরাচালান থেকে শুরু করে মাদকের সাথে সম্পৃক্ততার অভিযোগ রয়েছে। এমনকি তার ক্ষমতা ও অস্ত্রের ঝনঝনানি দিগরাজ ও মোংলার সাধারণ মানুষকে ভাবিয়ে তুলেছিলো। বর্তমানে এই নাসির হাওলাদারের খুলনা, মোংলা ও দিগরাজ এলাকায় কয়েকটি বাড়ি, মার্কেট ও কয়েকশ’ বিঘা জমির মালিক। অবশেষে অপারেশন ডেভিল হান্ট যৌথবাহিনীর অভিযানে শীর্ষ সন্ত্রাসী ও ভূমিদস্যু নাসির হাওলাদার খুলনা মহানগরীর সোনাডাঙ্গা আবাসিক এলাকার তার নিজ বাড়ি থেকে আটক হয়েছে। রাতে প্রায় ৩ ঘন্টা অভিযান পরিচালনা করে তাকে আটক করা হয়।