খুলনা | শুক্রবার | ১৪ মার্চ ২০২৫ | ২৯ ফাল্গুন ১৪৩১

সঙ্গীতশিল্পী প্রতুল মুখোপাধ্যায় মারা গেছেন

খবর বিনোদন |
০১:৩৯ পি.এম | ১৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৫


মারা গেছেন ‘আমি বাংলায় গান গাই’খ্যাত শিল্পী প্রতুল মুখোপাধ্যায়। বার্ধক্যজনিত কারণে এক মাসের বেশি সময় ধরে হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন প্রতুল মুখোপাধ্যায়। গত সপ্তাহ থেকে ছিলেন আইসিইউতে চিকিৎসকদের নিবিড় পর্যবেক্ষণে। আজ শনিবার সকালে কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে মারা যান এই গীতিকার, সুরকার ও সংগীতশিল্পী। তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৩ বছর।

গত জানুয়ারিতে এসএসকেএমে ভর্তি করানোর সময় তাঁর নাক দিয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছিল। তাই স্নায়ু এবং নাক কান গলার বিশেষজ্ঞদের পর্যবেক্ষণে চিকিৎসা হয় তাঁর। ফেব্রুয়ারির শুরুতে হঠাৎ শ্বাসকষ্ট শুরু হলে চিকিৎসকেরা পরীক্ষা করে জানান, হার্ট অ্যাটাক হয়েছে গায়কের। দ্রুত তাঁকে কার্ডিওলজি বিভাগে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে চিকিৎসা চলাকালে শিল্পীর ফুসফুসেও সংক্রমণ দেখা দেয়। দ্রুতই শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটতে থাকে।

প্রতুল মুখোপাধ্যায়ের শারীরিক অবস্থার অবনতির কথা শোনার পর গত বুধবার সন্ধ্য়ায় এসএসকেএম হাসপাতালে শিল্পীকে দেখতে যান পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এর আগে গত ১৫ জানুয়ারিও হাসপাতালে দেখতে গিয়েছিলেন তিনি। সে সময় হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে প্রতুল মুখোপাধ্যায় ‘আমি বাংলায় গান গাই’ গেয়ে শোনান মমতাকে।

অবিভক্ত পূর্ববঙ্গে জন্ম, পরবর্তীতে পশ্চিমবঙ্গে চলে যান প্রতুল। কিন্তু বাঙালিয়ানা আদ্যোপান্ত জড়িয়েছিল তাঁর সঙ্গে।

তাঁর কণ্ঠে আমি বাংলায় গান গাই আজও মুখে মুখে ফেরে। পাশাপাশি, ডিঙা ভাসাও সাগরে-ও অত্যন্ত পছন্দ অনুরাগীদের। গান গাওয়া, লেখা, সবেতেই নিজের প্রতিভার জাত চিনিয়েছেন।

অন্ত্রের অস্ত্রোপচারের পর হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন প্রবীণ শিল্পী। গত সোমবার রাতে তাঁর শারীরিক অবস্থার দ্রুত অবনতি হওয়ায় আইটিইউতে স্থানান্তরিত করা হয়েছিল তাঁকে। অবশেষে আজ শনিবার সকালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন প্রতুল মুখোপাধ্যায়।

শিল্পীর প্রয়াণ হলেও থেকে যাবে তাঁর অসামান্য সৃষ্টির মৌতাত। ১৯৪২ সালের ২৫ জুন অবিভক্ত বাংলার বরিশালে জন্ম প্রতুলের। বাবা প্রভাতচন্দ্র মুখোপাধ্যায় ছিলেন সরকারি স্কুলের শিক্ষক। মা বাণী মুখোপাধ্যায় ও প্রতুলকে নিয়ে দেশভাগের পরে এপার বাংলায় চলে আসেন তিনি।

থাকতে শুরু করে রাজ্যের হুগলি জেলার চুঁচুড়ায়। অল্প বয়স থেকেই কবিতায় সুর দিতেন প্রতুল মুখোপাধ্যায়।

কবি মঙ্গলচরণ চট্টোপাধ্যায়ের ‘আমি ধান কাটার গান গাই’ কবিতা দিয়ে শুরু। নিজেও গান লিখতেন। অথচ প্রথাগত কোনও সঙ্গীতশিক্ষা তিনি নেননি।

নিজের হৃদয় নিঃসৃত আবেগকেই সুর ও কথার মেলবন্ধনে বেঁধে ফেলতে শিখেছিলেন।

যেভাবে আদিম মানব সহজাত ভঙ্গিতে গুহার নিঃসীম অন্ধকারে সুরের সাম্পানে পাড়ি দিত অচিন দেশে, সেভাবেই আজীবন প্রতুল নিজের হৃদয়ে জ্বালিয়ে রেখেছিলেন গানের প্রদীপ।

হাসপাতালের বিছানায় শুয়েও চিকিৎসকদের আমি বাংলায় গান গাই শোনাতেন তিনি। তবে এই একটিই গান নয়, প্রতুল সারা জীবন ধরে অসংখ্য মণিমুক্তো সৃষ্টি করে গিয়েছেন।

বাংলা আধুনিক গান থেকে জাপানি গান, আবার হিন্দি ছবির গান থেকেও উপাদান সংগ্রহ করেছেন। সৃষ্টি করেছেন একের পর এক গান। জীবনের প্রথম অ্যালবাম ‘পাথরে পাথরে নাচে আগুন’ (১৯৮৮)।

তবে সেটি একক অ্যালবাম নয়। অন্য শিল্পীদের সঙ্গে মিলে কাজ করতে হয়েছিল।

এরপর ১৯৯৪ সালে যেতে হবে প্রতুলের প্রথম একক অ্যালবাম। শেষ অ্যালবাম ‘ভোর’ (২০২২)।

সেখানে সংকলিত হয়েছিল শিল্পীর অপ্রকাশিত গানগুলি।

তাঁর জনপ্রিয় গানের মধ্যে আমি বাংলায় গান গাই ছাড়াও আলু বেচো, ছোকরা চাঁদ, তোমার কি কোনও তুলনা হয়, সেই মেয়েটি, ফেব্রুয়ারির একুশ তারিখ-এর মতো গানও শ্রোতার মন জিতেছে বারবার।

প্রতুল মুখোপাধ্যায়ের জন্ম ১৯৪২ সালে বরিশালে। তাঁর আলোচিত অ্যালবামগুলোর মধ্যে রয়েছে পাথরে পাথরে নাচে আগুন (১৯৮৮), যেতে হবে (১৯৯৪), ওঠো হে (১৯৯৪), কুট্টুস কাট্টুস (১৯৯৭), স্বপ্নের ফেরিওয়ালা (২০০০), তোমাকে দেখেছিলাম (২০০০), স্বপনপুরে (২০০২), অনেক নতুন বন্ধু হোক (২০০৪), হযবরল (২০০৪), দুই কানুর উপাখ্যান (২০০৫), আঁধার নামে (২০০৭)। বাংলাদেশে বেঙ্গল ফাউন্ডেশন থেকে প্রতুল মুখোপাধ্যায়ের সর্বশেষ অ্যালবাম প্রকাশিত হয় ২০১১ সালের মার্চে।