খুলনা | শনিবার | ১৯ এপ্রিল ২০২৫ | ৬ বৈশাখ ১৪৩২

আহলান ও সাহলান হে মাহে রমজান

রোজার গুরুত্বপূর্ণ আধুনিক মাসয়ালা

মুফতি রবিউল ইসলাম রাফে |
০১:৩৪ এ.এম | ০৭ মার্চ ২০২৫


আজ ৬ রমজান। মাহে রমজানের রহমত দশকের আজ ষষ্ঠ দিন। রমজান মাস আল­াহর কাছে আমল কবুলের মাস। কিন্তু শর্ত হল আমলটি অবশ্যই ত্র“টিমুক্ত হতে হবে। হাদিসে আছে, অনেক রোজাদার এমন আছে যারা রোজার কষ্ট ছাড়া আর কিছুই পায় না, আর এমন রাত্রি জাগরণকারী আছে যারা রাত্রি জাগরণের কষ্ট ছাড়া আর কিছুই পায় না (ইবনে মাজাহ, নাসাঈ)। কিছু কাজের কারণে রোজা ভেঙে যায়, আবার কিছু কাজ রোজাকে  ত্র“টিযুক্ত করে, আবার কিছু কাজ করলে রোজা ভাঙে না। আজ রোজার কিছু আধুনিক মাসয়ালা বা নিয়মকানুন জানবো যেগুলো জানা খুবই জরুরি। যেহেতু এই সমস্ত ঘটনা ও মাসয়ালা নবী বা সাহাবীদের জমানায় ছিল না, সে কারণে সাধারণ মানুষ অধিকাংশ সময় এই মাসয়ালাগুলোর ক্ষেত্রে তালগোল পাকায়ে ফেলেন। উদাহরণস্বরুপ, চোখে ড্রপ, কানে ড্রপ ব্যবহার ও ওয়াশ করাতে রোজা ভাঙ্গবে না। অনুরুপভাবে কানে পানি, তেল ইত্যাদি প্রবেশ করলেও রোজা ভাঙবে না। নাইট্রো গ্লিসারিন ব্যবহার করলে রোজা ভাঙবে না। নাইট্রো গ্লিসারিন হার্টের রোগীরা ব্যবহার করেন। ওষুধটি জিহব্বার নীচে ২/৩ ফোটা দেয়ার পর সাথে সাথে শিরার মাধ্যমে রক্তের সাথে মিশে যায়। ইনহিলার ব্যবহার করলে রোজা ভেঙে যায়। তাই রোজা অবস্থায় যদি এটা ব্যবহার করা হয়, তাহলে পরবর্তীতে এর কাযা করে নিতে হবে। ইনহিলার ব্যবহারের পর সুস্থ থাকলে, বাকি দিন অনাহারে কাটাতে হবে। এন্ডোসকপি করালে যদি টিউবের সাহায্যে ভিতরে পানি বা ওষুধ দেয়া  হয়, তাহলে রোজা ভেঙে যাবে। আর যদি ভিতরে ওষুধ বা পানি কিছুই না দেয়া  হয়, তাহলে রোজা ভাঙবে না।  এনজিওগ্রামের কারণে রোজা ভাঙবে না। অক্সিজেন নিলে রোজা ভাঙবে না। ইঞ্জেকশন, ইনসুলিন, স্যালাইন নিলে রোজা ভাঙবে না। তবে বিনা ওজরে গ্লুকোজ জাতীয় ইঞ্জেকশন নেওয়া, মাকরুহে তাহরীমী বা হারামের কাছাকাছি। মহিলাদের প্রসাবের রাস্তা দিয়ে ভেজাইনাল সাপোজিটোরিস ওয়াস, ভেজিনোসকপি ইত্যাদি প্রবেশ করালে রোজা ভাঙবে না। রক্ত ডায়ালাইসিস করালে রোজা ভাঙবে না। মারাত্মক সমস্যা ছাড়া রমজান মাসে দাঁত তোলা মাকরূহ বা দোষণীয়। একান্ত প্রয়োজনে দাঁত তুললে রোজা ভাঙবে না, যদি ওষুধ অথবা এ পরিমাণ রক্ত যা থুথুর থেকে বেশি বা থুথুর সমান সমান মুখের ভিতরে না যায়। পেশাবের রাস্তায় ক্যাথেটার লাগালে রোজা ভাঙ্গবে না। এমআর করালে রোজা ভেঙে যায়। রমজানে এক দেশ থেকে অন্য দেশে সফরের কারণে কারো রোজা যদি ২৭টি বা ২৮টি হয়ে যায়, অর্থাৎ সে ২৭টি বা ২৮টি রোজা রাখার পর যে দেশে গেছে, সে দেশের ঈদের চাঁদ উদিত হয়ে যায়, তাহলে সে ঐ দেশের লোকদের সাথে ঈদ করবে এবং পরবর্তীতে একটি বা দু’টি রোজা কাযা করে ২৯টি রোজা পূর্ণ করে নিবে। অনুরূপভাবে এক দেশ থেকে আরেক দেশে সফরের কারণে কারো রোজা যদি ৩০টির বেশি হয়ে যায় যেমন, কেউ সৌদী ছিল সেখানে বাংলাদেশের এক দুই দিন আগেই রোজা শুরু হয়েছে, এরপর সেখানে ৩০টি রোজা পূর্ণ করে বাংলাদেশে আসলো, তার রোজা ৩০টি হলেও বাংলাদেশে ঈদের চাঁদ দেখা যায়নি। এক্ষেত্রে তার কর্তব্য হলো, রমজানের সম্মানার্থে রোজা রাখা এবং এদেশের মানুষের সাথে ঈদ করা।  
লেখক : আরবী সাহিত্যিক ও মুহাদ্দিস, জামি’য়া ইসলামিয়া মারকাযুল উলূম, বাগমারা, খুলনা।