খুলনা | বুধবার | ১২ মার্চ ২০২৫ | ২৮ ফাল্গুন ১৪৩১

আ’লীগ নেতা শাকিলের রিমান্ড শুনানিকালে হট্টগোল, বিচারকের এজলাস ত্যাগ

নিজস্ব প্রতিবেদক, সাতক্ষীরা |
০২:০২ এ.এম | ১২ মার্চ ২০২৫


সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও শ্রীউলা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আবু হেনা শাকিলের রিমান্ড শুনানিকালে অপ্রীতিকর পরিস্থিতির মুখে এজলাস ত্যাগ করেছেন সাতক্ষীরা আমলী-৩নং আদালতের বিচারক মারুফা আক্তার। মঙ্গলবার বেলা ১১টার সময় এজলাস ত্যাগের পর দিনভর ওই আদালতের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। ফলে বিচারপ্রার্থীরা পড়েন দুর্ভোগে।
সাতক্ষীরা জজ কোর্টের কয়েকজন আইনজীবী জানান, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট সরকার পতনের দিন আশাশুনির প্রতাপনগরে হিজলিয়া গ্রামের রহিম আলী সরদারের ছেলে আলমসহ তিনজন মারা যান। গুলিতে আহত হন আরও সাতজন। এ ঘটনায় নিহত আলমের বাবা রহিম আলী বাদী হয়ে একই বছরের ১৫ আগস্ট প্রতাপনগর ইউপি চেয়ারম্যান জাকির হোসেনসহ অজ্ঞাতনামা ১৫ জনের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় সন্ধিগ্ধ আসামি হিসেবে গ্রেফতার দেখানো হয় আশাশুনি উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও শ্রীউলা ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান আবু হেনা শাকিলকে। মঙ্গলবার বেলা পৌনে ১১টায় আমলী আদালত-৩ এ তার রিমান্ড শুনানি শুরু হয়।
সাত দিনের রিমান্ড আবেদনের শুনানিতে অংশ নেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা আশাশুনি থানার পুলিশ পরিদর্শক আব্দুল ওয়াদুদ, আদালতের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপ-পরিদর্শক বিশ্বনাথ রায়, রাষ্ট্রপক্ষের পিপি এড. আব্দুস সাত্তার, জেলা আইনজীবী সমিতির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও জেলা জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সদস্য এড. নুরুল আমিনসহ কমপক্ষে ২৫ জন আইনজীবী।
আসামিপক্ষে শুনানিতে অংশ নেন জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি এড. এম শাহ আলমসহ কয়েকজন।
উভয়পক্ষের শুনানি শেষে বিচারক মারুফা আক্তার আসামি আবু হেনা শাকিলকে কারাফটকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য এক দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এ সময় রাষ্ট্রপক্ষের সঙ্গে শুনানিতে অংশ নেওয়া এড. নুরুল আমিন বিচারককে উদ্দেশ্য করে বলেন, তিনি ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের দোসর, আওয়ামী লীগ সরকারের সময় তার নিয়োগ, তিনি ওই চেয়ারে বসার যোগ্য নন। এ ধরণের একটি মামলায় কেন আবু হেনা শাকিলকে কারাফটকে রিমান্ড মঞ্জুর করলেন তা তাদের জানতে বাকি নেই।
একপর্যায়ে বিচারক এজলাস ছেড়ে নিজের খাস কামরায় চলে যান। বিকেল সাড়ে তিনটা পর্যন্ত বিচারক আর এজলাসে না ওঠায় বিচারপ্রার্থীদের বিচার কার্যক্রম বন্ধ হওয়ায় বাড়ি চলে যেতে হয়।
এ ব্যাপারে এড. নুরুল আমিন বলেন, বিচারক একটি স্পর্শকাতর হত্যা মামলায় আওয়ামী লীগ নেতা আবু হেনা শাকিলের থানা হেফাজতে রিমান্ড মঞ্জুর না করে কারাফটকে জিজ্ঞাসাবাদের নির্দেশ দেওয়াটা তারা মেনে নিতে পারেননি। সে কারণে তিনি ওই বিচারককে উদ্দেশ্য করে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের দোসর বলেছেন। তিনি ওই চেয়ারের জন্য যোগ্য নয় বলে মনে করেন। এ কারণে ওই আদালতের কার্যক্রম বন্ধ থাকলে সেটা দুর্ভাগ্য ছাড়া কিছু নয়।
সাতক্ষীরা জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি এম শাহ আলম বলেন, একজন আইনজীবী আদালতে আইনজীবী সুলভ আচরণ না করায় বিচারক এজলাস ছেড়ে চলে যান।
সাতক্ষীরা জজ কোর্টের পিপি এড. আব্দুস সাত্তার জানান, তিনি রাষ্ট্রপক্ষে দাঁড়িয়ে রিমান্ড শুনানিতে অংশ নিয়েছিলেন। অ্যাড. নুরুল আমিন বিচারককে উদ্দেশ্য করে ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসরসহ কয়েকটি কথা বলার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, বিষয়টি নিয়ে ওই আদালতের কার্যক্রম বিকেল সাড়ে তিনটা পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে কিনা তা তিনি জানেন না।
সাতক্ষীরা বিচারিক আদালতের ভারপ্রাপ্ত প্রশাসনিক কর্মকর্তা ইসমাইল হোসেন বিচারক মারুফা আক্তারের বরাত দিয়ে সাংবাদিকদের বলেন, আদালত থেকে বিচারক নেমে যাওয়ার পর শারীরিক অসুস্থতার কারণে তিনি আর এজলাসে উঠতে পারেননি।