খুলনা | শনিবার | ১৫ মার্চ ২০২৫ | ১ চৈত্র ১৪৩১

ইফতার মাহফিলে মামুনুল হক

কেউ দেশবিরোধী চক্রান্তে লিপ্ত হলে মানুষ কঠোর হস্তে দমন করবে

খবর প্রতিবেদন |
০১:২৯ এ.এম | ১৫ মার্চ ২০২৫


পৃথিবীর কোনো উন্নত ও স্থিতিশীল রাষ্ট্রে মানবাধিকার অফিস কেউ করতে দেয়নি বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মামুনুল হক। তিনি বলেন, আমেরিকাও দেয়নি, ভারতও দেয়নি। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে যদি কেউ বাংলাদেশ বিরোধী চক্রান্তে লিপ্ত হয় বাংলাদেশের মানুষ তাকে কঠোর হস্তে দমন করবে। 
শুক্রবার বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস আয়োজিত ইফতার মাহফিলে উপস্থিত আমন্ত্রিত মেহমানদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে এসব কথা বলেন তিনি। রাজধানীর পল্টনস্থ একটি হোটেলে রাজনীতিবিদ, কূটনীতিবিদ, উলামায়ে কেরাম ও বিশিষ্টজনদের  সম্মানে এই ইফতার মাহফিলের আয়োজন করা হয়।
মামুনুল হক বলেন, আজকে একটি উন্মুক্ত ও স্বাধীন পরিবেশে রমজানুল মোবারক উদ্যাপন করছি। দীর্ঘদিন বাংলাদেশের মানুষকে স্বদেশে পরবাসীর মতো জীবন যাপন করতে হয়েছে। মুক্ত অবস্থায়ও বন্দিত্বের অভিশাপ নিয়ে আমাদের চলাফেরা করতে হয়েছে। অসংখ্য অগণিত রাজনৈতিক নেতা-কর্মী গুম খুন ও হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, অনেকে মাসের পর মাস ফেরারি জীবন যাপন করতে হয়েছে। বাংলাদেশের মানুষ প্রত্যক্ষ করেছে, রাজনীতি করা কতটা অপরাধ। শুধু রাজনীতি করার অপরাধে হাজার হাজার নেতা-কর্মীকে বন বাদাড়ে ঘুরে বেড়াতে হয়েছে। আমরা আল­াহ রাব্বুল আলামিনের শুকরিয়া আদায় করছি যিনি ঐতিহাসিক জুলাই-বিপ্লবের মাধ্যমে দেশের বুকের ওপর চেপে বসা জগদ্দল পাথর স্বৈরাচারী রেজিম ফেরাউনকে উৎখাত করে এই জাতির ওপর মহান নেয়ামত দান করেছেন। মুক্ত বাতাসে আমাদের নিশ্বাস নেওয়ার সুযোগ দান করেছেন।
মামুনুল হক বলেন, একটি সুন্দর বাংলাদেশ গড়ার জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ওপর আমরা আস্থা রাখতে চাচ্ছি। ইতোমধ্যে সরকারের পক্ষ থেকে আগামী বিনির্মাণের লক্ষ্যে সংস্কারের ব্যাপক উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। যে উদ্যোগকে দলমত নির্বিশেষে সব রাজনৈতিক পক্ষ স্বাগত জানিয়েছে এবং এখনও পর্যন্ত সবাই সহযোগিতা করে যাচ্ছে। সংবিধানসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যাপক সংস্কারের মাধ্যমে আমরা আশা করছি আগামী বাংলাদেশে বহুদল ও মতের সম্মিলনে একটি সহনশীল রাজনৈতিক পরিবেশ গড়ে ওঠবে।
হেফাজতের এই নেতা বলেন, আজকে রাজনৈতিকভাবে এমন অবস্থানে এসে উপনীত হয়েছে, যেখানে আমরা আশাবাদী সম্মিলিতভাবে একটি সুন্দর বাংলাদেশ গড়ে তুলতে পারব। তবে সর্বত্রই একটি আশঙ্কা তাড়া করে বেড়াচ্ছে, না জানি পরাজিত শক্তি আবার রাজনীতিতে পুনর্বাসিত হয়ে যায়। একটি বিষয়ে সব রাজনৈতিক পক্ষকে একমত হওয়ার আহŸান জানাই। দেশে অনেক সংকট থাকলেও তারপরও এক ধরনের স্বস্তির আবহ সৃষ্টি হয়েছে। এই রমজানে দ্রব্যমূল্যের লাগামহীনতা রোধ করা রয়েছে। রাজধানীসহ সারাদেশে লোডশেডিং একেবারে কম হচ্ছে।
মাওলানা মামুনুল হক বলেন, বাংলাদেশ মুসলিম প্রধান দেশ। এ দেশের জনগণ ইসলামের জন্য নিবেদিত প্রাণ। ইসলামের অবমাননাকর কোনো বিষয়কে মানুষ মেনে নেবে না। ইতোমধ্যে একজন রূপান্তরিত পুরুষকে অদম্য নারী হিসেবে রাষ্ট্রীয়ভাবে সম্মাননা দিয়ে বাংলাদেশের কৃষ্টি কালচারকে অবমাননা করা হয়েছে। সেখান থেকে কিছুটা চিন্তার ভাঁজ আমাদের কপালে পড়ছে।
শিশু আসিয়াসহ সব ধর্ষণকাণ্ডের বিচার দাবি করে তিনি বলেন, আইনের অনেক ফাঁকফোকর রয়েছে। অনেক ছোট খাটো বিষয়কে এইসব আইনের সঙ্গে গুলিয়ে ফেলে কঠোরতর অপরাধকে হালকা করে ফেলা হচ্ছে। নারী শিশু ও সমাজের দুর্বল মানুষদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে।
আমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জামায়াতে ইসলামি বাংলাদেশের আমির ডাঃ শফিকুর রহমান, বিএনপি’র জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দীন আহমেদ, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসচিব অধ্যক্ষ মাওলানা ইউনুস আহমাদ, খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ড. আহমদ আবদুল কাদের, গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নূর, জাতীয় নাগরিক পার্টির সদস্য সচিব আখতার হোসেন, ইসলামী ঐক্য আন্দোলনের আমির ড. মাওলানা ঈসা শাহেদী, এনডিএম চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ, ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব মাওলানা সাখাওয়াত হোসাইন রাজী, এবি পার্টির মহাসচিব ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ প্রমুখ।
কূটনৈতিকদের মধ্যে চীন, ইরান, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান হাইকমিশনের প্রতিনিধিগণ উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের পক্ষ থেকে আরও উপস্থিত ছিলেন দলের মহাসচিব মাওলানা জালালুদ্দীন আহমদ, সিনিয়র নায়েবে আমির মাওলানা ইউসুফ আশরাফ, নায়েবে আমির মাওলানা রেজাউল করীম জালালী, মাওলানা মহিউদ্দিন রাব্বানী, মাওলানা হেলালুদ্দীন, মাওলানা শাহিনুর পাশা চৌধুরী, মাওলানা কুরবান আলী কাসেমী, যুগ্ম-মহাসচিব মাওলানা আতাউল­াহ আমীন, মাওলানা আব্দুল আজীজ, মুফতি শরাফত হোসাইন, মিডিয়া সমন্বয়ক হাসান জুনাইদ প্রমুখ।