খুলনা | শনিবার | ১৯ এপ্রিল ২০২৫ | ৬ বৈশাখ ১৪৩২

যাকাত মালকে পবিত্র করে

মুফতি রবিউল ইসলাম রাফে |
০১:৫৭ এ.এম | ১৯ মার্চ ২০২৫


পবিত্র মাহে রমজানের মাগফিরাতের দশকের আজ অষ্টম দিন। রমজান মাস নেকী অর্জনের মাস। এই মাসে প্রতিটি নেক আমলের ছওয়াবকে কমপক্ষে সত্তর গুণ বৃদ্ধি করা হয়। এই জন্য এই মাসে দান-খয়রাত করলে অথবা যাকাত দিলে অন্য মাসের চেয়ে অনেক গুণ বেশী ছওয়াব পাওয়া যাবে। যাকাত দেয়ার সময় যদিও রমজানের সঙ্গে সম্পর্কিত না, তার পরেও অনেকে বাড়তি ছওয়াব হাসিলের জন্য এই মাসে যাকাত দিয়ে থাকেন। যাকাত হলো মালের উপর গরীবের হক বা অধিকার, এটা কোন অনুগ্রহ নয় যে দিলাম বা দিলাম না। এই হক মহান আল্লাহ জাল্লা শানুহই ঠিক করে দিয়েছেন। যাকাত কে আল্লাহ তায়ালা বিত্তবানদের উপর ফরজ করেছেন। কুরআন শরীফে বার বার আদেশ করা হয়েছে নামাজ কায়েম কর, যাকাত আদায় কর। যাকাত আদায় করলে মাল পবিত্র হয়। আর যাকাত আদায় না করলে সম্পূর্ণ মালের ভিতর নাপাকি লেগে থাকে। আল্লাহপাক এরশাদ করেন, তাদের সম্পদ হতে যাকাত গ্রহণ করবে। এর দ্বারা তুমি তাদেরকে পবিত্র করবে এবং পরিশোধিত করবে (সূরা তওবা: ১০৩)। যাকাত দিলে যেমন মালের পবিত্রতা হাসিল হয়, ঠিক তেমনি দ্বীলের পবিত্রতাও হাসিল হয়। তাছাড়া, যাকাত কে ইসলামের পাঁচটি বুনিয়াদ বা ভিত্তির একটি বলে হাদিসে উল্লেখ আছে। আমরা বিত্তবানরা যদি নিয়মিত যাকাত দিই তাহলে সমাজে কোন অভাবী, গরীব থাকতে পারে না, কেউ না খেয়ে মরতে পারে না। আজ সারা পৃথিবীতে দরিদ্র মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিয়ে হৈ চৈ পড়ে গেছে। কিন্ত ইসলামের এই সুমহান যাকাত ব্যবস্থা যদি চালু থাকে তাহলে সমস্ত দুনিয়ার মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে। এর প্রমাণ হযরত সাহাবায়ে কেরামের যুগ। ইসলাম পূর্ব যুগে তদানীন্তন আরব সমাজে ছিল চরম অভাব-অনটন আর খাদ্যের জন্য হাহাকার। কিন্তু যখন যাকাত ব্যবস্থা চালু হলো তখন সমাজ থেকে অভাব এমন ভাবে দূর হলো যে আর গরীব লোক পাওয়া যাচ্ছিল না যাকে যাকাত দেয়া যায়। তবে যাকাত দেয়া সবার জন্য ফরজ নয়। যে পরিমাণ ধন-সম্পদ হলে যাকাত ফরজ হয় তাকে নিসাব বলে। রৌপ্যের নিসাব সাড়ে ৫২ তোলা এবং স্বর্ণের নিসাব সাড়ে সাত তোলা। নিসাব পরিমাণ ধন-সম্পদ বা অর্থ কারো কাছে পূর্ণ এক বছর কাল থাকলে তার উপর যাকাত ফরজ হয়ে যায়। যাকাত না দিলে পবিত্র কুরআনে ধমকি প্রদর্শন করা হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন, যারা স্বর্ণ ও রৌপ্য পুঞ্জিভূত করে এবং তা আল্লাহর রাস্তায় খরচ করে না তাদেরকে চরম শাস্তির সংবাদ দাও। যেদিন জাহান্নামের আগুনে তা উত্তপ্ত করা হবে এবং তা দিয়ে তাদের ললাটে, পার্শ্বে ও পিঠে দাগ দেয়া হবে। সেদিন বলা হবে, এটাই তা’ যা’ তোমরা পুঞ্জিভূত করতে (বাকারা :৩৪-৩৫)। 
লেখক: আরবী সাহিত্যিক ও মুহাদ্দিস, জামি’য়া ইসলামিয়া মারকাযুল উলূম, বাগমারা, খুলনা।