খুলনা | সোমবার | ২৩ জুন ২০২৫ | ৯ আষাঢ় ১৪৩২

# এক কিলোমিটার জুড়ে কাটা হয়েছে ফায়ার লাইন # ভোলা নদীতে পাইপ বসিয়ে পানি দেওয়ার চেষ্টা # বন বিভাগ ও ফায়ার সার্ভিসের সাথে রয়েছে স্থানীয় বাসিন্দারা

আবারও আগুন লেগেছে সুন্দরবনে, দাউ দাউ জ্বলছে

নিজস্ব প্রতিবেদক, বাগেরহাট ও শরণখোলা প্রতিনিধি |
০১:২৭ এ.এম | ২৩ মার্চ ২০২৫


সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের ধানসাগর স্টেশনের কলমতেজী টহল ফাঁড়ি-সংলগ্ন বনে অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। শনিবার রাত ৮টা পর্যন্ত আগুন নেভানো যায়নি। এখনও বনের মধ্যে ধোয়া উড়ছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। এর আগে এদিন সকাল ৯টার দিকে সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের ধানসাগর স্টেশনের কলমতেজী টহল ফাঁড়ি-সংলগ্ন বনে ট্যাপার বিল ধোঁয়া দেখতে পায় পার্শ্ববর্তী এলাকার বাসিন্দারা। পরে দুপুরের দিকে বন বিভাগ আগুনের বিষয়টি নিশ্চিত করে। পরে স্থানীয় বাসিন্দাদের সাথে নিয়ে বন বিভাগ আগুন নেভানোর কাজ শুরু করে। বিকেলের দিকে ঘটনাস্থলে পৌঁছায় ফায়ার সার্ভিসের ৫টি ইউনিট।
ফায়ার সার্ভিস, বন বিভাগ ও স্থানীয়রা সুন্দরবনে লাগা আগুন নিয়ন্ত্রণে বনের মধ্যে প্রায় দেড় কিলোমিটার এলাকা ধরে ফায়ার লাইন (শুকনো পাতা, মাটি সরিয়ে নালা) করা হয়েছে। তবে কাছাকাছি পানির উৎস্য না থাকায় শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ওই এলাকায় পানি দেওয়া যায়নি।
এর আগে ২০২৪ সালের ৪ মে চাঁদপাই রেঞ্জের আমুরবুনিয়া বনের লতিফের ছিলা এলাকায় আগুন লেগে ৭.৯৮ একর বনভূমির গাছপালা পুড়ে যায়। এতে ১১ লাখ ৫৮ হাজার ২৫০ টাকার ক্ষতি হয়। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা যায়।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের শরণখোলা স্টেশনের কর্মকর্তা আফতাদ-ই-আলম বলেন, দেড় কিলোমিটার এলাকা জুড়ে ফায়ার লাইন কাটা হয়েছে। আগুন আশা করা যায় আর ছাড়াবে না। কোথাও ধোঁয়া আছে, কোথাও এখনও একটু একটু করে জ্বলছে। আলো না থাকায় রাতে কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে। আর্ধেকটা পথ পর্যন্ত পাইপ টেনে নেওয়া গেছে। তবে পানি দেওয়া যায়নি। পাইপ টেনে সকাল থেকে পানি দেওয়া যাবে বলে জানান তিনি।
প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, বনাঞ্চলে ধোঁয়ার কুন্ডলী দেখার পর বন বিভাগ ও স্থানীয় বাসিন্দারা মিলে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করেন। বন বিভাগের সাথে স্বেচ্ছাসেবকসহ শত শত স্থানীয় বাসিন্দা আগুন নিয়ন্ত্রণে বনের মাঝে ফায়ার লাইন কাটার কাজ করেছে। তবে কাছাকাছি কোন নদী-খাল না থাকায় সেখানে সন্ধ্যা পর্যন্ত পানি দেওয়ার কাজ শুরু করা যায়নি। রাত সাড়ে ৭টার দিকেও বনের মধ্যে বেশ কয়েকটি স্থানে বিক্ষিপ্তভাবে আগুন ও ধোঁয়ার কুন্ডলী দেখা গেছে।
ঘটনাস্থল থেকে ঘুরে আসা শরণখোলা উপজেলার রায়েন্দা এলাকার বাসিন্দা শাহিন হাওলাদার বলেন, এবার যেখানে আগুন লেগেছে তা বনের বেশ ভেতরে। দীর্ঘক্ষণ হেঁটে ঘটনাস্থলে যেতে হবে। গাছপালার মধ্যে হাটা যায় না। এখানে বনের মধ্যে ভালো ছিলাও (পায়ে হাটার পথ) নেই। গাছের কারণে কিছু জায়গা দিয়ে নিচু হয়ে চলতে হয়।
রাজাপুর এলাকার সাবেক ইউপি সদস্য পান্না মিয়া বলেন, শত শত মানুষ আগুন নিয়ন্ত্রণে বন বিভাগের সাথে কাজ শুরু করে। আমিও সেখানে গেছি। বেশ দুর্গম পথ। আশপাশে কোন নদী খাল নেই। তাই পানি নিতে দেরি হচ্ছে। আগুন যেন না ছাড়ায় সে জন্য সরু পথ (ফায়ার লাইন) কাটা হয়েছে এক থেকে দেড় কিলোমিটার এলাকা ধরে। সেখানে প্রচুর শুকনা পাতা, এটাই ভয়। তা না হলে দাউ দাউ করে কোথাও জ্বলছে না, আগুন আর ছড়ানোর কথা না। কিন্তু পানির পাইপ দিতে খুব কষ্ট হচ্ছে।
স্থানীয়রা বলছে, আগুন লাগা ওই এলাকাটিতে তেমন বড় গাছ নেই। অধিকাংশই বলা বা বলই জাতীয় গাছ। এই গাছের শুকনো পাতার পুরু আস্তারন রয়েছে মাটির উপরে। ওই শুকনো পাতার কারনে আগুন থেকে থেকে ছড়াচ্ছে।
আগুন যাতে ছড়িয়ে পড়তে না পারে, এ জন্য স্থানীয় লোকজন নিয়ে বন বিভাগ কিছুটা পাতার স্তূপ সরালেও গভীর ফায়ার লাইন কাটতে পারেনি। তাই রাতে বাতাস হলে দীর্ঘ বছর ধরে জমা পাতার স্তুপের নিচ দিয়েও আগুন ছড়ানোর আশঙ্কা রয়েছে বলছে স্থানীয়রা। 
পূর্ব সুন্দরবন চাঁদপাই রেঞ্জের ধানসাগর স্টেশন কর্মকর্তা ফরেষ্টার বিপুলেশ্বর দাস দুপুর আড়াইটার দিকে মোবাইল ফোনে জানান, সকাল ৭টার দিকে কলমতেজী টহল ফাঁড়ির আওতাধীন টেপারবিল নামক এলাকার বনের ওপর থেকে ধোয়ার কুণ্ডলী দেখতে পান স্থানীয় গ্রামবাসী। তারা অফিসে এসে এ খবর জানালে লোকজন নিয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে ছুটে যান বনরক্ষীরা। তাৎক্ষণিক আগুন নিয়ন্ত্রণে রাখতে অগ্নিকান্ড এলাকায় নালা কাটা শুরু করেন। যাতে বনের ব্যাপক এলাকায় আগুন ছড়াতে না পারে। 
স্টেশন কর্মকর্তা বিপুলেশ্বর জানান অগ্নিকান্ডের স্থান বন অফিস থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার দূরে। কাছাকাছি কোথাও পানির কোন উৎস নেই। বনের খাল তার দূরত্বও ঘটনাস্থল থেকে দুই থেকে আড়াই কিলোমিটার। জোয়ার হলে নৌপথে পাম্প মেশিন নিয়ে পানি দেওয়ার চেষ্টা করা হবে। শরণখোলা ও মোরেলগঞ্জে ফায়ার সার্ভিসকে খবর দেওয়ার পর তারা রওনা দিয়েছে। অগ্নিকাণ্ডের বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।
শরণখোলা উপজেলার ধানসাগর ইউনিয়নের সাবেক ইউপি সদস্য পান্না মিয়া বলেন, শনিবার সকাল ৭টার দিকে সুন্দরবনের টেপারবিল এলাকার বনের ওপর থেকে ধোঁয়া উড়তে দেখে লোকজন তাকে জানায়। বিষয়টি তাৎক্ষণিক ভাবে ধানসাগর স্টেশন কর্মকর্তাকে জানানো হয়। 
শরণখোলা ফায়ার সার্ভিস স্টেশনে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আফতাবি আলম জানান, খবর পেয়ে বিকেল ৩টার দিকে তারা রওনা দিয়েছেন। এছাড়া মোরেলগঞ্জ, মোংলা ও কচুয়া থেকেও ফায়ার সার্ভিসের আরো তিনটি ইউনিটকেও খবর দেওয়া হয়েছে। 
সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) কাজী মুহাম্মদ নুরুল করিম বলেন, আতঙ্কগ্রস্ত হওয়ার কারণ নেই। আগুন ততটা বেশি না, বেশি হলো ধোঁয়া। আগুন যেন আর না ছড়ায় এজন্য চারপাশ থেকে পাতা সরিয়ে সরু নালা করা হয়েছে। পাইপ এখনও ওই এলাকা পর্যন্ত পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। আশাকরি সকালে আরও গতি নিয়ে কাজ করা যাবে।