খুলনা | শনিবার | ১০ মে ২০২৫ | ২৬ বৈশাখ ১৪৩২

মৃতদেহের গন্ধ ছড়িয়ে পড়েছে সাগাইংয়ে

ভূমিকম্পে মিয়ানমারে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৩৩৫৪

খবর প্রতিবেদন |
০১:১৬ এ.এম | ০৬ এপ্রিল ২০২৫


শতাব্দীর ভয়াবহ ভূমিকম্পে মিয়ানমারে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৩৫৪ জনে। আহত হয়েছে কমপক্ষে ৪৮৫০ জন এবং এখনও নিখোঁজ রয়েছেন ২২০ জন। শনিবার রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমে এ তথ্য জানানো হয়েছে। একই সঙ্গে মিয়ানমার সফররত জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা প্রধান ভূমিকম্প পরবর্তী উদ্ধার তৎপরতায় মানবিক ও সা¤প্রদায়িক দলগুলোর ভূমিকার প্রশংসা করেছেন। আমরাপুরায় শক্তিশালী ভূমিকম্পের পর খাবার ও ত্রাণ সামগ্রীর অভাব তীব্র আকার ধারণ করেছে। সামান্য কিছু খাবারের জন্য মানুষকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। খবর রয়টার্সের।
অন্যদিকে শতাব্দীর ভয়ঙ্কর ভূমিকম্পে সাগাইং এখন মৃত্যুপুরী! মিয়ানমারে ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল ‘সাগাইং শহরটি যেন পারমাণবিক বোমায় বিধ্বস্ত হয়ে গেছে। মৃতদেহের গন্ধ ছড়িয়ে পড়েছে পুরো শহরে।  যেদিকে চোখ যায় ধ্বংসাবশেষ। আর তার নিচে চাপা পড়ে আছে লাশ। মরদেহ বা চাপা পড়ে থাকা জীবিতদের উদ্ধারে বিন্দুমাত্র কোনো প্রচেষ্টা নেই জান্তা সরকারের।
উলটো রাস্তায় রাস্তায় তল­াশির মাধ্যমে আরও প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। সিএনএনকে দেওয়া ধসে পড়া সাগাইং শহরের ভূমিকম্প-পরবর্তী অবস্থা বর্ণনা করতে গিয়ে শুক্রবার (৪ এপ্রিল) স্থানীয় বাসিন্দা কো জেয়ার বলেন, আমরা নিজেরাই যতটুকু পাড়ছি গৃহস্থালি সরঞ্জাম দিয়ে উদ্ধারের চেষ্টা করছি। সবাই মিলে গণকবরে ব্যবস্থা করছি।
সাগাইংয়ের প্রায় ৮০% ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আশপাশের গ্রামীণ শহরগুলো বিধ্বস্ত হয়ে গেছে। মান্দালয় থেকে ৪৫ মিনিট দূরত্বের এ শহরটিতে আসতে এখন সময় লাগে ৪৫ মিনিট। 
গত ২৯ মার্চ ৭.৭ মাত্রার ভূমিকম্পে ধ্বংস হয়ে গেছে যোগাযোগ ব্যবস্থা।  রাস্তায় বড় বড় ফাটল-গর্ত, ছোট ছোট ব্রিজ-কালভার্টগুলো সব ভেঙে গেছে। এখন পর্যন্ত তিন হাজার ১৪৫ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। 
আরো কত লাশ চাপা পড়ে আছে তার হিসাব নেই। যার বেঁচে আছেন তারাও আতঙ্কে দিন পার করছেন। ভূমিকম্পের ৭ দিন পরও থেকে থেকেই আফটারশক হচ্ছে। 
ভয়ে স্থানীয়রা কেউ ঘরে ঘুমাচ্ছেন না। প্রায় পুরো শহরটির মানুষ এখন-রাস্তা, প্ল্যাটফর্ম, ফুটবল মাঠে ঘুমান। আমি নিজেও ঘরের ভেতরে ঘুমাই না। দরজায় ঘুমাই। যেন সহজেই দৌড়াতে পারি। 
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আরেকটি আফটারশক আঘাত হানার পর ফোনে সিএনএনকে এ কথা বলেন জেয়ার। আফটারশকগুলো অঞ্চলটিকে কাঁপিয়ে তুলছে। 
আরেক স্বেচ্ছাসেবক কিয়াও মিন বলেন, সাগাইংয়ের যেদিকেই তাকান-ঘরবাড়ি, স্কুল, মন্দির, মসজিদ এবং দোকান ধ্বংসস্তূপে ভরা। আমরা উদ্ধারকারীরা খালি হাতে বা ন্যূনতম সরঞ্জাম দিয়ে জীবিতদের সন্ধানে ধ্বংসস্তূপ খনন করে চলছি। আমরা আমাদের কাছে থাকা সামান্য সরঞ্জাম দিয়ে যতটা সম্ভব মানুষকে বাঁচাতে পেরেছি। 
আমরা অনেক মৃতদেহ উদ্ধার করেছি, যার মধ্যে শিশু এবং বয়স্করাও রয়েছেন...মাথা, হাত বা পা ছাড়া মৃতদেহ... আমরা এত ভয়াবহ অভিজ্ঞতার সম্মুখীন আগে কখনো হইনি।
একই মন্তব্য জাতিসংঘের সাবেক বিশেষ প্রতিবেদক ইয়াংহি লির। তিনি বলেন, আমরা কেবল বেসামরিক লোকদের ধ্বংসস্তূপের মধ্যে খনন করতে দেখছি। কেন মিন অং হ্লাইং তার সব সামরিক বাহিনীকে উদ্ধার ও ত্রাণের জন্য পাঠাননি?
এদিকে সামরিক সরকারের নেতা সিনিয়র জেনারেল মিন অং হ্লাইং একটি বিরল বিদেশ সফর শেষে রাজধানী নেপিদোতে ফিরে এসেছেন। তিনি থাইল্যান্ডের ব্যাংককে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে গিয়েছিলেন। সেখানেই তিনি থাইল্যান্ড, নেপাল, ভুটান, শ্রীলঙ্কা এবং ভারতের নেতাদের সঙ্গে আলাদাভাবে সাক্ষাৎ করেন।
মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, মিন অং হ্লাইং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে ডিসেম্বর মাসে ‘স্বাধীন ও নিরপেক্ষ’ নির্বাচন অনুষ্ঠান আয়োজনের জান্তা সরকারের পরিকল্পনা সম্পর্কে অবহিত করেছেন।
ভারতের পররাষ্ট্র দফতরের একজন মুখপাত্র জানান, মোদি মিয়ানমারের গৃহযুদ্ধে ভূমিকম্প-পরবর্তী যুদ্ধবিরতিকে স্থায়ী করার আহŸান জানান এবং বলেন, নির্বাচন হতে হবে ‘সমন্বিত ও বিশ্বাসযোগ্য’।
সমালোচকরা জান্তা সরকারের পরিকল্পিত এই নির্বাচনকে একটি প্রহসন বলে আখ্যায়িত করেছেন, যার মাধ্যমে সেনাবাহিনী কেবল তাদের পছন্দের প্রতিনিধিদের মাধ্যমে ক্ষমতা ধরে রাখতে চায়।
২০২১ সালে নোবেল বিজয়ী অং সান সু চি’র নির্বাচিত বেসামরিক সরকারকে উৎখাত করার পর থেকে সেনাবাহিনী মিয়ানমার পরিচালনায় ব্যর্থ হয়েছে। ফলে দেশটির অর্থনীতি ও স্বাস্থ্যসেবাসহ মৌলিক পরিষেবা খাতগুলো ভেঙে পড়েছে। ২৮ মার্চের ভূমিকম্প এই অবস্থাকে আরও জটিল করে তুলেছে।
সামরিক অভ্যুত্থানের পর শুরু হওয়া গৃহযুদ্ধে ইতোমধ্যেই ৩০ লাখেরও বেশি মানুষ গৃহহীন হয়েছে। জাতিসংঘ বলছে, দেশটির এক-তৃতীয়াংশ জনগণ মানবিক সহায়তার প্রয়োজনীয়তায় ভুগছে।
জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের দফতর শুক্রবার, জান্তা সরকার ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় ত্রাণ সহায়তা সরবরাহে বাধা দিচ্ছে, বিশেষ করে সেসব এলাকায় যেখানে তাদের শাসনকে সমর্থন করে না।
সংস্থাটি আরও জানিয়েছে, তারা জান্তা সরকারের ৫৩টি হামলার ঘটনা তদন্ত করছে, যার মধ্যে ১৬টি যুদ্ধবিরতি ঘোষণার পর সংঘটিত হয়েছে, যার মধ্যে বিমান হামলাও রয়েছে।