খুলনা | শনিবার | ১৯ এপ্রিল ২০২৫ | ৬ বৈশাখ ১৪৩২

ট্রাম্পকে ড. ইউনূসের চিঠি, শুল্ক তিন মাস স্থগিতের অনুরোধ

খবর ডেস্ক |
০১:৩৯ এ.এম | ০৮ এপ্রিল ২০২৫


বাংলাদেশি পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের আরোপ করা বাড়তি ৩৭ শতাংশ তিন মাসের জন্য স্থগিত চেয়ে দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে চিঠি দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সোমবার বিকেলে ঢাকার ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে বিনিয়োগ সম্মেলনের প্রথম দিন শেষে প্রেস ব্রিফিংয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম এ তথ্য জানান। 
প্রেস সচিব বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের বাড়তি শুল্ক আরোপ তিন মাসের জন্য স্থগিত রাখতে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে চিঠি দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। চিঠিতে  বাংলাদেশ কী কী করতে চায় তার প্রতিশ্র“তি রয়েছে।
চিঠিতে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, আমরা আপনাকে আশ্বস্ত করছি, আপনার বাণিজ্য এজেন্ডা সম্পূর্ণরূপে বাস্তবায়নে সহযোগিতার জন্য প্র্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নেবে বাংলাদেশে। আপনার ঘোষণার পর আমি আমার উচ্চ প্রতিনিধিকে ওয়াশিংটন ডিসিতে পাঠিয়েছি যেন ১৭ কোটি মানুষের দেশ বাংলাদেশের দ্রæত বর্ধনশীল বাজারে আমেরিকান রপ্তানি উল্লেখযোগ্য ভাবে বাড়ানো যায়। আমরাই প্রথম দেশ যারা এ ধরনের ইতিবাচক উদ্যোগ ন্রিয়েছি।
তিনি আরও বলেন, আমরাই প্রথম দেশ যারা রপ্তানির ওপর স্থগিতাদেশ তুলে নেওয়ার পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানির জন্য বহু বছরের চুক্তি করেছি। আমাদের কর্মকর্তারা তখন থেকেই বাংলাদেশে আমেরিকান রপ্তানি দ্রæত বাড়ানোর জন্য সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা চিহ্নিত করতে কাজ করছেন। বাণিজ্য উপদেষ্টা আমাদের বিশদ কার্যক্রম নিয়ে মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধির সঙ্গে পারস্পরিক সম্পর্ক জোরদারে কাজ করবেন।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আমাদের কর্মপরিকল্পনার মূল লক্ষ্য তুলা, গম, ভুট্টা, সয়াবিনসহ এ জাতীয় মার্কিন পণ্যগুলোর আমদানি উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ানো, যা মার্কিন কৃষকদের আয় ও জীবিকা নির্বাহে অবদান রাখবে। মার্কিন তুলার বাজারে গতি বাড়াতে আমরা বাংলাদেশে বন্ডেড ওয়্যারহাউজিং (গুদামজাতকরণ) সুবিধা চূড়ান্ত করছি, যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কমুক্ত সুবিধা থাকবে।
ড. ইউনূস চিঠিতে বলেন, দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলে বেশির ভাগ মার্কিন রপ্তানিতে বাংলাদেশের শুল্কর্ রয়েছে। আমরা উপরোক্ত মার্কিন কৃষিপণ্য ও স্ক্র্যাপ ধাতুর ওপর শূন্য শুল্ক দিতে প্রতিশ্র“তিবদ্ধ। আমরা শীর্ষ মার্কিন রপ্তানি পণ্য গ্যাস টারবাইন, সেমিকন্ডাক্টর ও চিকিৎসা সরঞ্জামের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক কমানোর জন্য কাজ করছি।
তিনি আরও বলেন, তাছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের পণ্য রপ্তানিতে বিদ্যমান অশুল্ক বাধা দূর করারও পদক্ষেপ নিয়েছে বাংলাদেশ। এর মধ্যে রয়েছে নিরীক্ষা ও পরীক্ষার বাধ্যবাধকতা হ্রাস, প্যাকেজিং ও লেবেলিংয়ের মানদণ্ড সহজীকরণ, শুল্ক প্রক্রিয়া সরলীকরণ এবং অন্যান্য বাণিজ্য সুবিধা স¤প্রসারণ।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ ইতোমধ্যে দেশে মার্কিন ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান স্টারলিংক চালুর কার্যক্রম সম্পন্ন করেছে। এর ফলে নাগরিক প্রযুক্তি, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও প্রতিরক্ষা খাতসহ বিভিন্ন উচ্চ প্রযুক্তি ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগের নতুন দ্বার উন্মোচিত হবে।
এই প্রেক্ষাপটে ড. ইউনূস বলেন, আমরা আশা করি, আগামী তিন মাসের মধ্যেই এসব উদ্যোগ বাস্তবায়ন সম্পন্ন হবে। এই সময়ের মধ্যে আমরা যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের সঙ্গে পরামর্শক্রমে বাণিজ্য স¤প্রসারণ ও ভারসাম্য তৈরির কার্যক্রম শেষ করব।
চিঠির শেষাংশে তিনি অনুরোধ জানিয়ে লেখেন, বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি পণ্যে আরোপিত পাল্টা শুল্ক তিন মাসের জন্য স্থগিত রাখার বিষয়টি বিবেচনা করে দেখার অনুরোধ জানাচ্ছি। আমি আন্তরিকভাবে আশা করি, আপনি আমাদের এই অনুরোধ গ্রহণ করবেন।