খুলনা | শনিবার | ১৯ এপ্রিল ২০২৫ | ৬ বৈশাখ ১৪৩২

সমবায় সমিতির নামে প্রতারণা গ্রাহকের আমানতের সুরক্ষা কে দেবে

|
১২:১৩ এ.এম | ১১ এপ্রিল ২০২৫


সমবায় সমিরি নামে প্রতারণায় কিছু মানুষ বিপুল সম্পদের মালিক হওয়ার বিপরীতে হাজার হাজার মানুষ নিঃস্ব হচ্ছেন। তবে এ ক্ষেত্রে সমবায় সমিতি অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে সাড়া দেওয়ার নজির বিরল। সাধারণ মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটাতে সমবায় সমিতি করা হলেও শেষ পর্যন্ত তাঁদের অশেষ দুর্ভোগের কারণ হচ্ছে। মানুষও আস্থা হারাচ্ছে সমবায়ের ওপর।
গণমাধ্যমের খবর জানাচ্ছে, গত রোববার জামালপুরের মাদারগঞ্জে বিভিন্ন সমবায় সমিতিতে জমা রাখা আমানতের টাকা ফেরত পেতে বিক্ষোভ করেছেন গ্রাহকেরা। তাঁরা লাঠি ও ঝাড়–মিছিল করে থানা চত্বরে অবস্থান নেন এবং কয়েক ঘণ্টার জন্য জামালপুর-মাদারগঞ্জ সড়ক অবরোধ করেন। এর আগে আরও তিন দফা কর্মসূচি পালন করেন। সবচেয়ে দুঃখজনক ব্যাপার হচ্ছে, রোববারের কর্মসূচিতে অংশ নিতে যাওয়ার পথে হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে একজন নারী মারা গেছেন। দু’টি সমিতিতে তিনি প্রায় ১ লাখ ২৬ হাজার টাকা রেখেছিলেন। পরিবারটির জন্য এই ক্ষতি অপূরণীয়।
দেখা যাচ্ছে যে, এই উপজেলার ২৩টি সমবায় সমিতি ৩৫ হাজার সেবাগ্রহীতার প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা নিয়ে দুই বছর ধরে লাপাত্তা হয়েছে। এসব সমিতিতে শিক্ষক, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পাশাপাশি গৃহকর্মী, ভ্যানচালক, কৃষকেরাও লাভের আশায় টাকা জমা রেখেছিলেন। এখন লাভ তো দূরে থাক, আসল টাকা পাবেন কি না, তার অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। সমবায় সমিতি আইনে সুস্পষ্টভাবে বলা আছে, সদস্য করার ক্ষেত্রে কোনো ধরনের প্রলোভন দেখানো যাবে না। অথচ ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের তুলনায় অনেক বেশি মুনাফার প্রলোভন দেখিয়ে টাকা সংগ্রহ করে সমিতিগুলো। শুধু জামালপুর নয়, সমবায় সমিতির নামে এ ধরনের প্রতারণা দেশের অন্যত্রও ঘটেছে। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে সাধারণ মানুষ প্রয়োজনীয় ঋণসুবিধা না পাওয়ায় তাঁরা সমবায় সমিতির ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েন। সংসার খরচের টাকা বাঁচিয়ে একটু একটু করে সঞ্চয় করেন। একবারে টাকাটা পেলে সেটা অনেক কাজেই ব্যবহার করতে পারেন।
আমরা মনে করি, সমবায় সমিতি নিবন্ধনের ক্ষেত্রে সমবায় অধিদপ্তরকে সতর্ক হতে হবে। দেশের প্রায় সব জায়গাতেই ব্যাঙের ছাতার মতো সমবায় সমিতি গড়ে উঠেছে। এসব সমবায় সমিতি যাঁরা পরিচালনা করেন, তাঁদের অনেকে রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী। ফলে তাঁরা খুব সহজেই মানুষের টাকা আত্মসাৎ করেও পার পেয়ে যান। নিবন্ধন দেওয়ার পরও কোনো সমিতি যাতে আইনের ব্যত্যয় না ঘটাতে পারে, সেটা তদারক করতে হবে। গ্রাহকের আমানতের সুরক্ষা দেওয়ার দায়িত্ব কার?