খুলনা | শনিবার | ১৯ এপ্রিল ২০২৫ | ৬ বৈশাখ ১৪৩২

স্বাগত ১৪৩২: শান্তি ও সমৃদ্ধির বার্তা বয়ে আনুক

|
১২:০১ এ.এম | ১৪ এপ্রিল ২০২৫


পুরোনো জরা ও গ্লানি ঝেড়ে ফেলে নতুন বছরকে বরণ করে নেওয়ার দিন পহেলা বৈশাখ। এবার ঈদ উৎসবের পাশাপাশি বাংলা নববর্ষের প্রথম দিনটি উপলক্ষে দেশজুড়ে চলবে নানা উৎসব-আয়োজন। তাতে বাঙালির ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে ঊর্ধ্বে তুলে ধরার প্রয়াস থাকবে। দোকানিরা সারা বছরের হিসাব মিলিয়ে খুলবেন হালখাতা। বাঙালির জীবনে বছরে একবারই আসে এমন দিন, যা একান্তই আমাদের জাতিসত্তার অংশ। আমাদের বর্ষবরণের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হলো, এটি ধর্ম-বর্ণ-নির্বিশেষে সবার উৎসব। তবে বর্তমানে এ উৎসব হয়ে উঠেছে কিছুটা শহরকেন্দ্রিক। অথচ গ্রামই এদেশের প্রাণ। গ্রামের মানুষ, মূলত কৃষকরাই বাংলা দিনপঞ্জি অনুসরণ করে থাকেন। বাংলা ঋতুচক্র মেনে করেন চাষাবাদ। সারা দেশে নববর্ষের আনন্দ-উদযাপন ছড়িয়ে দিতে তাই গ্রামীণ জীবনেও সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য নিশ্চিত করতে হবে। বর্ষবরণের আয়োজন তাতে হয়ে উঠবে আরও সর্বজনীন।
পহেলা বৈশাখ ভোরবেলায় রাজধানীর রমনা বটমূলে ছায়ানটের অনুষ্ঠান বর্ষবরণ উৎসবের অবিচ্ছেদ্য অংশ। এটিও আমাদের এক ঐতিহ্য হয়ে উঠেছে। ছায়ানট ছাড়াও বর্তমানে বেশকিছু সংগঠনের উদ্যোগে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে বর্ষবরণের নানা উৎসব-আয়োজন করা হয়ে থাকে। কিছু বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানও এগিয়ে আসছে এ ধরনের অনুষ্ঠানের পৃষ্ঠপোষকতায়। তবে বর্ষবরণের মূল উৎসবটি হয়ে থাকে রমনা বটমূলের অনুষ্ঠান ঘিরেই। পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠানে বিশেষ নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। পহেলা বৈশাখের মতো অসা¤প্রদায়িক উৎসবের প্রতি ধর্মান্ধ প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠীর গাত্রদাহ থাকাটাই স্বাভাবিক। আশার কথা, রমনার নৃশংস ঘটনা বাঙালিকে দমিয়ে রাখতে পারেনি। বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে বিপুলসংখ্যক মানুষের সমাগমই এর প্রমাণ।  
বাংলা নববর্ষের হাত ধরে প্রায় একই সময়ে উদযাপিত হয় ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর বৈসাবি, বিজু প্রভৃতি উৎসব। চৈত্রসংক্রান্তি ও পহেলা বৈশাখের নানা আয়োজন চলে বিভিন্ন পাহাড়ি গোষ্ঠীর মধ্যে। উপমহাদেশের অন্যান্য জাতির নববর্ষও আসে প্রায় অভিন্ন সময়ে। নিজেদের বর্ষবরণ উৎসবে অংশ নেওয়ার পাশাপাশি আমরা যদি অন্যদের এ ধরনের উৎসবের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হই এবং তাতে অংশ নিই, তাহলে তা শান্তি ও স¤প্রীতি প্রতিষ্ঠায় রাখতে পারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।
পহেলা বৈশাখ আপন শিল্প-সংস্কৃতির ধারাকে ঋদ্ধ ও বেগবান করার শপথ নেওয়ার দিন। নতুন বছর দেশবাসীর জন্য শান্তি ও সমৃদ্ধির বার্তা বয়ে আনবে, এটাই প্রত্যাশা। শুভ নববর্ষ।