খুলনা | শনিবার | ১৯ এপ্রিল ২০২৫ | ৬ বৈশাখ ১৪৩২

খুলনা নিউজপ্রিন্ট মিলের জমিতেই গড়ে উঠছে ওষুধের কাঁচামাল তৈরির কারখানা

কাজী মোতাহার রহমান |
০১:৫৮ এ.এম | ১৬ এপ্রিল ২০২৫


উৎপাদনে যাওয়ার লক্ষ্যে খুলনা নিউজপ্রিন্ট মিলের সাইরেন আর কখনো বাজবে না। ৬৬ বছর বয়সী এ মিলের উৎপাদন চিরতরের জন্য বন্ধ হয়ে গেল। মিল এলাকার ৪৭ শতাংশ জমির ওপর গড়ে উঠবে ওষুধের কাঁচামাল তৈরির কারখানা। নামকরণ করা হয়েছে ‘একটিভ ফার্মাসিউটিকাল ইনগ্রেডেন্টিন এন্ড স্টার্চ’। নতুন এ কারখানার জন্য ৩ হাজার ৭৮০ কোটি টাকা ব্যয় হবে। বিসিআইসির তত্ত¡াবধায়নে নতুন কারখানা পরিচালিত হবে। সংবাদপত্র ও পাঠ্যপুস্তকের প্রয়োজনে ১৯৫৯ সালে ৮৭ একর জমির ওপর নিউটপ্রিন্ট মিল প্রতিষ্ঠিত হয়।
ক্রমাগত লোকসানের কারণে বিএনপি জামানায় ২০০২ সালের নভেম্বরে মিলটি বন্ধ হয়ে যায়। এ সময় ৬ হাজার ৫শ’ শ্রমিক কর্মরত ছিল। শ্রমিকদের বকেয়া পাওনা পরিশোধ হয়েছে। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর মিল চালুর প্রতিশ্র“তি দেয়। সাবেক শ্রম প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ানের নির্বাচনী প্রতিশ্র“তি ছিল, মিল চালুর উদ্যোগ নেওয়া হবে, তা কখনও পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। বিভিন্ন শ্রমিক ও নাগরিক সংগঠন মিল চালুর দাবিতে একাধিক রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করে। লোকসান এড়িয়ে লাভজনক প্রতিষ্ঠানের জন্য বিসিআইসি মিলের জমিতে ওষুধের কাঁচামাল তৈরি কারখানার করার উদ্যোগ নেয়। সম্ভাব্যতা যাচাই শেষে শিল্প মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে ইতিবাচক সাড়া দিয়েছে। ব্যয়ের সমুদয় অর্থ দিতেও সায় দিয়েছে। ওয়াসো ইঞ্জিনিয়ার্স এন্ড কনসাল্টটেন্ট (বিডি) লিমিটেডকে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। প্রকল্প একনেকে অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। 
সংশ্লিষ্ট সূত্রের অভিমত, আগামী অর্থ বছরে এ প্রকল্পের অর্থ ছাড় দেওয়া হবে। জার্মান, সুইডেন ও ইউরোপ থেকে এ কারখানার জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ আমদানী করা হবে।
মিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ আবু সাইদ জানান, খালিশপুরের এ নয়া প্রকল্পে চৌদ্দটি ওষুধের কাঁচামাল তৈরি হবে। ওষুধের কাঁচামাল তৈরির উলে­খ্যযোগ্যগুলো হচ্ছে, প্যান্টোপ্রাজল-সোডিয়াম/রাবেপ্রাজল, ফ্লুকোনাজল, অ্যাটোরভাস্ট্যাটিন ক্যালসিয়াম, ফেক্সোফেনাডিন হাইড্রোক্লোরাইড, মেটফরমিন হাইড্রোক্লোরাইড, ভিল্ডাগ্লিপটিন, প্যারাসিটামল, অ্যাজিথ্রোমাইসিন, অ্যামলোডিপাইন। দেশের ওষুধ শিল্পের প্রয়েজনে ৯০ শতাংশ কাঁচামাল বিদেশ থেকে আমদানি করা হতো। আগামীতে এটি চালু হলে বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হবে।
মন্ত্রণালয়ের তৈরি এ প্রকল্পে বলা হয়েছে, দেশের মাত্র ৩ শতাংশ চাহিদা পূরণকারী খুব কম ইউনিট থাকায় অ্যাক্টিভ ফার্মাসিউটিক্যালস ইনগ্রেডিয়েন্টস-এপিআই কমপ্লেক্স তৈরি করা, দেশের ঘাটতি কমানোর জন্য এবং সামগ্রিকভাবে দেশের ওষুধ শিল্পকে সহজতর করার জন্য কর্ন স্টার্চ কারখানা তৈরি করা, বিসিআইসি’র অধীনে এপিআই এবং স্টার্চ একসাথে উৎপাদন করা, যা দেশের একটি নতুন রাসায়নিক শাখা হিসেবে গবেষণা ও উন্নয়ন সহজতর করে এবং এপিআই পণ্য আমদানি কমিয়ে বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় করে, দেশে উপজাত স্টার্চের গুণমান এবং পরিমাণ সহজতর করবে, ২০০২ সাল থেকে উৎপাদন বন্ধ থাকা কেএনএম প্রাঙ্গণে নতুন উৎপাদন লাইন স্থাপন করা এবং এর ফলে স্থানীয় আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন বৃদ্ধি করা সেই সাথে দেশে জিডিপি প্রবৃদ্ধির ফলে কর্মসংস্থানের বাজার তৈরি করা। এ কারখানা চালু হলে ৩৫০ জনের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।
সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন খুলনার সাধারণ সম্পাদক ও নাগরিক নেতা এড. কুদরত-ই খুদা সরকারের এ উদ্যোগকে ইতিবাচক বলে সাড়া দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, সরকার এ নতুন উদ্যোগ গ্রহণের ফলে শ্রমিকদের স্বার্থ সংরক্ষণ হবে। নতুন কর্মস্থানের সৃষ্টি হবে। দেশে ওষুধের কাঁচামাল তৈরির কারখানা হওয়ায় এ শিল্প সমৃদ্ধ হবে। এর পক্ষে জনমত গড়ে উঠবে। খালিশপুর আবার শিল্পে সমৃদ্ধ হবে।
উলে­খ্য, ২০০২ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ সরকার কারখানার রক্ষণাবেক্ষণ ও বেতন প্রদানের জন্য ১০০ কোটি টাকা ব্যয় করেছিল। ২০০৫ সালে, কারখানাটির ১৩ একর বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশনকে ইজারা দেওয়া হয়।
২০১৫ সালে, বাংলাদেশ সরকার খুলনা নিউজপ্রিন্ট মিলস লিমিটেডের জায়গায় একটি পাওয়ার প্লান্ট এবং একটি নতুন কাগজ কল তৈরির পরিকল্পনা ঘোষণা করে। নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি লিমিটেডকে ৭৫০-৮০০ মেগাওয়াট উৎপাদন করার জন্য বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের কাজ দেওয়া হয়।