খুলনা | শনিবার | ১৯ এপ্রিল ২০২৫ | ৬ বৈশাখ ১৪৩২

খুলনা সদরসহ ৩৫ সাবরেজিস্ট্রি অফিসে একযোগে দুদকের অভিযান : খুলনায় নকলনবিশের ব্যাগে ৭০ হাজার টাকা!

হয়রানি-ঘুষ গ্রহণের প্রমাণ পেয়েছেন কর্মকর্তারা

খবর ডেস্ক |
০১:৩১ এ.এম | ১৭ এপ্রিল ২০২৫


দলিল রেজিস্ট্রেশন, তল­াশি ও নকল উত্তোলনসহ বিভিন্ন কাজে সেবা প্রার্থীদের হয়রানি এবং ঘুষ দাবিসহ নানা দুর্নীতির অভিযোগে দেশের ৩৫টি সাবরেজিস্ট্রি অফিসে একযোগে অভিযান চালিয়েছে দুদক। বুধবার দুদকের বিভিন্ন অফিস থেকে এনফোর্সমেন্ট টিম এই অভিযান পরিচালনা করেছে। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) জনসংযোগ কর্মকর্তা আকতারুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
অভিযানে অনিয়ম ও দুর্নীতির তথ্য-প্রমাণ পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন দুদক মহাপরিচালক মোঃ আক্তার হোসেন। বুধবার এক ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান তিনি। 
ব্রিফিংয়ে তিনি জানান, কোথাও কোথাও দুদকের অভিযোনের খবর শুনে সাব-রেজিস্ট্রাররা পালিয়েছেন। টিমের সদস্যরা শিগগির তাদের প্রতিবেদন কমিশনে জমা দেবেন। পরে কমিশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। 
যেসব অফিসে অভিযান চালানো হয়েছে সেগুলো হলো বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ উপজেলা সাব রেজিস্ট্রারের অফিস, বরিশাল সদর সাব রেজিস্ট্রারের অফিস, বগুড়া জেলার কাহালু উপজেলা সাব রেজিস্ট্রি অফিস, ল²ীপুর জেলার রায়পুর উপজেলা সাবরেজিস্ট্রি অফিস, কক্সবাজার জেলার উখিয়া উপজেলা সাবরেজিস্ট্রি অফিস, চট্টগ্রাম জেলা রেজিস্ট্রারের অফিস, চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলা সাবরেজিস্ট্রারের অফিস।
এছাড়া কুমিল­ার লাঙ্গলকোট উপজেলা সাবরেজিস্ট্রি অফিস, ঢাকার আশুলিয়া ও মিরপুর সাবরেজিস্ট্রি অফিস, দিনাজপুরের চিরিরবন্দর উপজেলা সাবরেজিস্ট্রি অফিস, ফরিদপুরের চরভদ্রাসন উপজেলা, গাজীপুর জেলার সদর উপজেলা, গোপালগঞ্জ জেলার কোটালীপাড়া উপজেলা, হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলা, যশোর সদর উপজেলা, ঝিনাইদহ সদর উপজেলা, খুলনা জেলা ও খুলনা সদর উপজেলা, কিশোরগঞ্জ জেলার ইটনা উপজেলা, কুড়িগ্রাম জেলা, কুষ্টিয়া সদর উপজেলা। আরও রয়েছে শরীয়তপুর সদর উপজেলা, ময়মনসিংহের গৌরিপুর, নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা, নোয়াখালী সদর উপজেলা, নওগাঁ সদর উপজেলা, পাবনা সদর উপজেলা, পটুয়াখালীর বাউফল, ঝালকাঠির রাজাপুর, রাজশাহীর গোদাগাড়ী, রংপুর জেলা, সিলেট জেলার গোয়াইনঘাট, টাঙ্গাইলের কালিহাতী, ঠাকুরগাঁও জেলার বালিয়াডাঙ্গী ও জামালপুলের সরিষাবাড়ী সাবরেজিস্ট্রি অফিস।
খুলনা : খুলনা সদর উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রারের কার্যালয়ে অভিযান চালিয়েছেন দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) খুলনা জেলা কার্যালয়ের কর্মকর্তারা। বুধবার দুপুরে অভিযানে নেতৃত্ব দেন দুদকের সহকারী পরিচালক রকিবুল ইসলাম। অভিযানে আরও উপস্থিত ছিলেন দুদকের সহকারী পরিচালক মোঃ জাহিদ ফজল, উপ-সহকারী পরিচালক মোঃ শামীম রেজা ও মোঃ আশিকুর রহমান। এ সময় সাব রেজিস্ট্রার তন্ময় কুমার মন্ডল, অফিস সহকারী ফারুক হোসেনসহ বেশ কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন।
অভিযানকালে সেবাগ্রহীতাদের কাছ থেকে ঘুষ গ্রহণের প্রমাণ পাওয়া গেছে। এছাড়া দালালদের দৌরাত্ম দেখা গেছে বলে জানিয়েছেন দুদক কর্মকর্তারা। 
দুদকের খুলনা জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক রকিবুল ইসলাম বলেন, সদর সাব-রেজিস্ট্রারের কার্যালয়ে সেবাপ্রার্থীদের হয়রানি ও ঘুষ দাবিসহ নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। পুরো অফিস তল­াশি চালিয়ে কিছু অনিয়ম পেয়েছি। এ সময় নকলনবিশ রাসেল শিকদারের ব্যাগে নগদ ৭০ হাজার টাকা পাওয়া গেছে। সেই টাকার উৎসের যুক্তিযুক্ত ব্যাখ্যা তিনি দিতে পারেননি। মিতা নামের আরেক নকলনবিশের ব্যাগে ব্যাংকিং লেনদেনের বেশ কিছু ডকুমেন্টস পেয়েছি। সেখানে প্রায় ১২ লাখ টাকার এফডিআরের কাগজপত্র পাওয়া গেছে। টাকার উৎস সম্পর্কে তিনি স্পষ্ট করে কিছু বলতে পারেননি। আমরা তাকে সময় দিয়েছি, উনি হয়তো দু-একদিনের মধ্যে ব্যাখ্যা করবেন। এছাড়া অফিসের মোহরার অরুণ কুমার বিকাশে টাকা লেনদেন করেছেন। এরও সঠিক ব্যাখা তারা দিতে পারেননি।
তিনি আরও বলেন, অফিসে দালালদের দৌরাত্ম দেখা গেছে। আমরা ছদ্মবেশে এসেছিলাম। তখন দুইজন নকলনবিশকে পেয়েছি তাদের কোনো নিবন্ধন নেই। তারা এখানে দলিল উত্তোলনের সরকারি ফি-এর অতিরিক্ত অর্থ দাবি করছেন। সার্বিক বিষয়ে আমরা জেলা রেজিস্ট্রারের সঙ্গে কথা বলেছি। নকলনবিশ যারা আছেন তাদের রেজিস্ট্রি বাতিল এবং তাদের শোকজ করার কথা বলেছেন তিনি। সার্বিক বিষয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা ও কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
রকিবুল ইসলাম বলেন, অফিসে নকল তুলতে এবং রেজিস্ট্রি করতে দালালদের দৌরাত্ম আছে। একইসঙ্গে সরকারি ফি-এর অতিরিক্ত আদায়ের প্রমাণ পেয়েছি। নকলনবিশ এবং দালালদের সখ্যতা থাকতে পারে। সার্বিক বিষয় বিশ্লেষণ করে কমিশনে প্রতিবেদন দেওয়া হবে। 
যশোর : জমি রেজিস্ট্রির নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে যশোর সদর সাব রেজিস্ট্রার কার্যালয়ে অভিযান চালিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। বুধবার দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত শহরের গরীব শাহ সড়ক সংলগ্ন কার্যালয়ে এ অভিযান পরিচালনা করা হয়।
অভিযানে নেতৃত্ব দেন দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয় যশোর শাখার সহকারী পরিচালক আল আমিন। তিনি জানান, জমি রেজিস্ট্রেশন কার্যক্রমে অনিয়মের অভিযোগের ভিত্তিতে এ অভিযান পরিচালিত হয়েছে। 
অভিযান শেষে সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে দেওয়া এক বক্তব্যে আল আমিন বলেন, সাব রেজিস্ট্রার অফিসের পেশকার ভৈরব চক্রবর্তী ও টাইপিস্ট আসমা খাতুনের কিছু কর্মকাণ্ড আমাদের কাছে সন্দেহজনক মনে হয়েছে। বিষয়টি আমরা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাবো, পরে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তিনি আরও জানান, অভিযানকালে কাউকে আটক করা হয়নি। অভিযান শেষে কোনো আলামত জব্দ করা হয়েছে কি না, সে বিষয়ে তিনি মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানান।
কুষ্টিয়া : জেলার খোকসা সাব-রেজিস্ট্রারের কার্যালয়ের নাইট গার্ডের কাছে ৪০ হাজার টাকা পাওয়া যায়। এর সন্তোষজনক ব্যাখ্যা তিনি দিতে পারেননি। এছাড়া অফিস কার্যক্রমে অনিয়ম ও অসঙ্গতির সত্যতা পাওয়া গেছে। 
গোপালগঞ্জ : জেলার কোটালীপাড়া সাব-রেজিস্ট্রারের কার্যালয়ে সরকার নির্ধারিত ফির অতিরিক্ত অর্থ আদায়, ৫২ (খ) রশিদ বইতে গড়মিল এবং মোহরাদের দ্বারা দলিল প্রতি ১ হাজার ৯শ’ থেকে ২ হাজার টাকা পর্যন্ত আদায়ের প্রমাণ পাওয়া যায়।