খুলনা | শনিবার | ১৯ এপ্রিল ২০২৫ | ৬ বৈশাখ ১৪৩২

পশ্চিমবঙ্গের দাঙ্গায় দুষলেন বাংলাদেশিদের

মোদি-ইউনূস বৈঠক নিয়ে বিস্ফোরক মন্তব্য মমতার

খবর প্রতিবেদন |
০১:৫০ এ.এম | ১৭ এপ্রিল ২০২৫


ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদে ওয়াকফ আইন নিয়ে বিক্ষোভের মধ্যে সা¤প্রদায়িক সহিংসতার প্রেক্ষিতে বাংলাদেশের কথা একাধিকবার টেনে এনেছেন ওই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কেন্দ্রীয় সরকার ও প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, ‘আপনি বাংলাদেশের পরিস্থিতি জানেন না? আপনি ইউনূসের সঙ্গে গোপন মিটিং করুন, চুক্তি করুন। দেশের ভালো হলে খুশি হবো। কিন্তু আপনাদের প্ল্যানিংটা কী? কোনো এজেন্সির মাধ্যমে ওখান থেকে লোক নিয়ে এসে দাঙ্গা করা?’
বুধবার কলকাতায় নেতাজি ইনডোর স্টেডিয়ামে ইমাম-মুয়াজ্জিনদের এক সভায় ভাষণ দিতে গিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এসব কথা বলেন। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে ভাষণের যে লাইভ দেখানো হয়েছে, সেখানেই এই প্রসঙ্গগুলো আছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে সংবাদ সংস্থা এএনআইয়ের একটি পোস্ট প্রসঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘কাল (মঙ্গলবার) আমি এএনআই-এর একটি টুইট দেখেছি, হোম মিনিস্ট্রির সোর্স কোট করে বলেছে যে-ইসমে বাংলাদেশ কা হাথ হ্যায়।’
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্যের শেষ অংশের হিন্দি কথাটির অর্থ হলো, ‘এতে বাংলাদেশের হাত আছে।’ এর পরেই তিনি বলেন, যদি এই সহিংসতায় বাংলাদেশের হাত থাকে, তাহলে তার দায় তো কেন্দ্র সরকারের। সীমান্ত সামলানোর দায়িত্ব বিএসএফ’র। রাজ্যের হাত নেই এতে।
মমতা এদিন বলেন, ‘বাংলাদেশের ইউনূসের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী গোপন বৈঠক করতেই পারেন। দেশের ভালো হলে ভালো। কিন্তু আপনাদের উদ্দেশ্যটা কী? অন্যদেশ থেকে লোক নিয়ে এসে দাঙ্গা করা? আপনি বাংলাদেশের পরিস্থিতি জানেন না?’
মুর্শিদাবাদের সা¤প্রদায়িক সহিংসতায় বাংলাদেশের সংশ্লিষ্টতা এবং বিএসএফ’র দায় নিয়ে এই একই কথা ভাষণের শেষদিকে আরও একবার বলেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী। প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, ‘আপনারা এ্যালাউ করলেন কেন? বিজেপির লোক কীভাবে বাইরে থেকে এসে গণ্ডগোল পাকিয়ে পালিয়ে গেল।’ তার কথায়, ‘এটা সম্পূর্ণ ভাবে পূর্ব পরিকল্পিত দাঙ্গা। আমিও সাধারণ মানুষের কাছ থেকে অনেক তথ্য পাচ্ছি।’
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘বাইরে থেকে গুণ্ডা নিয়ে আসার পরিকল্পনাটা বিজেপির। প্রথমে ওদের পরিকল্পনা ছিল রাম-নবমীর দিনের। কিন্তু আপনারা সেই পরিকল্পনা ভেস্তে দিয়েছেন।’
কলকাতার বৈঠকে হাজির ইমাম-মুয়াজ্জিনদের উদ্দেশ্য করে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা শান্ত থাকুন। বিজেপির প্ররোচতায় পা দেবেন না। ইমামদের একটা ভূমিকা পালন করতে হবে। আমি কিন্তু খুঁজে বার করব সীমান্ত এলাকায় বিএসএফ কাকে কাকে হাত করেছে এবং কিছু বাচ্চা ছেলেকে পাঁচ-ছয় হাজার টাকার বিনিময়ে ইট ছুঁড়িয়েছে।’
মুর্শিদাবাদে পাঁচ দিন ধরে চলা দাঙ্গার দায় কেন্দ্রীয় সরকার ও সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বিএসএফের উপর চাপিয়ে দিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। টেনে এনেছেন মোদি-ইউনূসের বৈঠকের প্রসঙ্গ। তবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তোলা অভিযোগ প্রসঙ্গে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি বিএসএফ।
মমতার মতে, ‘এটা প্রি প্ল্যান্ড কমিউনাল রায়ট। বিজেপি বাইরের গুন্ডা নিয়ে এসে গোলমাল করেছে। রামনবমীতে করার পরিকল্পনা ছিল। সেটা করতে পারেনি। তাই এভাবে করেছে। আমি খুঁজে বের করব বিএসএফ কাদের হাত করে এই কাজ করেছে’।
মুর্শিদাবাদের হিংসার জন্য কেন্দ্রীয় সরকার এবং বিএসএফকে দায়ী করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘আমি এএনআই-এর একটি টুইট দেখেছি যেখানে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উদ্ধৃতি দেয়া হয়েছে যে, বাংলাদেশের অনেকে এর সাথে জড়িত। যদি এটি সত্যি হয়, তাহলে এর জন্য কেন্দ্রীয় সরকার দায়ী। সীমান্তের দেখাশোনা করে বিএসএফ, রাজ্য সরকার নয়। কেন বিজেপির লোকদের বাইরে থেকে এনে গোলমাল করতে এবং পালিয়ে যেতে দেয়া হল?’
মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, প্ররোচনা দেয়া হয়েছে। 
ওয়াকফ সংশোধনী আইন নিয়ে অশান্তির আবহে ইমাম-মোয়াজ্জিনদের বৈঠক থেকে রাজ্যের সংখ্যালঘুদের উদ্দেশে শান্ত থাকার বার্তা দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অভয় দিয়ে তিনি বলেন, এখানে আমি আছি। 
যেহেতু ওয়াকফ সংশোধনী আইন করেছে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার, তাই আন্দোলন বাংলা থেকে দিলি­ নিয়ে যাওয়ার পরামর্শও দিয়েছেন মমতা। তার কথায়, আপনারা শান্ত থাকুন। বি কুল এ্যান্ড পিসফুল।
উলে­খ্য, ভারতের পার্লামেন্টে পাস হওয়া ওয়াকফ আইনের সংশোধনী নিয়ে প্রথম দফায় গত মঙ্গল ও বুধবার এবং দ্বিতীয় দফায় শুক্র ও শনিবার বাংলাদেশে সীমান্তবর্তী সুতি ও সামশেরগঞ্জ এলাকায় ব্যাপক সহিংসতা ছড়িয়েছিল। ওই সহিংসতার জেরে শনিবার তিনজনের মৃত্যু হয়েছিল-যাদের দু’জন হিন্দু ও একজন মুসলমান বলে রাজ্য পুলিশ জানায়।