কয়রা উপজেলার মহারাজপুর ইউনিয়নের গ্রাজুয়েট মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে হায়াত খালি বাজার সড়কটির (প্যাকেজ নং-KDRIDP/Khul/W-১৭০/২০২২-২৩) উন্নয়ন কাজ শুরু হয় ২০২৩ সালের এপ্রিলে।  রাস্তা খোঁড়ার পর ইটের খোয়া ফেলে প্রায় দেড় বছরের বেশি সময় ধরে লাপাত্তা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। গত ৫ আগস্টের পর থেকে গা ডাকা দিয়েছেন তিনি। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন ওই সড়ক দিয়ে চলাচলকারী লোকজন।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) সূত্রে জানা যায়, ২০২২-২৩ অর্থবছরে খুলনা বিভাগীয় পল­ী অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ৩+৭৭৫ কিঃমিঃ সড়ক উন্নয়নের জন্য দরপত্র আহŸান করে। ইজিপি টেন্ডারের মাধ্যমে ৪ কোটি ৭৩ লক্ষ ৭৬ হাজার ৭৪৪ টাকায় কাজটি বাস্তবায়নের জন্য মেসার্স এস আর ট্রেডার্স নামক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তি হয়। চুক্তি মোতাবেক ২০২৪ সালের ৫ এপ্রিল কাজটি শেষ হওয়ার কথা থাকলেও বর্তমানে সড়কের কাজটি বন্ধ। কাজটি বাস্তবায়নে ঠিকাদারের কোন উদ্যোগ নেই।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, প্রায় ৩+ ৭৭৫ কিঃ মিঃ সড়ক খুঁড়ে গর্ত করে নাম মাত্র বালু ও নিম্নমানের খোয়া দিয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সড়ক উন্নয়নের নামে ফেলে রেখেছে। দীর্ঘদিন ধরে কাজ বন্ধ থাকার কারণে সেসব খোয়াও সরে গিয়ে রাস্তার বিভিন্ন স্থানে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। সামান্য বৃষ্টি হলেই সেসব গর্তে পানি জমে থাকে। আর শুকনার সময় ধুলোয় অতিষ্ঠ হয়ে যায় এলাকাবাসী ও পথচারীরা। বিভিন্ন ধরনের যানবাহন ঝুঁকি নিয়েই সড়কটি দিয়ে চলছে। ভ্যান, মোটরসাইকেলসহ বিভিন্ন যানবাহন চলাচলে ঘটছে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা। 
স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, গুরুত্বপূর্ণ এ সড়কটি দিয়ে প্রতিনিয়ত আমাদের উপজেলা সদরে যেতে হয়। আগে ইটের সলিং থাকলেও ভাল ছিলো। রাস্তার উন্নয়নের নামে খুঁড়ে রেখে ভোগান্তি বাড়িয়ে দিচ্ছে। এ সড়ক দিয়ে প্রতিদিন স্কুল-কলেজে ও প্রাথমিকের শিশুরা যাতায়াত করে। বৃষ্টির সময় যে কত কষ্ট হয়েছে বলে বুঝানো যাবে না। এখন আবার শুকনা মৌসুম ধুলায় জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে পড়ছে। কাজ বন্ধ করে ঠিকাদার পলাতক। উক্ত ঠিকাদার ও এলজিইডির কর্মকর্তাদের গাফলতি ও দুর্নীতিকে দায়ী করছেন স্থানীয় জনগন। তারা সড়কটি দ্রুত সমাপ্তের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ ও সুদৃষ্টি কামনা করেন। এলাকাবাসী আরও বলেন, ২০২৩ সালে সাবেক বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিকের প্রভাব খাটিয়ে এবং পিস্তলের ভয় দেখিয়ে শুধুমাত্র বালুর কাজ করে ১ কোটি ৫৫ লক্ষ টাকার বিল উত্তোলন করে ঠিকাদার। নিম্নমানের খোয়া ব্যবহারে প্রতিবাদ করলে দিতো হুমকি ও চাঁদাবাজি মামলার ভয়। 
মঠবাড়ি গ্রামের সড়কের পাশে বসবাসকারি মাস্টার হারুন অর রশিদ বলেন, দীর্ঘদিন ধরে রাস্তাটি সংষ্কারের নামে ঠিকাদারের লোকজন কাজ ফেলে চলে গেছে। বর্ষা মৌসুমে যেমন ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হয়েছে তেমনি শুকনো মৌসুমেও ধুলায় অতিষ্ঠ হয়ে যেতে হচ্ছে। আমরা দ্রুত এই ভোগান্তির পরিত্রাণ চাই।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স এস আর ট্রেডার্স স্বত্বাধিকারী মোঃ শহিদুল ইসলাম সোহেল (ওরফে পিল সোহেল)-এর সাথে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। সে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের ধূসর গত ৫ আগস্ট-এর পর থেকে গা ডাকা দিয়েছে। সে গণঅভ্যুত্থানে শিক্ষার্থীদের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে হামলা চালিয়ে বলে অভিযোগ রয়েছে। এ ব্যাপারে তারা বিরুদ্ধে একাধিক মামলা হওয়ায় বর্তমানে পলাতক রয়েছে।
কয়রা উপজেলা প্রকৌশলী মোঃ দারুল হুদা বলেন, কাজ শেষ করতে আমরা ঠিকাদারকে বারবার তাগিদপত্র ও ২৮ দিনের চূড়ান্ত নোটিশ দেয়ার পরও ঠিকাদার কোন উদ্যোগ গ্রহণ করেননি। ফলে কাজটি বাতিলের জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট সুপারিশও করা হয়েছে।