খুলনা | শনিবার | ১৯ এপ্রিল ২০২৫ | ৬ বৈশাখ ১৪৩২

ছয় মাসে কী অর্থনৈতিক সংস্কার করা হয়েছে, প্রশ্ন দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের

খবর প্রতিবেদন |
০১:২০ এ.এম | ১৮ এপ্রিল ২০২৫


দেশে সংবিধান, পুলিশ, স্থানীয় সরকার, নির্বাচন, বিচার ব্যবস্থাসহ বিভিন্ন খাতে নানা সংস্কারের আলাপ হয়েছে। কিন্তু গত ছয় মাসে অর্থনৈতিক সংস্কার নিয়ে খুব বেশি কিছু করা হয়েছে কি না, সেই প্রশ্ন তুলেছেন বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো ও অর্থনীতি নিয়ে শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রধান দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, এই (অন্তর্বর্তী) সরকার গত (আওয়ামী লীগ) সরকারের অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনাসহ মধ্যমেয়াদি পরিকল্পনা স্থগিত করেছে। কিন্তু এর বিপরীতে কোনো মধ্যমেয়াদি পরিকল্পনা নেয়নি। এ কারণে বিনিয়োগকারীরা আস্থা পাচ্ছেন না। এমনকি যে নীতিগুলো এখন নেওয়া হচ্ছে, সেগুলোর ধারাবাহিকতা থাকবে কি না, সেটি নিয়েও তারা সংশয়ে আছেন।
বৃহস্পতিবার ‘৬ষ্ঠ বাংলাদেশ ইকোনমিকস সামিট, ২০২৫’-এর শেষ অধিবেশনে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য এসব কথা বলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অর্থনীতি অধ্যয়ন কেন্দ্র বা ইকোনমিকস স্টাডি সেন্টারের আয়োজনে সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের মোজাফফর আহমেদ চৌধুরী মিলনায়তনে তিন দিনব্যাপী এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
সমাপনী অধিবেশনে প্রধান অতিথি ছিলেন দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। বিশেষ অতিথি ছিলেন সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের চেয়ারপারসন মাসুদা ইয়াসমিন এবং অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক ও বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান।
অনুষ্ঠানে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য জানান, শ্বেতপত্র ও টাস্কফোর্স কমিটির প্রতিবেদনে অর্থনীতির নানা দিকের ব্যবচ্ছেদ করা হয়েছে; মান রেখা (বেঞ্চমার্ক) স্থাপন করা হয়েছে। কিন্তু এই মান রেখা থেকে আগামী ছয় মাস বা এক বছরে আমরা কোথায় উপনীত হব, সে বিষয়ে কোনো লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়নি।
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, এই (অন্তর্বর্তী) সরকার যে বাজেট নিয়ে কাজ করছে, সেটি আগের সরকারের বাজেট। এটাকে বদল করে এমন কিছু দেওয়া হয়নি, যার ভিত্তিতে তাকে (অন্তর্বর্তী সরকারকে) আমি মূল্যায়ন করতে পারবো।
শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রতিবেদনে অন্তত দুই বছরের জন্য একটি মধ্যমেয়াদি পরিকল্পনা করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল বলে জানান দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, ‘আমরা বলেছি, একটি মধ্যমেয়াদি, লক্ষ্য নির্দিষ্ট ও সুস্থির নীতিকাঠামো না থাকলে ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগ হয় না। এখন ব্যক্তি খাতের সবাই বলছেন, এই সরকার কত দিন আছে, তা তো জানি না। তাই এখন কীভাবে বিনিয়োগ করব। এমনকি যে নীতিগুলো হচ্ছে, সেগুলোর ধারাবাহিকতা থাকবে কি থাকবে না, সেটিও ঠিকভাবে বলতে পারছেন না তাঁরা।
অনুষ্ঠানে সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, জুলাই আন্দোলনের পেছনে অন্যতম কারণ বা চালিকা শক্তি ছিল অর্থনৈতিক বৈষম্য। বিগত সরকারের সময়ে অর্থনৈতিক সুবিধা হিসাব না করে অনেক বিনিয়োগ করা হয়েছিল; প্রকল্পের ব্যয় বহু গুণ বাড়ানো হয়েছিল। অথচ উন্নয়ন বাজেটের প্রায় পুরোটাই ছিল ঋণনির্ভর। এসব নিয়ে তখন প্রশ্ন করা যায়নি। তবে সুশাসনের প্রয়োজনে ভবিষ্যতে এসব নিয়ে প্রশ্ন করতে হবে।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, অতীতে দেখা যেত টাকা চুরি করে তা দেশেই রাখা হতো। তবে বিগত সরকারের সময় চুরি করা অর্থ নানা উপায়ে বিদেশে পাচার করা হয়েছে। হয়তো তারা (আওয়ামী লীগ সরকার) অনুমান করতে পেরেছিল, যেকোনো এক সময় ৫ আগস্টের মতো ঘটনা ঘটবে। এ জন্যই নানা উপায়ে তারা দেশ থেকে টাকা বের করে নিয়ে গেছে।