খুলনা | রবিবার | ২০ এপ্রিল ২০২৫ | ৬ বৈশাখ ১৪৩২

গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত ৬৪ ফিলিস্তিনি

খবর প্রতিবেদন |
০১:৩৭ পি.এম | ১৯ এপ্রিল ২০২৫


গতকাল শুক্রবার ভোর থেকে রাত পর্যন্ত ইসরায়েলের বিমান বাহিনী গাজা উপত্যকায় ব্যাপক হামলা চালিয়েছে। এতে অন্তত ৬৪ জন ফিলিস্তিনি নিহত এবং বহু মানুষ আহত হয়েছেন। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে আল জাজিরা এই তথ্য জানিয়েছে।

আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৩ সালের অক্টোবর মাস থেকে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) গাজায় অভিযান শুরু করার পর থেকে গতকালকের হামলা পর্যন্ত গত দেড় বছরে নিহতের সংখ্যা ৫১ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। এই সময়ে প্রায় ১ লাখ ১৭ হাজার জন আহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে ৫৬ শতাংশই নারী ও শিশু।

গতকালকের হামলায় নিহতদের অধিকাংশই গাজা সিটি এবং উত্তর গাজার বাসিন্দা। তবে ইসরায়েলি বিমান বাহিনী মধ্য, উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলেও ব্যাপক বোমা হামলা চালিয়েছে।

বর্তমানে আইডিএফ গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর রাফার কাছে শাবৌর এবং তেল আস সুলতান এলাকায় ঘাঁটি স্থাপন করেছে। সূত্রের খবর অনুযায়ী, এই দুটি ঘাঁটি থেকেই সর্বশেষ এই হামলা চালানো হয়েছে।

ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ আবারও জোর দিয়ে বলেছেন যে ইসরায়েল তাদের যুদ্ধের লক্ষ্য অর্জনে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। তিনি এক বিবৃতিতে উল্লেখ করেন, জিম্মিদের মুক্তি এবং হামাসকে পরাজিত করার লক্ষ্যে ইসরায়েলের সেনাবাহিনী এখন চূড়ান্ত বিজয়ের দিকে অগ্রসর হচ্ছে।

গতকাল খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের পবিত্র দিন গুড ফ্রাইডে হওয়া সত্ত্বেও গাজার স্থানীয় গির্জাগুলোতে সীমিত পরিসরে ধর্মীয় আচার পালিত হয়েছে।

গাজার একটি স্থানীয় চার্চের বাসিন্দা ইহাব আয়াদ আল জাজিরাকে জানান, বিগত বছরগুলোতে গুড ফ্রাইডের দিনে তারা পরিবার ও বন্ধুদের সঙ্গে গির্জায় মিলিত হতেন এবং একে অপরের বাড়িতে যেতেন। তবে এবারের পরিস্থিতি ভিন্ন। তিনি বলেন, দখলদার ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় তার অধিকাংশ বন্ধু, প্রতিবেশী ও আত্মীয়ের বাড়িঘর ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় তিনি কারও সঙ্গে দেখা করতে যেতে পারেননি।

উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাস যোদ্ধারা ইসরায়েলের ভূখণ্ডে ঢুকে অতর্কিত হামলা চালিয়ে ১ হাজার ২০০ জনকে হত্যা করে এবং ২৫১ জনকে জিম্মি করে নিয়ে যায়। এর পর থেকেই জিম্মিদের মুক্তির জন্য গাজায় অভিযান শুরু করে ইসরায়েলি বাহিনী। ১৯ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য মধ্যস্থতাকারী দেশের চাপে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করলেও দুই মাস পর ১৮ মার্চ থেকে ইসরায়েল পুনরায় সামরিক অভিযান শুরু করে। দ্বিতীয় দফায় এই অভিযানে গত এক মাসে দেড় হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত এবং আরও অনেকে আহত হয়েছেন।

ধারণা করা হচ্ছে, হামাসের হাতে এখনও ৩৫ জন জিম্মি জীবিত আছেন এবং আইডিএফ সামরিক অভিযানের মাধ্যমেই তাদের উদ্ধার করার ঘোষণা দিয়েছে।

জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় একাধিকবার ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুকে গাজায় সামরিক অভিযান বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে। এমনকি আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গণহত্যার মামলাও দায়ের করা হয়েছে। ইসরায়েলের অভ্যন্তরেও যুদ্ধ বন্ধ করে জিম্মিদের মুক্তির ওপর জোর দেওয়ার জন্য আন্দোলন চলছে।

তবে নেতানিয়াহু স্পষ্ট ভাষায় জানিয়েছেন, হামাসকে সম্পূর্ণরূপে দুর্বল ও অকার্যকর করা এবং জিম্মিদের মুক্ত করাই এই অভিযানের মূল লক্ষ্য এবং তা অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত গাজায় এই অভিযান অব্যাহত থাকবে।