খুলনা | রবিবার | ২০ এপ্রিল ২০২৫ | ৬ বৈশাখ ১৪৩২

কয়রায় সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মামলায় বিভিন্ন সংগঠনের নিন্দা, অব্যহতির দাবি

কয়রা প্রতিনিধি |
১১:১০ পি.এম | ১৯ এপ্রিল ২০২৫


কয়রা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক কামাল হোসেনসহ বেশ কয়েকজন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলা করায় নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা। শনিবার সকালে পৃথক বিবৃতিতে এ প্রতিবাদ জানান তাঁরা। বিবৃতিতে মামলাকে পেশাদার সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে স্বার্থান্বেষী মহলের ষড়যন্ত্রের অংশ দাবি করে অবিলম্বে নিরপরাধীদের মামলা থেকে অব্যহতি দেয়ার দাবি জানানো হয়েছে। 
শনিবার এক বিবৃতিতে কয়রা প্রেসক্লাবের কার্যনির্বাহী কমিটির পক্ষে সভাপতি সদর উদ্দিন আহমেদ বলেন, ঢালাওভাবে পেশাদার সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দেওয়া গণমাধ্যমের স্বাধীনতাকে সংকুচিত করবে। সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে এ রকম হত্যা মামলা চলমান থাকলে পেশাদারিত্ব রক্ষায় বৃহত্তর আন্দোলনে যেতে বাধ্য হবে সাংবাদিকরা। তিনি আরও বলেন, কোনো সাংবাদিকের বিরুদ্ধে অপরাধের সুনির্দিষ্ট তথ্যপ্রমাণ থাকলে তা যেমন তদন্ত হওয়া প্রয়োজন, তেমনি স্বাধীন সাংবাদিকতার পরিবেশ নিশ্চিত করতে সংবাদকর্মীদের বিরুদ্ধে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে মামলা দায়ের বন্ধ করতে হবে। 
বাংলাদেশ মানবাধিকার ব্যুরো কয়রা উপজেলা শাখার এক বিবৃতিতে বলা হয় কয়রা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক কামাল হোসেন, ভোরের কাগজের শেখ সিরাজুদ্দৌলা লিংকন ,কালের কণ্ঠের ওবায়দুল কবির ও কিছু নিরীহ মানুষকে ২০১৩ সালের একটি হত্যা মামলায় উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে আসামি করা হয়েছে। নিরপরাধীদের হয়রানী করা তাদের প্রতি জুলুমের শামিল। অবিলম্বে ঘটনার সাথে জড়িত নয় এমন নিরপরাধীদের মামলা থেকে অব্যহতি দিয়ে প্রকৃত দোষীদের চিহ্নিত করে আইন অনুযায়ি ব্যবস্থা গ্রহণের আহক্ষান জানাই। 
গত বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) এক যুগ আগে কয়রা উপজেলা সদরে জামায়াতে ইসলামীর বিক্ষোভ মিছিলে গুলি করে দলটির এক কর্মীকে হত্যার ঘটনায় মামলা করেন নিহত জামায়াত কর্মীর স্ত্রী ছবিরন নেছা। হত্যা মামলায় মোট আসামি করা হয়েছে ১১৩ জনকে। আসামির মধ্যে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সাথে কয়রা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক কামাল হোসেন, ভোরের কাগজের কয়রা প্রতিনিধি সিরাজুদ্দৌলা, কালের কন্ঠ পত্রিকার কয়রা প্রতিনিধি ওবায়দুল কবিরসহ বেশ কয়েকজন সাংবাদিককেও আসামি করা হয়। 
বাংলাদেশ মানবাধিকার ব্যুরো কয়রা উপজেলা শাখার সভাপতি তরিকুল ইসলাম বলেন, মামলায় গণআসামি করে নিরীহ লোকজনকেও হয়রানি করা হচ্ছে। সংঘবদ্ধ একটি চক্র মামলায় নাম দেওয়া ও বাদ দেওয়া নিয়ে বাণিজ্য অব্যাহত রেখেছে। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সরকার বিরোধীদের বিরুদ্ধে ‘গায়েবি’ মামলা দিত পুলিশ ও আওয়ামী লীগ নেতারা। এখন দেখা যাচ্ছে, হত্যা মামলায় ঢালাওভাবে আসামি করা হচ্ছে। এমন মামলায় প্রকৃত আসামি ও দায়ীদের বিচারপ্রক্রিয়া নিয়ে জনমনে সংশয় দেখা দিয়েছে। এতে বিচারব্যবস্থাকে প্রশ্নবিদ্ধ করার অপচেষ্টা করা হচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষক জানান, স¤প্রতি এক মামলায় আমাকে জড়ানো হয়েছিল, পরে আমি জানতে পেরে বিশেষ সুপারিশের মাধ্যমে নাম কাটিয়েছি। গত বৃহস্পতিবার কয়রা আদালতে হয় হত্যা মামলার ৫২ নম্বর আসামি কয়রা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক কামাল হোসেন। জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মামলায় উলি­খিত ঘটনার সময় আমি খুলনা জেলা শহরের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ছিলাম। ঘটনার বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। মামলার বাদীকেও আমি চিনি না। মামলায় আমার নাম থাকাটা বিব্রতকর। তবে পরস্পর শুনতে পাচ্ছি, রউফ ও রবক্ষানী নামের দুই ব্যক্তি এসব মামলার হোতা। স¤প্রতি তাদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগে নিউজ করায় তাঁরা ক্ষিপ্ত হয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সাংবাদিকদের দেখে নেয়ার হুমকি দিয়েছিলেন। 
খুলনা জেলা সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সভাপতি আইনজীবী কুদরত-ই-খুদা বলেন, কেউ যদি অপরাধে জড়িত থাকে, অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। কিন্তু কাউকে হেয় প্রতিপন্ন কিংবা হয়রানি করতে যত্রতত্র মামলায় ঢালাও আসামি করা উচিত নয়। এতে সুবিচার করার প্রক্রিয়া প্রশ্নবিদ্ধ হয়। রক্তস্নাত একটি আন্দোলনের পর দেশের মানুষ যেখানে একটি নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখছে, সেখানে উদ্ভট নানা অভিযোগ এনে সাংবাদিকদের মামলার আসামি করাটা চবিক্ষশের বিপ্লবের ফসলকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলবে।
বাংলাদেশ বেতার খুলনার প্রতিনিধি কামাল মোস্তফা বলেন, এখনো আওয়ামী তরিকায় মামলা অতীতে ফিরে যাবার ইঙ্গিত দেয়! অথচ সুনির্দিষ্ট অভিযোগে ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলায় হয়তো ফল পাওয়া যেতো। কয়রায় সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মামলার তীব্র নিন্দা জানাই। 
খুলনা জেলা জামায়াতের আমীর মাওলানা এমরান হুসাইন বলেন, কয়রার মামলার ঘটনাটি আমাদের সাংগঠনিক সিদ্ধান্তে হয়নি। বাদী অন্য কারোর দ্বারা প্রভাবিত হয়ে মামলাটি করতে পারেন। তারপরও মামলার পেছনে আমাদের সংগঠনের কেউ জড়িত আছে কিনা সে বিষয়ে তদন্ত চলছে। নিরীহ কেউ যেন মামলার মাধ্যমে হয়রানির শিকার না হয় সে ব্যাপারে জামায়াতে ইসলামী সবসময় সোচ্চার রয়েছে। একজন অপরাধীর নামে মামলা দিতে গিয়ে নিরীহ মানুষও জড়িয়ে পড়ার শঙ্কায় এখনো পর্যন্ত খুলনার কোন উপজেলায় সাংগঠনিকভাবে মামলা করিনি। 
খুলনা জেলা বিএনপি’র যুগ্ম-আহবায়ক মোমরেজুল ইসলাম বলেন, ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ততা নেই এমন কাউকে মামলায় জড়ানো ঠিক না। সাংবাদিকের নাম মামলায় আনা দুঃখজনক। অহেতুক এসব নাম মামলায় জড়ালে মানুষের মনে আগের মতোই নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। আমি এ ঘটনার নিন্দা জানাই। মামলার বাদী ছবিরন নেছার সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি আসামি তালিকায় সাংবাদিকদের নাম থাকার বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাননি।