খুলনা | রবিবার | ২০ এপ্রিল ২০২৫ | ৭ বৈশাখ ১৪৩২

অ্যাম্বুলেন্স চালক নেই কালীগঞ্জ হাসপাতালে: জরুরি সেবা থেকে বঞ্চিত রেফার্ড করা মুমূর্ষু রোগীরা

কালীগঞ্জ (ঝিনাইদহ) প্রতিনিধি |
১১:৩১ পি.এম | ১৯ এপ্রিল ২০২৫


ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জরুরি সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে মুমূর্ষু রোগীরা। কয়েক গুণ বেশি ভাড়া দিয়ে বাইরে থেকে অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে রেফার্ড করা রোগীদের নিয়ে যেতে হচ্ছে দেশের বিভিন্ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। এতে আর্থিক দিক দিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন জরুরি স্বাস্থ্য সেবা গ্রহীতারা। এ যেন মরার উপর খাড়ার ঘা। এই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কয়েক বছর আগেই তিনটা অ্যাম্বুলেন্সর মধ্যে একটা নষ্ট হয়ে পড়ে আছে গ্যারেজে। আর অন্য দুইটি সচল থাকলেও তার চালক নেই ছয় মাসের অধিক সময় ধরে। বিষয়টি আমলে নিচ্ছেন না সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। তারা বলছেন, হাসপাতালটিতে বকুল মিয়া নামে মাত্র ১ জন অ্যাম্বুলেন্স চালক ছিল। কিন্তু গত ৬ মাস আগে তার বদলি হওয়াতে হাসপাতালটিতে চালক শূন্য হয়ে পড়ে। সেই থেকে গত ৬ মাস যাবৎ বন্ধ রয়েছে সরকারি অ্যাম্বুলেন্সের জরুরি সেবা। বিষয়টি তারা একাধিকবার মৌখিক ও লিখিত ভাবে উপরি মহলে জানালেও তার কোন সুরাহা করতে পারেনি। তবে, ৫০ শয্যার হাসপাতালটির জরুরি সেবার এই  সমস্যাটি সমাধানে সংশ্লিষ্ট কর্তাদের অনেকেই বার বার প্রতিশ্র“তি দিলেও অদ্যাবধি কেউই তার কথা রাখেনি। এদিকে জনগুরুত্বপূর্ণ এমন সমস্যাটি নিয়ে সর্বশেষ গত মার্চ মাসে উপজেলা মাসিক মিটিংয়ে ইউএনও এবং উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা সমাধান করবেন বলে কথা দিলেও তারাও সেটি বাস্তবায়ন করেননি। ফলে, চালক সমস্যার সমাধান না হওয়াতে হাসপাতালটিতে সেবা নিতে আসা মুমূর্ষু রোগীদের বাইরে পাঠাতে ভোগান্তীর শেষ নেই। এদিকে সচল অ্যাম্বুলেন্স দু’টিও পড়ে থেকে নষ্ট হবার উপক্রম দেখা দিয়েছে। এসব কারনে চিকিৎসা সেবা নিতে আসা মুমুর্ষ রোগীদের বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স, মাইক্রোবাস ও সিএনজি নিতে গুণতে হচ্ছে অতিরিক্ত ভাড়া। 
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রোগীদের আধুনিক চিকিৎসার জন্য পর্যায়ক্রমে ৩টি অ্যাম্বুলেন্স দেওয়া হয়। কিন্তু অনেক আগেই স্বাস্থ্য বিভাগের দেওয়া ওই ৩টির মধ্যে ১টি অ্যাম্বুলেন্স দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে অচল হয়ে গ্যারেজে বন্দী। আর অপর দু’টি সচল অ্যাম্বুলেন্সের বিপরীতে মাত্র ১ জন চালকের পোষ্টিং ছিল। কিন্তু তাকেও গেল বছরের ২৫ সেপ্টেম্বর অন্যত্র বদলি করা হয়। এরপর থেকেই অ্যাম্বুলেন্স দু’টি গ্যারেজে পড়ে আছে। অদ্যবধি হাসপাতালটিতে নতুন কোন চালক যোগদান না করালে বন্ধ হয়ে যাবে জরুরি সরকারি অ্যাম্বুলেন্স সেবা। 
সরেজমিনে গত সোমবার হাসপাতালটিতে গেলে দেখা যায়, ইমারজেন্সি বিভাগের সামনে কিছু মানুষ হাই হতাশ করছে। এগিয়ে গিয়ে জানা যায়, তাদের একজন মুমূর্ষু রোগীকে বাইরে পাঠাতে হবে, কিন্তু সরকারি অ্যাম্বুলেন্স পাচ্ছে না। ওই রোগীর স্বজন পৌর এলাকার নিশ্চিন্তপুর গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা সুবল দাস জানান, তার জামাই কৃষ্ণ দাস গলাতে আঘাতপ্রাপ্ত হওয়ায় মুমূর্ষু অবস্থায় হাসপাতালে এনেছেন। 
ডাক্তাররা রোগীকে দেখে যশোহর মেডিকেল কলেজ হসপিটালে রেফার্ড করেছেন। তাই, জরুরিভাবে তাকে যশোহর মেডিকেল কলেজ  হাসপাতালে নিতে হবে। কিন্তু, চালক নেই বলে এই হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্স নিতে পারছেন না। এমতাবস্থায় স্বজনরা প্রাইভেট অ্যাম্বুলেন্স যোগাড়ে করতে দিক বিদিক ছোটাছুটি করছেন। তিনি জানান, পরে বাধ্য হয়ে বেশি টাকা দিয়ে প্রাইভেট অ্যাম্বুলেন্স এনে তারা রোগীকে যশোহর নিয়ে যান। তাদেরই মত প্রতিনিয়ত এমন ভোগান্তীর স্বীকার হয়ে থাকেন অনেকেই। শহরের কলেজপাড়া এলাকার শুশান্ত মালি নামে আরেক ভূক্তভোগী জানায়, সরকারি অ্যাম্বুলেন্স থাকলেও চালক না থাকার কারণে তারাও বিকল্প ব্যবস্থায় বেশি টাকা ভাড়া দিয়ে বাইরের হাসপাতালে গেছিল। ভুক্তভোগীদের দাবী দুর্ভোগ কমাতে দ্রুত অ্যাম্বুলেন্সের চালক নিয়োগ দেওয়া হোক। 
কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আরএমও ডাঃ শিশির কুমার ছানা বলেন, হাসপাতালে যে অ্যাম্বুলেন্সের চালক ছিল স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে তাকে ঝিনাইদহের শৈলকুপা হাসপাতালে বদলি করা করেছেন। দ্রুত চালক নিয়োগের জন্য আমরা ঊধর্ক্ষতন কর্তৃপক্ষের নিকট লিখিত ভাবে জানিয়েছি। কিন্তু, এখন পর্যন্ত কোন চালককে এ হাসপাতালে পোষ্টিং দেওয়া হয়নি। 
কালৗগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ রেজাউল ইসলাম জানান, হাসপাতালটিতে চালকের বদলিজনিত কারণে সমস্যার বিষয়টি তিনি ঝিনাইদহ জেলা সিভিল সার্জনকে অবহিত করেছেন। এছাড়াও ইতিপূর্বে লিখিতভাবে স্বাস্থ্য বিভাগের খুলনা ডিভিশনাল অফিসে অবহিত করেছেন। আশা করছেন চলতি মাসেই বিষয়টির সমাধান করা সম্ভব বলে জানান তিনি। 
কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার দেদারুল ইসলাম জানান, অ্যাম্বুলেন্স  চালক নেই, এমন জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়টির  দ্রুত সমাধানে তিনি উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তাকে নির্দেশনা দিয়েছেন। জনদুর্ভোগ লাঘবে প্রয়োজনে খুব শীঘ্রই বিকল্প ব্যবস্থা নিবেন বলেও জানান তিনি।
ঝিনাইদহ জেলা সিভিল সার্জন ডাঃ কামরুজ্জামান বলেন, অ্যাম্বুলেন্স চালক নেই, বিষয়টি তিনি অবগত আছেন। বর্তমানে নতুন কোন চালকের পোষ্টিং হচ্ছে না। তারপরও কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রের জন্য খুব দ্রুতই একজন চালকের ব্যবস্থা করবেন বলে জানান এই স্বাস্থ্য কর্মকর্তা।